জেলা প্রতিনিধি, রংপুর :
রংপুর অঞ্চলের বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বঙ্গবন্ধু-১০০ (ব্রিধান ১০০) ধানের চলতি বোরো মৌসুমে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ হয়েছে । ধানটি জিংক সমৃদ্ধ পুষ্টিগুন সম্পন্ন এবং উচ্চ ফলনশীল।রোগ বালাই কম থাকায় কৃষকরা অধিক লাভবান হতে পারবেন । ধান চাষের ১৪৮ দিনের মধ্যে ঘরে তুলতে পারবেন কৃষক। এ ধানের চালের আকৃতি মাঝারি চিকন, পুষ্টিগুনে ভরা ও খেতে সুস্বাদু।বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতের ধানের ভালো ফলন হওয়ায় আশাবাদি হয়ে উঠেছেন কৃষকরা।
ব্রিধান ১০০ জিংক সমৃদ্ধ এই ধান আবিষ্কার করে। বঙ্গবন্ধুর জন্ম শত বার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধু-১০০ নাম দিয়ে ধানটির পরীক্ষামূলক চাষাবাদও শুরু করেন রংপুর অঞ্চলের কৃষক। কৃষি বিভাগ ও হারভেস্ট প্লাস বাংলাদেশের সহায়তায় এ বছর গঙ্গাচড়া উপজেলায় ১০০ শতক জমিতে ‘বঙ্গবন্ধু-১০০’ ধান প্রদর্শনী প্লট স্থাপনের মাধ্যমে চাষ করা হয়। এর মধ্যে গঙ্গাচড়া সদরের কৃষক মো. আলা মিয়ার ৩৩ শতাংশ জমিতে একটি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হয়েছিল ।
বৃহস্পতিবার এ উপলক্ষে শস্যকর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । এতে উপজেলা কৃষি অফিসার শরিফুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার একেএম ফরিদুল হক, উপ-সহকারী উদ্ভিদ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান, উপ-সহকারি কৃষিকর্মকর্তা বেলাল হোসেন, ইউপি সদস্য আব্দুল মতিন অভি, কৃষক আলা মিয়া উপস্থিত ছিলেন।উপজেলা কৃষি বিভাগের সার্বিক দিক-নির্দেশনায় প্রদর্শনী প্লটে ধানটির বেশ ভাল ফলন হয়েছে বলে জানান কৃষক আলা মিয়া।
বুধবার দিনাজপুরের বিরলে বোরো ধান বীজ বঙ্গবন্ধু (ব্রিধান ১০০) ধান ক্ষেত ও বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এর সদস্য পরিচালক (বীজ ও উদ্যান) মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান। এসময় জাতীয় পর্যায়ে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত কৃষক মতিউর রহমানের জমিতে বোরো ধান বীজ বঙ্গবন্ধু (ব্রিধান ১০০) ধান ক্ষেত সরজমিনে পরিদর্শন করেন ।
এ সময় বিএডিসি-ঢাকা এর যুগ্ম পরিচালক (মাননিয়ন্ত্রণ) সুভাষ চন্দ্র ঘোষ, বিএডিসি দিনাজপুর এর বীজ প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্রের যুগ্ম পরিচালক (বী.প্র.) ড. মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম পরিচালক (সার) মোঃ মোশাব্বের হোসেন, যুগ্ম পরিচালক (পাট বীজ) ড. মোঃ সুলতানুল আলম, বিএডিসি কন্টাক্ট গ্রোয়ার্স দিনাজপুর এর উপ-পরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান সরকার, উপ পরিচালক (বি.বি.) মোঃ আব্দুর রশীদ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ব্রি’র উদ্ভাবিত নতুন এই ধান জাতের নাম রাখা হয়েছে বঙ্গবন্ধু-১০০। ধানটি জিংক সমৃদ্ধ পুষ্টিগুন সম্পন্ন এবং উচ্চ ফলনশীল। এছাড়াও রোগ বালাই কম থাকায় কৃষকরা অধিক লাভবান হতে পারবেন। চলতি বছর বঙ্গবন্ধু-১০০ ধান ১৬০ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদন করা হয়েছে এবং আগামীতে ১০ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন করা হবে। পাশাপাশি ধানটি চিকন ও ভাত সুস্বাদু হওয়ায় এটি ব্যপক জনপ্রিয়তা অর্জন করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ বাংলাদেশকে ধরে রাখতে উচ্চ ফলনশীল এসব জাতের ধান ব্যপক উৎপাদনে কার্যক্রম বেগবান করা হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলার ১৩ একর জমিতে নতুন এ জাতের ধানটি চাষ করেছেন ৩৯ জন কৃষক। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতের ধান চাষের ১৪৮ দিনের মধ্যে ঘরে তুলতে পারবেন কৃষক। এ ধানের চালের আকৃতি মাঝারি চিকন, পুষ্টিগুনে ভরা ও খেতে সুস্বাদু। রোগ বালাই মুক্ত এবং সাধারণ পরিচর্যায় বঙ্গবন্ধু ধান হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয়েছে ৬ থেকে ৭ টন। ভালো ফলন হওয়ায় খুশি এ ধান চাষ করা কৃষকরা।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার অর্জুনডারা এলাকার কৃষক মিজানুর রহমান জানান, কৃষি বিভাগের সহযোগীতায় এক একর জমিতে বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতের ধান আবাদ করেছি। ধান ক্ষেতে কোনো রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ না হওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে। ধান অনেকটা চিকন হওয়ায় বাজার মূল্যও ভালো পাওয়া যাবে।
রাজারহাট উপজেলার কাশেম বাজার এলাকার আবুল কাশেম জানান, নতুন জাতের এই ধান দেড় একর জমিতে লাগিয়েছি। অর্ধেক ধান কেটে ঘরে তুলেছি। ২৮ জাতের ধানের থেকে অনেকটাই ভালো ফলন হয়েছে। ২৮ জাতের ধানের চেয়ে এই ধানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি ও বিঘা প্রতি ৫ থেকে ৬ মন ধান বেশি উৎপাদন হয়েছে। আগামী মৌসুম আমার সব জমিতে বঙ্গবন্ধু ধান চাষ করবো।
উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, এই জাতের ধানের ফলন অন্য জাতের ধানের চেয়ে বেশি হয়েছে। এ কারণে আমরা আগামী মৌসুমে কৃষকদের বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতের ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করছি।
হারভেস্ট প্লাসের কৃষি গবেষণা ও উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন মন্ডল জানান, কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধান থেকে নিজেরাই বীজ সংরক্ষণ করতে পারবেন।
হারভেস্ট প্লাস বাংলাদেশে-এর ক্যান্ট্রি ম্যানেজার ড. খায়রুল বাসার জানান, সারা দেশে বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতের ধান চাষ ছড়িয়ে দিতে কৃষি বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি- বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে মাঠ দিবসসহ ধান কাটার উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. এমদাদ হোসেন শেখ জানান, জিংক সমৃদ্ধ এ ধানের উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। এবারই প্রথম রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় এই ধানের চাষ হয়েছে। ফলাফল অন্যান্য জাতের ধানের চেয়ে অনেক ভালো। এই ধান চাষে কৃষকরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দেশের মানুষের পুষ্টির চাহিদাও মেটানো সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি