নিজস্ব প্রতিবেদক , রংপুর :
রংপুর বিভাগের একমাত্র ”রংপুর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানা” আর্ন্তজাতিক মানের অত্যাধুনিক ভাবে গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এজন্য ব্যয় করা হবে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।
প্রাণি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের অধীন রংপুর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানা আধুনিকায়নের জন্য সিঙ্গাপুরের একটি অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান ”বাণার্ড এন্ড হ্যারিসন” কোম্পানীকে এর সাম্ভ্যবতা যাচাই এবং পরিকল্পনা গ্রহনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ঐ প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সাম্ভবতা যাচাই করে একটি প্রস্তাবিত মহাপরিকল্পনা প্রস্তত করে গত বছর জুন মাসে প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয়ে জমা দিয়েছে। এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সাম্ভব্য ব্যয় হবে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের বিশেষঞ্জ কমিটি এব্যাপারে প্রকল্পের অধিকতর সাম্ভ্যবতা যাচাই বাছাই করে তা অনুমোদনও করেছেন। ”ওয়ার্ল্ড এ্যসোসিয়েশন অব জ্যু’স এ্যকুরিয়ামস ” (ওয়াজা) এর গাইড লাইন অনুযায়ী ”রংপুর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানার” এই উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে। বিশ্বের মানসম্পন্ন ৩০০ চিড়িয়াখানা এই সংস্থার অনুমোদিত সদস্য। এসব পরিচালনায় প্রয়োজনীয় গাইড লাইন ও সহযোগিতা প্রদান সহ ইতিবাচক ভাবে উৎসাহিত করে থাকে এই ”ওয়ার্ল্ড এ্যসোসিয়েশন অব জ্যু’স এ্যকুরিয়ামস ” (ওয়াজা) এর প্রতিষ্ঠান।
রংপুর চিড়িয়াখানার এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এটিকে নতুন কোরে আর্ন্তজাতিক মানের অত্যাধুনিক ভাবে সাজানো হবে। এই পরিকল্পনার আলোকে এখানকার প্রাণীকুলের জন্য অত্যাধুনিক আাবাসন ব্যবস্থা, চিকিৎসা সুবিধা সহ দর্শনার্থীদের ব্যপক সমাগমের সুবির্ধাথে এখানে দেড়’শ কার ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন ৫ তলা বিশিষ্ট কার পার্কিং নির্মান করা হবে। এছাড়া এখানে গড়ে তোলা হবে একটি অত্যাধুনিক ”ঘড়িয়াল প্রজন্ন কেন্দ্র”, প্রাণীকুলের আধুনিক হাসপাতাল, অসুস্থ্য প্রাণীর কোয়ারেনটাইন সেড, ওয়াটারট্রিটমেন্ট প্লান্ট এবং ৫০০ আসনের ক্যাফেটেরিয়া সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা সমূহ।
সূত্রে জানা গেছে, এখানে বর্তমানে অনেক আর্কষনীয় প্রাণীর সংকট রয়েছে। বর্তমানে ৩৩ টি প্রজাতির ২৬০ টি প্রণী নিয়ে চলছে রংপুর চিড়িয়াখানা। এসবের মধ্যে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, ভল্লুক, জলহস্তি, হনুমান, বানর, চিত্রা হরিণ, ঘোড়া, গাধা, খরগোশ, সজারু, গন্ধ গকুল, ময়ূর, চন্দনা, টিয়া, শকুন, চিল, বাজপাখী, নিশিবক, কানিবক, সাদাবক, মদন টেক অন্যতম। একমাত্র বাঘিনী বয়সের ভারে মারা গেছে। সিংহ বয়সের ভারে ন্যূয়ে পড়েছে। জলহস্তি ৩টির একটি মারা গেছে। অনেক প্রাণীর সঙ্গী নেই, ফলে প্রাণীদের প্রজনন হচ্ছে না। অনেক খাঁচা প্রাণী শূন্য, ফলে এক সময়ের বহুল আলোড়িত চিড়িয়াখানাটি তার জৌলুস অনেকটা হারিয়ে দর্শক কমে গেছে। রংপুর চিড়িয়াখানার মূল আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার এখানকার অনুকুল পরিবেশের কারনে ২২টিরও বেশি বাচ্চা জন্ম দিয়েছিল। এখানকার রয়েল বেঙ্গল টাইগার শাবক ঢাকা মিরপুর চিড়িয়াখনায় কয়েকবার নেয়া হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ রংপুর চিড়িয়াখানায় জন্ম নেয়া রয়েল বেঙ্গল টাইগার কুয়েতের আমিরকে শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে উপহার দিয়েছিলেন।
১৯৯০ সালে নগরীর পুলিশ লাইন সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ২২ দশমিক ২৭ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় রংপুর চিড়িয়াখানা। ঢাকার মিরপুর চিড়িয়াখানার পরে দেশের একমাত্র সরকারী চিড়িয়াখানা এটি। বখাটেদের উৎপাত, চিড়িয়াখানার প্রাণী কমে যাওয়ায় এবং বেহাল দশা সহ নানা কারণে দর্শনার্থী সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এখানে পশু-পাখিদের খাঁচাগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। চিড়িয়াখানায় দীর্ঘদিনেও সার্বক্ষণিক পশু চিকিৎসক নেই। শিশু পার্কটিই শিশুদের কিছুটা বিনোদন যোগাচ্ছে।
ডেপুটি কিউরেট রডাক্তার আম্বার আলী তালুকদার জানান, রংপুর চিড়িয়াখানার আধুনিকায়নের মহাপরিকল্পনা ইতোমধ্যে প্রাণি সম্পদ মন্ত্রনালয়ে অনুমোদিত হয়েছে বলে শোনা গেছে। এটি বাস্তিবায়িত হলে যাবতীয় সমস্যা সমাধানের উদ্যেগ নেয়া হবে। দর্শনার্থী কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে চিড়িয়াখানার আকর্ষণীয় প্রাণি সংকটকে তিনি স্বীকার করছেন। যেসব প্রাণীর আকর্ষণে মানুষ চিড়িয়াখানায় আসেন সে সব উল্লেখ্যযোগ্য প্রাণী এখানে নেই। এখানে জেব্রা, জিরাফ, হাতি, চিতা বাঘ, গয়াল, গন্ডার নেই। বয়সের ভারে কোনো প্রাণি মারা গেলে তা আর সহজে পূরণ হয় না। ফলে প্রাণির অভাবে চিড়িয়াখানার আকর্ষণ কমে আসছে। জানা গেছে, এখানে বর্তমানে যেসব প্রাণী আছে তার বেশির ভাগই বয়স্ক, কোনোটির আবার জোড়া নেই। এর মধ্যে ইমুপাখি, উটপাখি, ভাল্লুক, হনুমান ও স্বজারু দীর্ঘদিন ধরে সঙ্গিহীন অবস্থায় রয়েছে। একমাত্র নিঃসঙ্গ বাঘিনীটিও গত বছর মারা গেছে। চিড়িয়াখানার ইজারাদার জানান, করোনার আগে দৈনিক ৮’শ থেকে এক হাজার দর্শনার্থী চিড়িয়াখানায় আসতেন। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর খুলে দেয়া হলেও দর্শনার্থী আর আগের মতো আসে না। এখন গড়ে প্রতিদিন ২ থেকে ৩’শ জন আসেন। দর্শনার্থী কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ প্রাণী সংকট। এছাড়া পার্শবতী এলাকায় আরেকটি বিনোদনপার্ক হওয়ায় দর্শনার্থী কমে গেছে। চিড়িয়াখানায় কিউরেটর ও কর্মকর্তা সহ রাজস্ব খাতের ১৬ জনবলের বিপরীতে রয়েছে ৮ জন। অপর পদগুলোর মধ্যে জ্যুঅফিসার, অফিস সহকারী, গার্ডেনার এবং ৩ জন গার্ড ও ২ জন এম এল এস এস এর পদ র্দীঘদিন যাবত শূন্য রয়েছে। মাষ্টার রোলে নিয়োগপ্রাপ্ত ১৫ জনকে দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি