April 20, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, December 27th, 2022, 7:33 pm

রসিক নির্বাচনে শান্তি পূর্ণ পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক,রংপুর:

রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে নগরীর ২২৯টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে রসিক নির্বাচন শান্তি পূর্ণ পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হয় । নির্বাচন বেশ উৎসবমুখর পরিবেশে কুয়াশা ও শীত উপেক্ষা করে কেন্দ্রে আসতে থাকেন ভোটাররা। বিকাল সাড়ে ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কোন কোন কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনেক দেরিতে শেষ হয় ।
এবার রসিক নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৭০ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১২ হাজার ৩০২ এবং নারী ২ লাখ ১৪ হাজার ১৬৭ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন একজন। ২২৯টি কেন্দ্রের বুথ সংখ্যা ১ হাজার ৩৪৯টি।
নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন- জাপার মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) শফিয়ার রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরুজ্জামান পিয়াল, খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মন্ডল রাজু, জাকের পার্টির খোরশেদ আলম খোকন, বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির আবু রায়হান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেহেদী হাসান বনি ও লতিফুর রহমান মিলন। এছাড়া সংরক্ষিত ১১টি ওয়ার্ডে ৬৮ এবং ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৮৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
ইভিএমে ভোট দিতে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়েছে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফাকে। মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে তিনি আলমনগর কলেজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসে ইভিএম ত্রুটির কারণে প্রায় ৩০ মিনিট অপেক্ষা করেন। এরপর, ৯টা ২১ মিনিটের দিকে ভোট দেন।এই পরিস্থিতিকে তিনি নির্বাচন কমিশনের ‘ব্যর্থতা’ হিসেবে আখ্যা দেন।
মোস্তফা সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে পরিবারের সদস্য ও দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে আলমনগর কলেজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন। মোস্তফা সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইভিএম ত্রুটির কারণে ভোট দিতে দেরি হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলবো। এই ভোটকেন্দ্রেই ২ ভোটগ্রহণ কক্ষে ইভিএমের ত্রুটি আছে।’
রসিক নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মেয়র পদপ্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ইভিএম ও নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন বলে মন্তব্য করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন।মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় নগরীর লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
জাতীয় পার্টির প্রার্থীর মোস্তফার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, “তার এমন অভিযোগ জানার পর প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। একজন ভোটার ভোট দিচ্ছিলেন। তাকে একটু অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা না করে ইভিএম ও নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন।”
রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, “ইভিএমের কোনো ত্রুটি নেই। কিছু ভোটারের হাতের আঙুল পরিষ্কার না থাকায় ফিঙ্গার ছাপ মিলছে না। হাত পরিষ্কার করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।” সরেজমিন দেখা যায়, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কয়েকটি কেন্দ্র বয়স্ক ভোটারদের হাতের রেখার কারণে আঙ্গুলের ছাপ ম্যাচিং করতে যেমন সময় লাগছে তেমনি গোপন কক্ষে ভোট দিতে গিয়ে অনেক সময় নিচ্ছেন। গোপন কক্ষে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরের তিনটি ভোট দিতে অনেক বয়স্ক মানুষ ২-৪ মিনিট আবার কখনও আরও বেশি সময় নিচ্ছেন। অনেক সময় অন্যের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছেন। যে কারণে তারা ভোট দিতে সময় নিচ্ছেন।অনেকে আবার ভোট না দিয়ে ফিরে গেছেন ।
মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসে তিনি মৌখিকভাবে ইভিএম ত্রুুর্টির অভিযোগ করেন। এসময় রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন উপস্থিত না থাকায় তার স্টাফ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে অভিযোগ করেছেন তিনি।
সেখান থেকে বের হয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মনে করেছিলাম ইভিএমে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট প্রদান করতে পারবো। কিন্তু আমরা যখন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে গেলাম তখন জানতে পারলাম ইভিএমে ত্রুটি। ফিঙ্গার প্রিন্ট দিলে প্রিন্ট আসছে না, উনারা (নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা) বলছেন কিছু সমস্যা হওয়ার কারণে দীর্ঘ লাইন হয়েছে। যেমন কোনো কেন্দ্রে ৮টি বুথ আছে, সেখানে ২টি বুথে সমস্যা। এমনকি সকালে আমি আমার কেন্দ্রে নিজেই ইভিএমের ক্রটির মধ্যে পড়েছি। প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটের লাইনে বয়স্ক পুরুষ-মহিলা লাইনে অপেক্ষা করতে করতে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। এতে করে ভোট কাস্ট কম হবে।
মোস্তফার অভিযোগ করার সময় রিটার্নিং কর্মকর্তার স্টাফ অফিসার জাহাঙ্গীর হোসেন মেয়রকে আশ্বস্ত করে বলেন, কেন্দ্রের মধ্যে ভোটার থাকলে রাত ১০টা পর্যন্ত ভোট দেবেন।
এবার মেয়র পদে ৯ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৮৩ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬৮ জনসহ সর্বমোট ২৬০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এরমধ্যে ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে একজন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এই নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে ২২৯ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এবং ১ হাজার ৩৪৯ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া দুই হাজার ৬৯৮ জন পোলিং অফিসার দায়িক্ত পালন করেন।##