পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠির প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসুক-সাংগ্রাই-বিজু- বিষু (যা বৈসাবি নামেই বেশি পরিচিত) উপলক্ষে ৫ দিনব্যাপি মেলা ও উৎসব শুরু হয়েছে।
সোমবার বিকালে রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট মিলনায়তন প্রাঙ্গনে যৌথভাবে বৈসাবি মেলার উদ্বোধন করেন রাঙামাটির সংসদ সদস্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ব্রিগেড কমান্ডার ৩০৫ পদাতিক ব্রিগেড ব্রি, জে, মোহাম্মদ ইমতাজ উদ্দিন, এনডিসি, পিএসসি, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, পুলিশ সুপার মীর মোদদাছছের হোসেন, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্যসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান এবং সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক এসময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মেলা উদযাপন পরিষদের আহবায়ক রেমলিয়না পাংখোয়া।
রাঙামাটি জেলা পরিষদ এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আবহমানকাল ধরে চলে আসা এই উৎসব।
মেলায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী কাপড়-চোপড়সহ নানান সামগ্রীর স্টল বসানো হয়েছে।
পাহাড়ে প্রধান ও সামাজিক উৎসব বৈসাবি উৎসব পালন করা হচ্ছে এবার সাড়ম্বরে। করোনা মহামারির কারনে গত তিন বছরে বৈসাবি উৎসবের আয়োজন ছিল সীমিত পরিসরে। তাই এবছরে বিজু, সাংগ্রাইং, বৈসুক, বিষু, ও বাংলা নববর্ষ-২০২২ উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে নানান অনুষ্ঠানের।
এছাড়া ৫ দিনব্যাপী মেলায় ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খেলাধুলা, শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, চাকমা নাটক, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ঐতিহ্যবাহী যন্ত্র সংগীত, উভগীত, গেংখুলী গীত, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পিঠা উৎসবসহ বিশিষ্টজনদের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠিত হবে।
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এই উপলক্ষে মেলা স্থলে স্থাপিত বিভিন্ন স্টলে বিভিন্ন দ্রব্য ও অলঙ্কার এবং বস্ত্র প্রদর্শিত হচ্ছে।
সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গনে ফিতা কেটে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন দীপংকর তালুকদার। পরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিল্পীদের নৃত্য পরিবেশন করা হয়। এছাড়া সাজেক থেকে আসা ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর গড়াইয়া নৃত্য পরিবেশন করা হয়।
বৈসাবির এই উৎসবকে কেন্দ্র করে এই দিনটিকে ঘিরে আনন্দ উৎসবে মেতে থাকে পাহাড়ের সকল সম্প্রদায়ের মানুষ। এবছর বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমে আসার কারণে রাঙ্গামাটির সর্বত্র বৈসাবি উৎসব পালিত হবে আনন্দঘন পরিবেশে।
১২ এপ্রিল পাহাড়ের বৈসাবি উৎসবের প্রথম দিন চাকমা, ত্রিপুরা, তংচঙ্গ্যা জাতির ‘ফুল বিজু’, ‘বৈসু’, কিংবা ‘বিষু’। এদিন চাকমা, ত্রিপুরা ও মারমারা বন থেকে ফুল আর নিমপাতা সংগ্রহ করে, সেই ফুল দিয়ে ঘর সাজায় ও মা গঙ্গার উদ্দেশ্যে নদীতে ফুল
ভাসায়।
১৩ এপ্রিল চৈত্র সংক্রান্তির দিনকে বলা হয় ‘মুল বিজু’, ‘বৈসু’, বা ‘বিষু’। এদিনে ঘরে ঘরে রান্না হয় ঐতিহ্যবাহী পাচন।
আর ১৪ এপ্রিল নববর্ষের দিনে রাঙামাটির কাউখালীর বেতবুনিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে মারমাদের জলকেলি উৎসব। ১৪ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলে মারমাদের জলকেলি উৎসব।
উল্লেখ্য, প্রতি বছর বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে রাঙামাটিতে বসবাসরত ১৩ নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর উদ্যোগে বিজু, সাংগ্রাইং, সাংক্রান, সাংক্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, জল উৎসব ও বাংলা নববর্ষ উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালন করা হয়। এ উৎসব সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে ৪ এপিল থেকে সংস্কৃতি মেলা ও র্যালিসহ বিভিন্ন ধরনের পাহাড়ি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ১৬ এপ্রিল মারমাদের জলকেলি উৎসব এর মধ্য দিয়ে বৈসাবি উৎসব শেষ হবে।
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি