নিজস্ব প্রদিবেদক :
রাজধানীতে নতুন করে পার্ক ও উদ্যান তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। স্বাধীনতার পর ঢাকা মহানগরীর আয়তন ও জনসংখ্যা বাড়লেও নতুন কোনো পার্ক নির্মাণ হয়নি। ঢাকার বড় বড় উদ্যান-পার্কের প্রায় সবই স্বাধীনতার আগের তৈরি। এমন পরিস্থিতিতে ২০১৬-৩৫ সাল পর্যন্ত প্রস্তাবিত খসড়া বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) বিভিন্ন ধরনের ৬২টি পার্ক তৈরির পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। মূলত ঢাকা ও আশপাশের ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকার ভূমি ব্যবহার, আবাসন, পরিবহন, পানি নিষ্কাশন, অর্থনৈতিক কর্মকা-, পরিবেশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বিনোদন, সামাজিক ও নাগরিক সেবা ইত্যাদি প্রদানের জন্য একটি সমন্বিত ও সামগ্রিক ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা হিসেবে ড্যাপ গ্রহণ করা হয়েছে। রাজউকের প্রত্যাশা প্রস্তাবিত পার্ক বাস্তবায়িত হলে নগরবাসীর অবসর বিনোদনের নতুন স্থান তৈরি করবে। তাছাড়া ওসব পার্ক থেকে রাজউকের রাজস্ব আয়েরও পরিকল্পনা রয়েছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজধানীর প্রধানতম পার্ক বা উদ্যান রমনা বিগত ১৬১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। মোগল সেনাপতি ইসলাম খানের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত উদ্যানটি প্রায় ৬৯ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। আর বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নামকরণ হলেও এটিও মোগল আমলে গড়ে উঠেছিল। আর ব্রিটিশ আমলে এক কালেক্টরের হাত ধরে উদ্যানটি পূর্ণতা পেয়েছিল। তাছাড়া ঢাকার ওয়ারী এলাকায় অবস্থিত বলধা গার্ডেন ১৯০৯ সালে ভাওয়াল জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরীর হাত ধরে স্থাপিত হয়েছিল। বর্তমান বাহাদুর শাহ পার্ক আগে ভিক্টোরিয়া পার্ক হিসেবে পরিচিত ছিল। উনিশ শতকের প্রথমার্ধে নওয়াব স্যার আব্দুল গণির উদ্যোগে পার্কটি গড়ে উঠেছিল।
সূত্র জানায়, রাজউকের আওতাধীন এলাকায় উন্মুক্ত স্থানের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। আবার উন্মুক্ত স্থান হিসেবে যেসব পার্ক বা খেলার মাঠ আছে, তা মূলত ঢাকার কেন্দ্রীয় অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত। ড্যাপভুক্ত এলাকাকে ৬টি প্রধান অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে শুধু ঢাকা কেন্দ্রীয় অঞ্চলেই রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যোন রয়েছে। বাকি ৫টি প্রধান অঞ্চলে ওই মাপের কোনো পার্ক নেই। এমন প্রেক্ষিত বিবেচনায় নিয়েই প্রস্তাবিত ড্যাপে প্রতিটি অঞ্চলে কমপক্ষে একটি করে বড় মাপের পার্কের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবে গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, রূপগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জে একটি করে বড় পার্ক নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর প্রস্তাবিত পার্ক এলাকা নির্বাচনের ক্ষেত্রে নদী তীরবর্তী এলাকাকে বিশেষভাবে বিচেনায় নেয়া হয়েছে। পরিকল্পনায় ওসব পার্ক উন্নয়নে জমি অধিগ্রহণের কথাও বলা হয়েছে। প্রস্তাবে গোড়ান চটবাড়ী, গাবতলী ও উত্তরখান রিটেনশন পন্ড এলাকা, শিয়ালবাড়ী ও কালশী মাটিকাটা রাস্তার পার্শ্ববর্তী এলাকা, সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জে ওয়াটার পার্ক ও অন্যান্য ধরনের পার্ক গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া মিরপুরের বাউনিয়ায় একটি খেলার মাঠের প্রস্তাব করা হয়েছে। গাজীপুর অঞ্চলে অবস্থিত ভাওয়াল বনাঞ্চলকে ঘিরে ইকোপার্কের আদলে নতুন একটি উদ্যান গড়ে তোলার প্রস্তাব পরিকল্পনায় রয়েছে। রাজউক এলাকায় যেসব পার্কের প্রস্তাব করা হয়েছে সেগুলো হলো নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পার্ক, সাভার আঞ্চলিক পার্ক, রূপগঞ্জ ও কালীগঞ্জ আঞ্চলিক পার্ক, কেরানীগঞ্জ আঞ্চলিক পার্ক ও গাজীপুর আঞ্চলিক পার্ক। প্রস্তাবিত জলকেন্দ্রিক পার্কগুলো হলো গোড়ান চটবাড়ী জলকেন্দ্রিক বিনোদনমূলক পার্ক, শিয়ালবাড়ী (রূপনগর) জলকেন্দ্রিক বিনোদনমূলক পার্ক, কালশী মাটিকাটা জলকেন্দ্রিক বিনোদনমূলক পার্ক, হেমায়েতপুর জলকেন্দ্রিক বিনোদনমূলক পার্ক, গাবতলী জলকেন্দ্রিক বিনোদনমূলক পার্ক, বাউনিয়া জলকেন্দ্রিক বিনোদনমূলক পার্ক, মিরেরগাঁও জলকেন্দ্রিক বিনোদনমূলক পার্ক, বেগমপুর জলকেন্দ্রিক বিনোদনমূলক পার্ক ও পাগলা জলকেন্দ্রিক বিনোদনমূলক পার্ক। তাছাড়া কল্যাণপুর, বেরাইদ, জাঞ্জিরা-বক্তাবলি, সোনাকান্দা, হোগলাঘাটি, কলাতিয়া-তারানগর, মুশুরীখোলা, তারানগর, আটিবাজার, কোনাখোলা, পাগলা, কাউন্দিয়া, জিরাবো, তৈয়বপুর, সাভার, কলতাসূতি, মির্জানগর, আলিরটেক, হাজি পারা, সিপাহীবাগ, মাদানী, সাঁতারকুল, বারুয়া, বারুয়া-২, দক্ষিণখান, উত্তরখান, মাতুয়াইল, নুরবাগ, মেরুল বাড্ডা, মান্ডা, তারাবো পৌর, গোলকান্দাইল, নাসিংগাল, মাহানা ইত্যাদি এলাকায় পার্ক নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, ড্যাপে ১৩টি ইকোপার্কের পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রত্যাশা করা হচ্ছে গাজীপুর, উত্তরখান, নাসিরাবাদ, জালকুড়ি, ভারগাঁও, বাউনিয়া, সাভার বংশী পার্ক, সাভার পার্ক, নারায়ণগঞ্জ পার্ক, খোলামোড়া পার্ক, কাউন্দিয়া পার্ক, আমিনবাজার পার্ক ও হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকায় ওসব পার্ক নির্মাণের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার হারানো জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনা যাবে।
এদিকে এখন শেষ পর্যায়ে সংশোধিত ড্যাপ প্রণয়নের কাজ। অনলাইন-অফলাইনে খসড়া ড্যাপের ওপর সাড়ে ৮ হাজারের মতো মতামত পাওয়া গেছে। ওসব মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে বেশকিছু তথ্য হালনাগাদও করা হয়েছে। বিভিন্ন বৈঠকে পাওয়া সুপারিশের ভিত্তিতে শিগগিরই প্রস্তাবিত ড্যাপের গেজেট জারির সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান জানান, ঢাকাসহ বাংলাদেশের নগর এলাকার বাসযোগ্যতা বাড়াতে বিভিন্ন পার্ক ও উদ্যানের পরিমাণ বাড়াতে হবে। যেসব পরিকল্পনা করা হয়েছে, সে অনুযায়ী সেসব উদ্যোগ যাতে বাস্তবায়ন করা হয় সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় বিভিন্ন ধরনের ৬২টি পার্কের সংস্থান রাখা হয়েছে। পরিকল্পিত ওসব পার্ক নগরজীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। আশা করা যায় ধীরে ধীরে প্রাত্যহিক জীবন-যাপনেরও অংশ হয়ে ওঠার পাশাপাশি ওসব পার্ককে ঘিরে অনেক অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য গড়ে উঠবে।
আরও পড়ুন
এলডিসি গ্রাজুয়েশনে বাংলাদেশের সুষ্ঠু উত্তরণে পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস জাতিসংঘের
জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা নিয়ে ইউনূস-আইসিসির আলোচনা
দেশ সংস্কারে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ও পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র