নিজস্ব প্রতিবেদক:
সাম্প্রতিক দাবদাহে রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় দেখা দেয় পানির তীব্র সংকট, যা এখনো কোথাও কোথাও চলমান রয়েছে। তবে ওয়াসার দাবি, ঢাকায় যে পরিমাণ পানির চাহিদা রয়েছে তার থেকে অনেক বেশি পানি উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে তাদের। কিন্তু তার পরেও দিন দিন পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। সূত্রমতে, ওয়াসার দৈনিক পানির উৎপাদন সক্ষমতা ২৬০ কোটি লিটার। ঢাকা শহরে ২১০ থেকে ২৪৫ কোটি লিটার পর্যন্ত চাহিদা থাকে। প্রতিদিন পানি উৎপাদিত হয় ১০ শতাংশেরও বেশি। বিভিন্ন এলাকায় পানির পাইপ এবং পাম্প নষ্ট থাকায় এই বাড়তি পানি খুব বেশি কাজে আসে না স্থানীয়দের। ঢাকা ওয়াসা জানায়, প্রচন্ড গরমের কারণে পানির চাহিদা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেড়েছে। বর্তমানে পানির চাহিদা বেড়ে দৈনিক ৩০০ লিটার হয়েছে। যা অন্যান্য সময় বা শীতকালে দৈনিক পানির চাহিদা থাকে ২১০ কোটি লিটার। ওয়াসা বলছে, লোডশেডিংয়ের কারণে পানির পাম্প ঠিকমতো তারা চালাতে পারছে না। লোডশেডিংয়ের কারণে পানি উৎপাদনেও চাপ বেড়েছে।
ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা নিরবচ্ছিন্নভাবে পানি সরবরাহ করে। তবে মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ বিভ্রাট কিংবা কারিগরি ত্রুটির কারণে পানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। তখন ওয়াটার ট্যাঙ্ক দিয়ে পানি সরবরাহ করা হয়। কিন্তু সরবরাহকালে অপচয় এবং পাম্প নষ্ট হওয়ার কারণে মাঝেমধ্যেই এলাকাভিত্তিক কিছু সমস্যা তৈরি হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, পানি সংকটের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে জীবন-জীবিকা। পানির যথাযথ গুরুত্ব অনুধাবন করে পানি সমস্যা সমাধানে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন জরুরী বলে মনে করেন তারা। রাজধানীর জুরাইন, বাসাবো, বাড্ডা, মহাখালীসহ বেশ কিছু এলাকায় মাঝেমধ্যেই পানির সংকট দেখা দেয়। বিভিন্ন এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার উপযোগী পানিরও সংকট রয়েছে। দুর্গন্ধ ও ময়লাযুক্ত পানির কারণে রাজধানীবাসীর রান্নাবান্না, গোসল আর নিত্যকার কাজ সারতে দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। ঢাকা ওয়াসার উৎপাদিত পানির প্রায় ৬৭ শতাংশ আসে ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে। বৈদ্যুতিক পাম্পের সাহায্যে গভীর নলকূপ দিয়ে টেনে এই পানি তোলা হয়।
সংস্থাটির তথ্য বলছে, এখন ঢাকা ওয়াসার ১ হাজার ৬১টি পাম্প (স্ট্যান্ডবাইসহ) রয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকলে ওয়াসা নিজস্ব জেনারেটর দিয়ে পাম্পগুলো চালায়। তবে জেনারেটর দিয়ে সব পাম্প চালানোর মতো সক্ষমতা ওয়াসার নেই। অনেক পাম্প বন্ধ রাখতে হয়। বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার ৫টি পানি শোধনাগার রয়েছে। তবে ৪টি শোধনাগার থেকে পানি পাচ্ছে সংস্থাটি। চলতি বছরে উপরি তলের পানির উৎপাদন ৭০ শতাংশে উন্নীত করার কথা থাকলেও সেই লক্ষ্য পূরণ এখনও করতে পারেনি ঢাকা ওয়াসা। বর্তমানে উপরি তলের পানি পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩৫ শতাংশ। আর বাকি ৬৫ শতাংশ পানি তারা পাচ্ছে ভূগর্ভ থেকে। এদিকে পানির সংকটে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে বিভিন্ন এলাকার মানুষ। রাজধানীর কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, ঢাকা ওয়াসার লাইনে পানি না পাওয়া গেলে একমাত্র বিকল্প সংস্থাটির কাছ থেকে পানি কেনা, যা গাড়ির মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। দুই, সাড়ে তিন, পাঁচ ও ছয় হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতার গাড়ি রয়েছে। দাম ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা।
কিন্তু চাহিদার অর্ধেকও সরবরাহ করতে পারছে না সংস্থাটি। পানির সংকটের বিষয়ে ওয়াসার মুখপাত্র জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তফা তারেক বলেন, পানির লেয়ার দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। এ ছাড়া লোডশেডিংসহ বিভিন্ন কারণে উৎপাদনও কিছুটা কম হচ্ছে। যার কারণে তীব্র গরমে পানির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সংকট তৈরি হচ্ছে কিছু জায়গায়। সমাধান করার চেষ্টা চলছে। এদিকে চাহিদার তুলনায় ওয়াসার পানি উৎপাদনের সক্ষমতা বেশি থাকলেও এমন পরিস্থিতি কেন হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াসার একজন কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন মডস জোনে অনেক পাম্প অকেজো হয়ে আছে। দীর্ঘদিন ধরে এগুলো সংস্কারও হচ্ছে না। তিনি বলেন, ওয়াসার সক্ষমতার গল্প শুনে তো মানুষের চাহিদা মিটবে না। ওয়াসা এমডির উচিত টেকনিক্যাল সমস্যাগুলো স্বীকার করে এগুলোর প্রতিকারে কাজ করা। তা না হলে লোডশেডিংয়ের সমস্যা মিটলেও পানি নিয়ে মানুষের ভোগান্তি মিটবে না।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি