নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঋতু বদলের দেশে সূর্যের খরতাপের বদলে সকালে এখন শীত শীত ভাব। গ্রামাঞ্চলের মাঠ-প্রান্তরে ভোরে ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু দেখা যায়। গরমের বদলে কার্যত এখন শীতল হাওয়া বইতে শুরু করলেও রাজনৈতিক মহলে বইছে গরম হাওয়া। বেশ কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে মাঠে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এতে উত্তাপ বাড়ছে রাজনীতির মাঠে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বাকি আরও এক বছর। আগেভাগেই মাঠে নেমেছে বিএনপি। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি বিভিন্ন বিভাগে সমাবেশ করছে। আর আওয়ামী লীগ বলছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে, এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
জানা গেছে, বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে মূল ফোকাস ছিল ১০ ডিসেম্বর। ঢাকায় ঐ দিন সর্ববৃহৎ শোডাউন দেওয়ার প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। বিএনপি দুই ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রথম টার্গেট সাংগঠনিক শক্তিমত্তা প্রদর্শন ও সর্বোচ্চ জনসমাগম নিশ্চিত করা। ইতোমধ্যে ঢাকা বিভাগের প্রতিটি জেলা কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সমাবেশ প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। ঢাকার নেতাদের নিয়ে একাধিক সভা করেছে এই কমিটি।
১০ ডিসেম্বরের জনসমাবেশে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা হলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি সারা দেশে নয়টি সমাবেশ করেছে, কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি। সরকারের বাধা উপেক্ষা করে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকার সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকার জঙ্গি নাটকসহ বিভিন্নভাবে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছে। কোনো ষড়যন্ত্র সমাবেশ বন্ধ করতে পারবে না বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। গতকাল রোববার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
আগামী ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। যদিও ডিএমপি জনস্বার্থে নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি না দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যোন সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে। তবে নয়াপল্টনেই সমাবেশ করার ব্যাপারে অনড় অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপি এবং ডিএমপির মধ্যে চলছে ত্রিমূখী লড়াই। এ নিয়ে রাজধানীতে রাজনৈতিক উত্তপ বাড়ছে। জনমনেও রয়েছে আতঙ্ক।
বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সরাসরি পালটা কর্মসূচি না দিলেও বিএনপিকে কৌশলে মোকাবিলার পরিকল্পনা নিচ্ছে ক্ষমতাসীনেরা। ১০ ডিসেম্বর ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে জনসমাবেশ করবে তারা। ঐ দিন মহানগরেও আলাদা সমাবেশের চিন্তা রয়েছে। পাশাপাশি থানা-ওয়ার্ডগুলোতে মোড়ে মোড়ে সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের। এ ছাড়া সমাবেশ ঘিরে সারা দেশের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করা হবে-এমন আভাস দিয়েছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সূত্রগুলো। পাশাপাশি ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছে পুলিশ।
রাজধানীতে বিশেষ অভিযানে শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। গত শনিবার রাতে মহানগরের বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও মেসে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল রোববার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানান ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, গত শনিবার রাজধানীর আবাসিক হোটেল ও বিভিন্ন এলাকায় যে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে তা আমাদের নিয়মিত রুটিন ওয়ার্ক। অভিযানে প্রায় শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে।
এছাড়া, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে বিএনপি সূত্র জানিয়েছে। শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় গুলশানের ভাড়াবাসা ‘ফিরোজা’র সামনের রাস্তার দুই দিকেই হঠাৎ করেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার বলেন, গুলশানের ৭৯ নম্বর রোডের ১ নম্বর বাসভবনে (ফিরোজায়) অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ওই রোডের দুই পাশেই চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পুলিশের গুলশান বিভাগের উপর কমিশনার (ডিসি) আবদুল আহাদ শনিবার রাত ১১ টার দিকে জানান, পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী সন্দেহজন আমাদের বিশেষ অভিযান চলছে। এটা বিশেষ অভিযানের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়ার বাসার নিরাপত্তায় আগে থেকেই পুলিশ মোতায়ন ছিল। নতুন করে কোন পুলিশ মোতায়ন করা হয়নি।
অন্যদিকে, যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। শনিবার রাতে বিএনপির রাজশাহীর গণসমাবেশ থেকে ঢাকায় ফেরার পথে আমিন বাজার থেকে তাকে আটক করা হয়। আটকের সময় টুকু’র সঙ্গে থাকা যুবদলের সহসভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি জাভেদ হাসান স্বাধীন এবং টুকুর ব্যক্তিগত সহকারী মোখলেসুর রহমানকেও আটক করা হয় বলে জানান বিএনপির মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান। তবে এ ব্যাপারে গোয়েন্দা পুলিশ আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য জানায়নি।
এছাড়া, দীর্ঘদিন পর আবার স্বরূপে ফিরছে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ সহ নানা আন্দোলন আর সংগ্রামের যাত্রা শুরু হয়েছে এখান থেকেই। সঙ্গত কারণেই রাজনৈতিক দলগুলোর সভা সমাবেশের ক্ষেত্রে প্রথম পছন্দ এই ঐতিহাসিক ময়দান। গত ১১ নভেম্বর যুবলীগের মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে রাজনীতির উত্তাপ ফিরেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে। ২৪ ডিসেম্বর উদ্যোনে হবে আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। তার আগেই ইতোমধ্যে গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে যুবলীগের মহাসমাবেশ। এরপর ২৫ নভেম্বর স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সন্মেলন, ২৬ নভেম্বর মহিলা আওয়ামী লীগের সন্মেলন, ২ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ছাত্রলীগের যৌথ বার্ষিক সম্মেলন, ৩ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ শাখার সন্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যোন সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে ডিএমপি। যদিও নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ