May 21, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, February 28th, 2024, 9:59 pm

রাজশাহীতে বেড়েছে ভাইরাস জ্বরের প্রকোপ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

শীতের বিদায় বেলায় রাজশাহীতে বেড়েছে জ্বর কাশি ও ঠান্ডার প্রকোপ। এতে একই পরিবারের অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। সব বয়সী মানুষই ভুগছেন এসব রোগে। তবে শিশু ও বয়স্করা ভুগছেন বেশি। এ অবস্থায় জ্বর, সর্দি, কাশি, মাথাব্যথা ও শরীরব্যথা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পাশাপাশি শিশু ও বয়স্কদের বাড়তি যত্ন নিতে বলেছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, শীতের বিদায় বেলায় দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান বাড়ছে। এর মধ্যে হঠাৎ বৃষ্টিও ঝরছে। এ কারণে সিজনাল ফ্লু এবং ভাইরাসজনিত জ্বারের প্রকোপ বেড়েছে। জ্বর, সর্দি, কাশি, মাথাব্যথা, শরীরব্যথা প্রভৃতি হাঁচি-কাশির মাধ্যমে একজন থেকে অন্যজনে ছড়াচ্ছে। সাধারণত তিন থেকে সাত দিন জ¦র, সর্দি ও কাশির তীব্রতা থাকছে। কাজেই এই সময়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

নগরীর দড়িখড়বোনার এলাকার ড্রিম ফার্মেসির মালিক সাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, এই সময়ে মোনাস, ফেক্সোসহ এ ধরনের অন্য ওষুধ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ নাপা, এইস ও সর্দির ওষুধ বিক্রি অনেক বেড়েছে। কারণ সবার ঘরে জ্বর কাশি ও ঠান্ডায় আক্রান্ত রোগী আছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের তথ্যমতে, গত ১৫ দিন আগে হাসপাতালে রোগী ছিলেন দুই হাজার ২০০ জন। এর মধ্যে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী ছিল ৪৪৫ এবং মেডিসিন ওয়ার্ডে ৬২৯ জন। গত মঙ্গলবার শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল ৪৮৫ জন এবং মেডিসিন ওয়ার্ডে ৬৬০ জন। এদিন রোগী চিকিৎসা নিয়েছিল দুই হাজার ৬৯৩ জন। সিজনাল ফ্লু এবং ভাইরাসজনিত জ্বারের প্রকোপ বাড়ায় রোগী বাড়ছে। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যমতে, আবহওয়া পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা নিয়ে রোগীরা হাসপাতালে আসছেন।

এ কারণে সপ্তাহখানেক ধরে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে। এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে গত শনিবার মারা গেছেন পবা উপজেলার সোনাকান্দি এলাকার বাসিন্দা মন্টু ইসলাম (৭৫)। তার স্বজনরা জানান, মূলত ঠান্ডা-জ্বার নিয়েই মন্টুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সঙ্গে বয়সজনিত শারীরিক সমস্যাও ছিল। শনিবার সন্ধ্যায় তিনি মারা গেছেন। পবার আরেক বাসিন্দা চম্বা বেগম বলেন, আমার নাতনি গত কয়েকদিন ধরে সর্দি-জ্বরে ভুগছে। বাসার অন্য সদস্যরাও সর্দি-জ্বারে আক্রান্ত। স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাওয়ানো হচ্ছে। কমছে আবার বাড়ছে। আবহাওয়ার কারণে এমনটি হচ্ছে। ওষুধ খেলেও রোগ সারতে সময়ে লাগছে অনেকদিন।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ও ইসলামি ব্যাংক মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. খলিলুর রহমান বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনের সময় ফ্লু-এর প্রকোপ বাড়ে। এবারও বেড়েছে। রাজশাহীতে অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে দুবার বৃষ্টি হয়েছে। এতে রোগের প্রকোপ বৃদ্ধির শঙ্কা বেড়ে যায়। কাজেই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ এবং যাদের অ্যাজমা, হাঁপানি, ব্রঙ্কিওলাইটিস ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে, তাদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে। এ সময়টাই ফলমূলসহ গরম খাবার বেশি খেতে হবে।

শরীরে শক্তি জোগায় এমন খাবার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। আর জটিলতা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে হবে। এ বিষয়ে রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, উপজেলা পর্যায়ে সর্দি-জ্বর মহামারি আকার ধারণ না করলেও প্রকোপ বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। শিশুদের বিষয়ে যন্ত্রবান হতে হবে অভিভাবকদের। এ ছাড়া ওষুধসহ পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনা আছে। তিনি আরও বলেন, দিন ও রাতের তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে এখন ভাইরাসজনিত জ্বারের প্রকোপ বেড়েছে। এতে করে জ্বর হাঁচি-কাশির মাধ্যমে একজন থেকে অন্যজনে ছড়াচ্ছে। সাধারণত তিন থেকে সাত দিন জ্বর, সর্দি ও কাশির তীব্রতা থাকছে। আক্রান্তদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। তিন দিনের বেশি জ্বর থাকলে অবহেলা করা উচিত নয় জানিয়ে ডা. আবু সাইদ আরও বলেন, পরীক্ষা করানো উচিত। যেহেতু এখন আবার নতুন করে করোনা হাতছানি দিচ্ছে। এ ছাড়া ডেঙ্গুও পুরোপুরি যায়নি। বিশেষত, শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি রোগীদের বিষয়ে আরও সচেতন হওয়া উচিত।