April 20, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, October 27th, 2021, 12:34 pm

রাজশাহীতে ৬৫০০ বাল্যবিবাহ

ফাইল ছবি

জেলা প্রতিনিধি:

করোনার শুরুতে জেলার ৫৪৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল দুই লাখ ১২ হাজার ১৬৩ জন। এর মধ্যে ছয় হাজার ৫১২ ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে।

করোনার দেড় বছরে রাজশাহীতে সাড়ে ছয় হাজার মাধ্যমিক শ্রেণির স্কুলছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। করোনার পর তাদের কেউ কেউ স্কুলে এলেও বেশির ভাগ ঘর-সংসার করছে।

সম্প্রতি জেলার নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের বাল্যবিয়ে হওয়া ছাত্রীদের তালিকা করেছে রাজশাহী জেলা শিক্ষা দপ্তর। এতে ফুটে উঠেছে বাল্যবিয়ের এ চিত্র। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন। তবে এই তালিকায় প্রাথমিক পর্যায়ের কোনো তথ্য নেই।

প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে গত বছর রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার কালিকাপুর নিম্নমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল পাপিয়া আক্তার। করোনার তাণ্ডবে স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে কিছুদিনের মধ্যেই বাবা রেজাউল করিম মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেন। এখন পাপিয়ার কোলে পুত্রসন্তান। ষষ্ঠ শ্রেণির পাপিয়া এখন স্বামী-সংসার-সন্তান সামলাতে ব্যস্ত। তার আর স্কুলে যাওয়া হয় না।

কালিকাপুর নিম্নমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেলিনা আক্তার বানু জানান, করোনা মহামারি শুরুর আগে তাঁর স্কুলে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল ৭০ জন। করোনার পর স্কুল খুললে জানতে পারেন তাদের মধ্যে ৩০ জনের বিয়ে হয়েছে। তবে বিয়ের পরও ১০ জন স্কুলে আসছে। ২০ জন আর আসছে না। ফলে তাঁর স্কুলে এখন ছাত্রীর সংখ্যা ৫০।

তিনি আরো জানান, করোনার কারণে অনেক অভিভাবক মেয়েদের বাড়িতে বসিয়ে না রেখে বিয়ে দিয়েছেন। প্রত্যন্ত গ্রাম হওয়ায় অভিভাবকদের বুঝিয়েও কাজ হয়নি।

বাগমারা উপজেলার মচমইল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ আলী হাসান জানান, তাঁর স্কুল থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে—এমন তিনজন ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে। তবে তারা স্কুলে আসছে।

অন্য কথা বললেন দুর্গাপুরের দাওকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান। তিনি জানান, তাঁর স্কুলের যেসব ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে, তাদের কেউ আর স্কুলে আসছে না। তাঁর স্কুলের নবম শ্রেণির সাতজন, দশম শ্রেণির ছয়জন ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে।

জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্যানুযায়ী, করোনার শুরুতে জেলার ৫৪৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল দুই লাখ ১২ হাজার ১৬৩ জন। এর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা এক লাখ তিন হাজার ৪০৭। এই ছাত্রীদের মধ্যে ছয় হাজার ৫১২ জনের বিয়ে হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে রাজশাহীতে বাল্যবিয়ের হার দাঁড়িয়েছে ৬.২৯ শতাংশ। জেলায় সর্বোচ্চ এক হাজার ৭৮৫ জনের বাল্যবিয়ে হয়েছে বাগমারা উপজেলায়। এ উপজেলায় বাল্যবিয়ের হার ৮.৩৪ শতাংশ।

এ ছাড়া রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় তিন হাজার ৪৫৭ জন ছাত্রীর মধ্যে ১২১ জন, চারঘাটে ৯ হাজার ৩১ জনের মধ্যে ৬৮৪ জন, দুর্গাপুরে ছয় হাজার ৬০২ জনের মধ্যে ৪৯০ জন, গোদাগাড়ীতে ১২ হাজার ৯৯২ জনের মধ্যে ৮৭৩ জন, মোহনপুরে ছয় হাজার ৫৬০ জনের মধ্যে ৫০১ জন, পবায় ১১ হাজার ২৯৬ জনের মধ্যে ৮৩০ জন, পুঠিয়ায় সাত হাজার ৫৮৭ জনের মধ্যে ৪৬৫ জন, তানোরে আট হাজার ৪৪২ জনের মধ্যে ৬৮০ জন এবং রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া থানায় সাত হাজার ২৫০ জনের মধ্যে ১৯ জন, মতিহার থানায় আট হাজার ৮০০ জনের মধ্যে ৬৪ জন ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে।

বাঘায় বাল্যবিয়ের হার ৩.৫৭ শতাংশ, চারঘাটে ৭.৫৭ শতাংশ, দুর্গাপুরে ৭.৪২ শতাংশ, গোদাগাড়ীতে ৬.৭১ শতাংশ, মোহনপুরে ৭.৬৯ শতাংশ, পবায় ৭.৩৫ শতাংশ, পুঠিয়ায় ৬.১২ শতাংশ, তানোরে ৮.৫ শতাংশ, বোয়ালিয়ায় ০.২৬ শতাংশ এবং মতিহারে ০.৭৩ শতাংশ।

রাজশাহী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দীন বলেন, ‘করোনার সময় কতজন ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে বিষয়টি জানতে নিজ উদ্যোগে এই কাজটি করেছি। সব স্কুলে তথ্য চাওয়া হয়। সম্প্রতি সে তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্যে বাল্যবিয়ের ভয়াবহ চিত্র পাওয়া গেছে।’