May 4, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, April 22nd, 2024, 9:40 pm

রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১২ বছর অধরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রতিবছর বাজেটের আকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ানো হয় রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা। তবে অর্থবছর শেষ হওয়ার আগমুহূর্তে কমানো হয় লক্ষ্যমাত্রা। কিন্তু তারপরও সেই সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও থাকে অধরা। চলতি অর্থবছরেও রাজস্ব আয়ে বড় ধরনের ঘাটতিতে থাকবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অর্থনীতিবিদদের মতে, আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ কারণে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি নেতিবাচক ধারায় রয়েছে।

দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ব্যাংকের তারল্য সংকট, বাজেট বাস্তবায়নে নিম্ন ও শ্লথ গতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিম্নগামী এবং রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স নিচের দিকে থাকায় সরকারকে আর্থিক ব্যবস্থাপনার জন্য ঋণের উপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছে। বাজেট নথি অনুসারে, ২০২২-২৩ সালের শেষ হওয়া আটটি আর্থিক বছরে সরকারের ঋণ ১৭৭ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে রাজস্ব উৎপাদন একই সময়ে শুধুমাত্র ১১৮ শতাংশ বেড়েছে। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘দরিদ্র রাজস্ব উৎপাদনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ঋণ ইতোমধ্যেই আর্থিক ভারসাম্যকে আঘাত করেছে।

প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সরকার রাজস্ব উৎপাদন বাড়াতে ব্যর্থ হয়েছে, তিনি উল্লেখ করেছেন যে, কর-জিডিপি অনুপাত ২০১৬ সালের ৯.৩ শতাংশ থেকে ২০২১ অর্থবছরের শেষে ৭.৮ শতাংশে নেমে এসেছে। বিগত দেড় দশকে এনবিআরের রাজস্ব উৎপাদনের রেকর্ড দেখায় যে, ২০১০-২০১১ সালের অর্থবছরে সফল হয়েছিল। সে বছর ৭২,৫৯০ কোটি টাকার মূল লক্ষ্যমাত্রা ৩,০১০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৭৫,৬০০ কোটি টাকায় সংশোধিত করা হয়েছিল, যেখানে এনবিআর শেষ পর্যন্ত ৭৬,২৮৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিলো। সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিতও ২০১২ সালের লক্ষ্যমাত্রা ৪৯১ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৯১,৮৭৯ কোটি টাকা থেকে ৯২,৩৭০ কোটি টাকা করেছেন।

তবে, এনবিআর তার পারফরম্যান্স ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে, সেই অর্থ বছরে ৯১,৫৯৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, ২০২৪ অর্থবছরের জন্য ৪,৩০,০০০ কোটি টাকার মূল লক্ষ্যমাত্রা ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাথে পরামর্শ করার পরে ৩,৯৪,৩০৪ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। কারণ সরকার ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ কর্মসূচির কারণে চলমান ডলারের ঘাটতির সমস্যা মোকাবেলা করেছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ইতোমধ্যেই মূল্যায়ন করেছে যে রাজস্ব ঘাটতি প্রায় ৮২,০০০ কোটি টাকায় আঘাত হানবে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হুসেন ভ্যাট আদায়ে স্বয়ংক্রিয়তার অভাবের ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, বিভিন্ন খাতে এনবিআর কর্তৃক নির্ধারিত বিভিন্ন হার পর্যালোচনা করে এই মূল্যায়ন করা হয়েছে। চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সরকারের রাজস্ব আদায়ে ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা গত পাঁচ বছরে ১০ শতাংশ গড় প্রবৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে গেছে। তবে আদায়ে এই ইতিবাচক ধারা সত্ত্বেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এখনও উল্লেখযোগ্য রাজস্ব ঘাটতিতে রয়েছে।

ফেব্রুয়ারিতে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ১৯ শতাংশের বেশি, যা বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বিশ্লেষকরা বলছেন, আমদানিমূল্য বৃদ্ধি ও কর আদায়ের প্রচেষ্টা বাড়ানোসহ বিভিন্ন কারণে আদায়ে এ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে এ প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও ঘাটতি পূরণ হয়নি। প্রথমে নির্ধারিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে কমানোর পরও এ আট মাসে এনবিআর এখন ১৮ হাজার ২২১ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতিতে রয়েছে। অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এককভাবে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে আয়কর থেকে, প্রায় ২০ শতাংশ। এ ছাড়া সর্বশেষ ফেব্রুয়ারিতে আয়কর আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২৯ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন যে এনবিআরকে তার সক্ষমতা বাড়ানো বা কর ফাঁকি রোধে কোনো বড় সংস্কার ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে উচ্চাভিলাষী রাজস্ব উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল।

২০১৯ অর্থবছরে এনবিআর প্রায় ২০০,০০০ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। ১৯৯১ সালে এনবিআর প্রবর্তনের পর থেকে ভ্যাট হয়ে উঠেছে প্রধান আয়ের উৎস হয়ে উঠে। ভ্যাটের পাশাপাশি, আমদানি শুল্ক, আবগারি শুল্ক এবং সম্পূরক শুল্ক-সবই পরোক্ষ কর নামে পরিচিত। বলা হয়-গত বছর ধরে এনবিআর-এর জন্য দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আয় করছে। বাংলাদেশের সামগ্রিক রাজস্বে প্রত্যক্ষ করের অবদান ২০২০-২১ সালে ৩২.১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে যেখানে ২০০৯-১০ সালে তা ছিল ২৬.৫ শতাংশ। ২০২৩ সালে বাংলাদেশে নিবন্ধিত আয়করদাতার সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়েছে। তাদের মধ্যে ৩০ শতাংশেরও কম আয়কর প্রদান করে, যা অর্থনীতিবিদদের মতে, দ্রুত হারে একটি প্রগতিশীল কর নীতির দিকে রূপান্তরের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা।

অর্থনীতিবিদরা আরও উল্লেখ করেছেন যে, বর্তমান কর ব্যবস্থা শুধুমাত্র পরোক্ষ করের সাথে বেশিরভাগ লোকের উপর চাপ সৃষ্টি করেনি বরং আয় বৈষম্যও বাড়িয়েছে। সিপিডি বিশিষ্ট সহকর্মী মুস্তাফিজুর রহমান পর্যবেক্ষণ করেছেন যে, সম্পত্তি কর এবং উত্তরাধিকার করের মতো প্রত্যক্ষ কর থেকে উচ্চতর রাজস্ব ছাড়া আয় বৈষম্য হ্রাস পাবে না।