নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজস্ব আদায় বাড়াতে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বাজেটের পর মূল্য সংযোজন কর আদায় (ভ্যাট) কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নিচ্ছে। সেজন্য আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নিবন্ধিত সব ভ্যাটাদাতা প্রতিষ্ঠানের অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বর্তমানে এনবিআরের অধীন সারাদেশে ১২টি ভ্যাট কমিশনারেট অফিস রয়েছে। তার মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ৫টি। বিদায়ী অর্থবছরে এনবিআরের মাধ্যমে মোট ভ্যাট আহরণ হয়েছে প্রায় ৭১ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে সরকার করোনা মহামারীর মধ্যেও ভ্যাট আদায় কার্যক্রম জোরদার করতে চায়। সেজন্য ভ্যাটযোগ্য সব প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় এনে আধুনিক প্রযুক্তির মেশিন ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস চালুর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আর ওসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে এনবিআর নতুন অর্থবছরে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট আহরণের লক্ষ্য স্থির করেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধনের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। তার মধ্যে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করছে বছরে মাত্র ৪০ লাখ। সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানই অনলাইনের আওতার বাইরে। এমন পরিস্থিতিতে রাজস্ব আদায় বাড়াতে নিবন্ধিত সকল ভ্যাটযোগ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলক অনলাইনের আওতায় আনা হচ্ছে। আগে প্রচলিত প্রথায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন দেয়া হতো। যার অঙ্ক বা ডিজিট ছিল ১১। ৩ বছর আগে অনলাইনে যে ভ্যাট নিবন্ধন চালু করা হয় তার ডিজিট ৯। এখন ৯ ডিজিটের নাম্বারকে বলা হয় বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নাম্বার বা ই-বিআইএন। মাসিক ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করতে হলে ৯ ডিজিটের ই-বিআইএন অবশ্যই উল্লেখ করতে হয়। তা নাহলে রিটার্ন গ্রহণ করা হয় না। আর রিটার্নের ওপর ভিত্তি করেই ভ্যাট আদায় করা হয়। রিটার্নে প্রতিষ্ঠানের বিক্রি বা লেনদেনের তথ্য উল্লেখ করা হয়।
সূত্র জানায়, ভ্যাটের রিটার্ন অনলাইনে দাখিলের নিয়ম চালু করা হলেও অধিকাংশ ভ্যাট কমিশনারেটে এখনো শতভাগ রিটার্ন অনলাইনে দাখিল হচ্ছে না। বরং খুচরা পর্যায়ের বড় একটি অংশই এখনো ভ্যাটের আওতার বাইরে রয়েছে। বর্তমানে ঢাকার তুলনায় ঢাকার বাইরে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল তুলনামূলক বেশি। যদিও ঢাকায় মোট রিটার্নের সংখ্যা বেশি। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঢাকা উত্তরে সবচেয়ে কম ২৭ শতাংশ ভ্যাট রিটার্ন অনলাইনে দাখিল হচ্ছে। অথচ রংপুরে ৯৮ শতাংশ রিটার্ন অনলাইনে দাখিল করা হচ্ছে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানের সিএ রিপোর্ট পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে তাতে প্রকৃত তথ্য রিপোর্টে উপস্থাপিত হয়নি। গত মে মাসে বিভিন্ন কমিশনারেটে ২২৫টির বেশি সিএ রিপোর্ট পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে দেখা যায় বেশিরভাগ রিপোর্টে প্রকৃতত বিক্রির তথ্য গোপন করা হয়েছে। তাতে বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকি দেয়া হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেজন্য ভ্যাট ফাঁকি বন্ধে অভিযান কার্যক্রম আরো জোরদার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কমিশনারেটকে নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের ভ্যাটের রিফান্ড (আগাম পরিশোধ করা ভ্যাট ফেরত দেয়া) দাবি দ্রুত নিষ্পত্তির কথাও বলা হয়।
এদিকে গত সপ্তাহে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে ভ্যাট বিভাগের এক পর্যালোচনা সভায় অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম সভাপতিত্ব করেন। এ সময় এনবিআরের জ্যেষ্ঠ সদস্য ও মাঠ পর্যায়ের সকল ভ্যাট কমিশনার উপস্থিত ছিলেন। সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, সেবার অনেক খাত রয়েছে, যেখানে ভ্যাট আদায়ের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তা হচ্ছে না। ওসব খাত শনাক্ত করে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে ভ্যাট আহরণের নির্দেশ দেন। বৈঠকে এনবিআরের অধীনে প্রত্যেক ভ্যাট কমিশনারেটকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি