সাভারের রানা প্লাজা ধস ও হতাহতের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ভবনটির মালিক সোহেল রানাকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আগামী ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত।
রবিবার রাষ্ট্রপক্ষের এক আবেদনের প্রেক্ষিতে অবকাশকালীন চেম্বার বেঞ্চের বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী এই স্থগিতাদেশ দেন।
আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারোয়ার হোসেন বাপ্পী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুল আলম। এছাড়া সোহেল রানার পক্ষে শুনানি করেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম।
সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুল আলম বলেন, ৮ মে পর্যন্ত হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেছেন চেম্বার বিচারপতি। ওই দিন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর ফের শুনানি হবে। এই স্থগিতাদেশের ফলে সোহেল রানার কারামুক্তি আটকে গেল।
এর আগে গত ৬ এপ্রিল রানা প্লাজা ধস ও হতাহতের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ভবনটির মালিক সোহেল রানাকে জামিন মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্ট।
সোহেল রানার জামিন বিষয়ে রুল যথাযথ ঘোষণা করে বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) হাইকোর্টের বিচারপতি আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি শাহেদ নুরুউদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। ওই রায় স্থগিত চেয়ে রবিবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড সুফিয়া খাতুন একটি আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেন।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে ধসে পড়ে সাভারের রানা প্লাজা। ভবনের নিচে চাপা পড়েন সাড়ে পাঁচ হাজার পোশাক শ্রমিক। ওই ঘটনায় এক হাজার ১৩৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। আহত ও পঙ্গু হন প্রায় দুই হাজার শ্রমিক। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে দুই হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
বাংলাদেশের ওই ঘটনা সেসময় আন্তর্জাতিক সব গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়। দেশে কারখানার অবকাঠামোগত নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এলে সরকার ও মালিকরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়। এ ঘটনায় সাভার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়ালী আশরাফ ভবন নির্মাণে অবহেলা ও ত্রুটিজনিত হত্যা মামলা দায়ের করেন।
২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলায় সাক্ষী করা হয় ৫৯৪ জনকে।
তাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত মৃত্যু ঘটানোসহ দণ্ডবিধির ৩০২, ৩২৬, ৩২৫, ৩৩৭, ৩৩৮, ৪২৭, ৪৬৫, ৪৭১, ২১২, ১১৪, ১০৯, ৩৪ ধারায় বিভিন্ন অভিযোগ আনেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহকারী সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ২০১৫ সালের ১ জুন অভিযোগপত্র জমা দেন।
২০১৬ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এসএম কুদ্দুস জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
মামলাটি এখন ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। এ মামলায় পাঁচ শতাধিক সাক্ষীর মধ্যে ৩৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
২০২০ সালের ১২ নভেম্বর এ মামলায় নিম্ন আদালতে সোহেল রানার জামিন আবেদন খারিজ হয়। এরপর তিনি হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। ২০২১ সালের ১ মার্চ হাইকোর্ট তার জামিন প্রশ্নে রুল জারি করেন। সে রুল যথাযথ ঘোষণা করে ৬ এপ্রিল রায় দেন হাইকোর্ট।
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম