April 26, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, November 16th, 2022, 8:31 pm

রাবার কারখানার বর্জ্যে  দুষিত হচ্ছে ছড়ার পানি, দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ স্থানীয় মানুষ

রাবার কারখানার থেকে গোগালী ছড়ায় নির্গত হচ্ছে বিষাক্ত কেমিক্যাল।

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডে একটি রাবার প্রক্রিয়াজতকরণ কারখানা নিয়ে এলাকার জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। ওই কারখানার দুর্গন্ধে বিষময় হয়ে উঠেছে স্থানীয় এলাকার বাতাস। চর্তুদিকে প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকায় প্রতিদিন বিকেলে এক অসহনীয় সময় পার করতে হচ্ছে স্থানীয়দের। কারখানাটি সরানো অথবা বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসী প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও কোন সুরাহা হয়নি।

কোন প্রতিকার না পেয়ে এলাকাবাসী গত ০৯ নভেম্বর কুলাউড়া পৌরসভার মেয়রের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ও ০৮ নভেম্বর রাতে সংবাদ সম্মেলন করেন। তাতেও কোন সুফল না পেলে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে জানান।

স্থানীয় লোকজন জানান, পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডে গোগালী ছড়ার পাড় ২০২১ সালে ন্যাশনাল লোটেক্স এন্ড এগ্রো কেমিক্যাল লিমিটেড নামে রাবার প্রক্রিয়াজাত কারখানাটি স্থাপন করা হয়। এই কারখানার একপাশে পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড ও পূর্বপাশে উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড। সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় বাসিন্দা ও এলাকার প্রবীণ মুরুব্বী আব্দুল জলিল, আব্দুর রহমান, কদর আলী, আখলাছ মিয়া, মশাহিদ আলী ও পৌরসভার ৯নং ওয়ার্র্ড কাউন্সিলার জয়নাল আবেদীন বাচ্চু উপস্থিত ছিলেন। তাদের অভিযোগ, কারখানাটির গন্ধই হচ্ছে প্রধান সমস্যা। গন্ধ যখন এলাকায় ছড়ায় তখন বাতাস এতটাই গন্ধযুক্ত হয়, আর শ্বাস প্রশ্বাস নেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। গন্ধে একজন সুস্থ মানুষকেও বমি করতে হয়।

বিষয়টি সরেজমিন যাচাই করতে গেলে সেখানের বিকট গন্ধে যেন শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। নারী পুরুষ সকলেই বিষয়টি স্বীকার করেন। কারখানার বর্জ্য ফেলা হয় পাহাড়ী গোগালীছড়ায়। এতে দুষিত হয় ছড়ার পানি। এতে এলাকার আব্দুর রহমানের ২০টি, কদর আলীর ২৩টি ও কামরুল ইসলামের ২৮টি হাঁস মারা যায়। এমনকি কারখানার পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষের হাঁস মোরগ পালন বন্ধ হয়ে গেছে বলে এলাকার নারীরা জানান। বিশেষ করে বিকেল বেলা এই গন্ধ সহ্য করা সম্ভব হয় না। বিষয়টি কারখানা কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা কোন কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ইতিপূর্বে ২০২১ সালে ১৫ ডিসেম্বর এলাকার শতাধিক ব্যক্তি স্বাক্ষর করে একাটি লিখিত অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন। সেই লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, দুর্গন্ধের কারণে এলাকার শিশু ও বয়ষ্ক মানুষের শ্বাসকষ্ট ও চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। কেমিক্যালসহ রাবারের বর্জ্য পাহাড়ী গোগালী ছড়ার পড়ার কারণে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য এবং পানি দূষণ হচ্ছে।

ন্যাশনাল লোটেক্স এন্ড এগ্রো কেমিক্যাল লিমিটেডের প্রধান উদ্যোক্তা মি. রিয়াদ জানান, পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়েই তারা ব্যবসা শুরু করেছেন। গন্ধ ও পরিবেশ বিনষ্টের ব্যাপারে তিনি বলেন, নদীর দু’কুলে মানুষের খোলা পায়খানা। গন্ধ আর পরিবেশ সেখান থেকে বিনষ্ট হচ্ছে। তারা যথেষ্ট সচেতন রয়েছেন। একটি পক্ষ তাদেরকে হয়রানির উদ্দেশ্যে এসব অভিযোগ করছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ মাঈদুল ইসলাম বলেন, কর্মস্থলে আমি নতুন। তাই বিষয়টি আমার জানা নেই তবে খোঁজ নিয়ে দেখবো।

কুলাউড়া পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ জানান, এক বছর আগে অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বিষয়টি সমাধান করে দেন। এলাকাবাসীর যখন আবার অভিযোগ তখন তাদেরকে ডেকে গন্ধ কমানোর ব্যাপারে উদ্যোগ নেবেন।

রাবার প্রক্রিয়াজাত কারখানার দুর্গন্ধ ও দূষিত বর্জ্য গোগালী ছড়ায় ফেলায় ভোগান্তির বিষয়টি নিয়ে সোমবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারন সম্পাদক এম. আতিকুর রহমান আখই’র আনা প্রস্তাবে আলোচনা হয় এবং রেজুলেশন করার জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: মেহেদী হাসানকে নির্দেশনা দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি মো: মাহমুদুর রহমান খোন্দকার। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মাহমুদুর রহমান খোন্দকার বলেন, বিষয়টি নিয়ে আইনশৃংখলা কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে এবং রেজুলেশনে আনা হবে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরেজমিন বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন। ওই প্রতিষ্ঠানের সমস্ত কাগজাদি যাচাই-বাছাই করে তারা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চালু করেছেন কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হবে।