রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার বেলারুশে আলোচনায় বসার কথা রয়েছে। আট দিন আগে দেশটিতে হামলা চালায় রাশিয়া। হামলা চালানোর পর দু’দেশ দ্বিতীয়বারের মতো আলোচনায় বসছে।
বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি ইউক্রেনীয়দের প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে রুশ সেনারা দেশটির কোনো শহর দখল করেছে কি না সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
রুশ সেনাদের ‘বিভ্রান্ত শিশু’ উল্লেখ করে তাদের ‘দেশে ফিরে যাওয়ার’ আহ্বান জানিয়েছে জেলেনস্কি বলেন, ‘তারা এখানে কোনো শান্তি পাবে না।’
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট এই মন্তব্য এমন সময়ে করলেন যখন রাশিয়া হামলার শুরুর পর থেকে প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছে তাদের ৫০০ জনের মতো সেনা নিহত এবং প্রায় এক হাজার ৬০০ জন আহত হয়েছে। তবে কতজন ইউক্রেনীয় সেনা হতাহত হয়েছে এমন কোনো তথ্য দেয়নি দেশটির কর্তৃপক্ষ।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ আগ্রাসনের শুরুর পর থেকে ইউক্রেনে কমপক্ষে ২২৭ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৫২৫ জন আহত হয়েছেন। তবে ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় জরুরি পরিষেবা জানিয়েছে, দুই হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক মারা গেছেন। তবে তাদের এমন দাবি যাচাই করা অসম্ভব।
এদিকে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, গত সপ্তাহে হামলার পর থেকে ইউক্রেন ত্যাগ করেছেন ১০ লাখ মানুষ। এছাড়া জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এ হামলার নিন্দা জানিয়ে ইউক্রেন থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে রাশিয়ার প্রতি আহ্বান করেছে।
সহিংসতা নিয়ে যে সব প্রধান বিষয় জানতে হবে
সম্ভাব্য আলোচনা
বুধবার সন্ধ্যায় ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতির কার্যালয় জানায়, রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনা করতে তাদের প্রতিনিধি দল পথে রয়েছে। তবে প্রতিনিধি দল কখন পৌঁছাবে সেটি জানানো হয়নি।
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সহযোগী ও রুশ প্রতিনিধিদলের প্রধান ভ্লাদিমির মেডিনস্কি সাংবাদিকদের বলেছেন, পোল্যান্ডের সীমান্তবর্তী বেলারুশের ব্রেস্ট অঞ্চলে আলোচনার জন্য বৃহস্পতিবার ইউক্রেনীয় প্রতিনিধি দল আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইউক্রেনে সহিংসতা
জেলেনস্কির কার্যালয় জানিয়েছে, বুধবার রাতে কিয়েভের দক্ষিণ রেলওয়ে স্টেশন ও ইবিস হোটেলের মধ্যে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণ হয়েছে। আর এর পাশেই রয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
ইউক্রেনীয় বার্তা সংস্থা ইউএনআইএএন দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় শহর চেরনিহিভের প্রধান স্বাস্থ্য প্রশাসক সেরহি পিভোভারকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, শহরটির একটি হাসপাতালে দুটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে।
তিনি বলেন, হাসপাতালের মূল ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং কর্তৃপক্ষ নিহতের সংখ্যা নির্ণয়ে কাজ করছে।
মারিউপোলে রুশ বোমা হামলায় কমপক্ষে এক কিশোর মারা গেছে এবং দুজন আহত হয়েছে। নিহতের পরিবার জানিয়েছে, তারা একটি বিদ্যালয়ের কাছে ফুটবল খেলছিল।
ট্যাঙ্ক ও অন্যান্য সাঁজোয়া যানবাহনসহ ৪০ মাইল দীর্ঘ একটি রুশ সেনাবহর ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের কাছে অবস্থান করছে।
রাশিয়া বলছে, রুশ সেনারা ইউক্রেনের বন্দর শহর খেরসন দখল করেছে। তবে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী তা অস্বীকার করেছে। এছাড়া রুশ বাহিনী ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে বোমা হামলা করছে এবং দুটি কৌশলগত সমুদ্রবন্দর অবরোধ করেছে।
মানবিক পরিস্থিতি
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি টুইটারে লিখেছেন, ইউক্রেন থেকে গত সাতদিনে প্রতিবেশী দেশগুলোতে ১০ লাখ মানুষ গিয়েছেন। যা দেশটির মোট জনসংখ্যার দুই শতাংশ। তবে তাদের মধ্যে অন্য দেশের কিছু নাগরিকও রয়েছেন।
জাতিসংঘের এই সংস্থাটি বলছে, ৪০ লাখ মানুষ ইউক্রেন ত্যাগ করতে পারেন। তবে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও সতর্ক করেছে সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, ২০২০ সালে ইউক্রেনে চার কোটি ৪০ লাখ মানুষ ছিল।
জাতিসংঘের নিন্দা ও যুদ্ধাপরাধের তদন্ত
বুধবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা বন্ধ এবং সব সেনা প্রত্যাহারের পক্ষে ভোট দেয়। জাতিসংঘের ১৪১টি দেশ পক্ষে এবং পাঁচটি দেশ বিপক্ষে এবং ৩৫টি দেশ ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এই ভোট ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার ‘বিশ্বব্যাপী ক্ষোভের মাত্রা প্রদর্শন করে।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর বুধবার ইউক্রেনে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও গণহত্যার বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। প্রসিকিউটর করিম খান বলেছেন, এ আদালতের ৩৯টি সদস্য রাষ্ট্র এ বিষয়ে তদন্তের অনুরোধ করার পর তিনি তা করেছেন।
তবে রাশিয়া বা ইউক্রেন, কোনো দেশই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য নয়।
নিষেধাজ্ঞা কী রাশিয়াকে আঘাত করছে?
হোয়াইট হাউস রাশিয়া ও বেলারুশের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রুশ তেল পরিশোধন এবং উভয় দেশের সামরিক বাহিনীকে সমর্থন করা প্রতিষ্ঠানের রপ্তানির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো।
ইউরোপ ও কানাডার মতো যুক্তরাষ্ট্রও রুশ এয়ারলাইন্সের জন্য তাদের দেশের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে।
এছাড়া এয়ারবাস ও বোয়িং জানিয়েছে, তারা রুশ বিমান সংস্থার জন্য খুচরা যন্ত্রাংশ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা বন্ধ করবে। ফরাসি ভিত্তিক এয়ারবাস ও যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বোয়িং অধিকাংশ রুশ যাত্রীবাহী বিমান সরবরাহ করে থাকে।
এসব নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাশিয়ার অতি উচ্চ বিত্তবানদেরও আনা হয়েছে যারা ইউরোপজুড়ে সম্পত্তির মালিক এবং তাদের সন্তানদের অভিজাত ইউরোপীয় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠান।
এছাড়া সাধারণ রুশ নাগরিকরাও নিষেধাজ্ঞার প্রভাব অনুভব করতে শুরু করেছেন।
—-এপি
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২