May 5, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, October 3rd, 2022, 7:57 pm

রিকশা চালিয়েও দক্ষিণ এশিয়ার সেরা মোস্তাকিম

অনলাইন ডেস্ক :

মোস্তাকিমের বাবার তখন ভীষণ অসুখ, দুর্ভাগ্য এমনই একই সময় মা-ও শয্যাশায়ী। মা-বাবার ওষুধপত্র, সংসারের নিত্যদিনের খরচ একটা হার্ডওয়্যারের দোকানে কাজ করে মেটাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন মোস্তাকিমের বড় ভাই জাহিদুল। স্কুল বাদ দিয়ে মোস্তাকিমই তাই একদিন বাবার রিকশাটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, মাস কয়েক। জাতীয় ব্যাডমিন্টনের তারিখ ঘোষণা হয়েছে সে সময়। কিন্তু ঢাকায় এসে মোস্তাকিম সেই প্রস্তুতি নেবে, না মা-বাবাকে দেখবে? মোস্তাকিমের আসা হয় না। ‘বেশ কিছুদিন রিকশাই চালিয়েছি আমি। ন্যাশনালে অংশ নিতে পারিনি। অনুশীলনই তো করতে পারিনি। বিষয়টা নজরে পড়ে আমাদের বিরামপুরের (দিনাজপুর) শিক্ষা অফিসারের। উনিই পরে ডেকে নিয়ে আমার ফ্যামিলিকে কিছু অর্থ সাহায্য করেন। আর আমাকে থাকা-খাওয়ার খরচ দিয়ে পাঠান ঢাকায়’-বলছিল মোস্তাকিম। ঢাকারই একটি একাডেমিতে খেলা শিখেছে সে বিরামপুরের আরেক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে। বিরামপুর কলেজিয়েট স্কুলের হয়ে এ বছরের শুরুতে আন্ত স্কুল ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নও হয় সে সারা বাংলাদেশের মধ্যে। এমন একটি ছেলের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়াটা দায়িত্বই মনে করেছিলেন শিক্ষা অফিসার পরিমল কুমার সরকার। অজান্তে দেশকে দক্ষিণ এশিয়ার একজন চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড় তুলে দিচ্ছেন, তিনিই কি জানতেন! রূপকথার মতো শোনালেও মাস কয়েক আগে রিকশা চালানো সেই মোস্তাকিমই গত রোববার দক্ষিণ এশীয় জুনিয়র ব্যাডমিন্টনের দ্বৈতে শিরোপা জিতে গত রোববার দেশে ফিরেছেন। মোস্তাকিম ও তাঁর সঙ্গী সিফাত উল্লাহকে এদিন পল্টন উডেন ফ্লোর জিমনেসিয়ামে সংবর্ধনাও দেওয়া হয়েছে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে। মোস্তাকিম অর্থ পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন ৫০ হাজার টাকা। অঙ্কটা নেহাত কম নয় মোস্তাকিমের জন্য। তবে তার ব্যক্তিগত গল্প একপাশে রেখে দেশের ব্যাডমিন্টনে এই অর্জনের মাপ করতে গেলে বলতে হবে, এটা একটা ইতিহাস। এই প্রথম যে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশীয় ব্যাডমিন্টনের কোনো আসরে সোনা জিতল। দক্ষিণ এশীয় গেমসে বরাবরই ব্র্রোঞ্জই বাংলাদেশের সীমানা। যে ভারতকে সব সময় মনে করা হয়েছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। আসামের গুয়াহাটিতে হওয়া এবারের দক্ষিণ এশীয় জুনিয়র ব্যাডমিন্টনে সেই ভারতীয় জুটিকে ফাইনালে হারিয়েই সোনা জিতেছে সিফাত- মোস্তাকিম জুটি। অথচ এই দলটাকে নিয়ে কোনো প্রস্তুতি ক্যাম্পই করেনি ফেডারেশন। মোস্তাকিম সেই সারওয়ার ব্যাডমিন্টন একাডেমিতেই অনুশীলন করেছে। সিফাত অনুশীলন করেছে চট্টগ্রামে। সিফাতের আপন বড় ভাই সাজ্জাদ উল্লাহ সাবেক জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। তাঁর হাত ধরেই তার খেলা শেখা। ২০১৯-এর জাতীয় জুনিয়র চ্যাম্পিয়নও সে। মোস্তাকিমের এর আগে বড় অর্জন জাতীয় আন্ত স্কুল শিরোপাই। তবে তাকে পিছু টেনে ধরেছিল দারিদ্র্য। সেই বাধা ডিঙিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার মুকুট পরা হার না মানা এক গল্প। মোস্তাকিম আর পেছনে ফিরতে চায় না, ‘ব্যাডমিন্টনের সরঞ্জামগুলোও এত দামি যে সহযোগিতা না পেলে আমার এই খেলাটা ধরে রাখাই সম্ভব না। কিন্তু আমি আরো অনেক দূর যেতে চাই। আশা করি এই সহযোগিতাটা আমি পাব। ’