March 29, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, August 26th, 2022, 9:28 pm

রিজার্ভ ধরে রাখতে আমদানি আরো সংকুচিত করা হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখতে সরকার আমদানি পরিধি আরো সংকুচিত করতে যাচ্ছে। ওই লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৩শ’রও বেশি পণ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বাড়ানোর একটি প্রস্তাব জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠিয়েছে। গত মে মাসে ১৩৫ পণ্যে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বাড়ানোর পর এবার নতুন করে আরো ৩৩০ ধরনের পণ্যের আমদানি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আর ওই প্রস্তাব কার্যকর হলে সোনা, স্মার্টফোন, গাড়ি, মদ-বিয়ার, সিগারেট, ঘড়ি, ফ্রিজ, রেফ্রিজারেটরসহ হোম অ্যাপ্লায়েন্স, প্লাস্টিক, আসবাব, সিরামিক, বিদেশি ফল ও মসলাজাতীয় পণ্যের দাম বাড়বে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে হু হু করে জ¦ালানি, ভোজ্য তেল, সার, খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। ফলে বাংলাদেশ আমদানি করে এমন ৯টি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আমদানিতে চলতি বছরে আগের বছরের তুলনায় অন্তত ৮ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় বাড়বে। আর রপ্তানির তুলনায় আমদানি ব্যয় বাড়তে থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়ে। চলতি হিসাবের ঘাটতিও বাড়তে থাকে। গত মার্চে ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চলতি হিসাবের ঘাটতি পরবর্তী ৩ মাসে বেড়ে জুনে ৩৩ বিলিয়ন ডলারে চলে যায়। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যয় সংকোচনের পথে হাঁটে সরকার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি ডলারের খরচ কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চলতি বছরের মে মাসে প্রথমে ৬৮ ও পরে ১৩৫টি পণ্যে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারি করে। পাশাপাশি আমদানি ব্যয় কমাতে অত্যাবশ্যকীয় নয় এমন পণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণ বা বন্ধ করার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে জুলাই মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে নির্দেশ দেয়। ওই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ট্যারিফ কমিশন যাচাই-বাছাই শেষে আরো ৩৩০ ধরনের পণ্যের আমদানি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনটি এনবিআরে পাঠানোর আগে পর্যালোচনা করা হয়েছে। যেসব পণ্য উৎপাদনমুখী শিল্পে ব্যবহৃত হয় না এবং দেশি শিল্পগুলো যেসব পণ্য উৎপাদনে মোটামুটি সক্ষমতা দেখাচ্ছে মূলত সেসব পণ্যের আমদানি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব এনবিআরে পাঠানো হয়েছে। আর প্রস্তাবিত পণ্যের আমদানি শুল্ক বাড়ালে শিল্পোৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়বে না।
সূত্র আরো জানায়, ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে স্বর্ণালংকার ও স্বর্ণের বার আমদানি নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ করা হয়েছে। বর্তমানে ব্যাগেজ রুলের আওতায় স্বর্ণের বার আমদানিতে ২ হাজার টাকা শুল্ককর দিতে হয়। তা বাড়িয়ে ৩ হাজার টাকা করার সুপারিশ করা হয়। তাছাড়া গাড়ি, স্মার্টফোন, ফ্রিজ, ডিপ ফ্রিজসহ যেসব ভোগ্যপণ্য সমাজের উচ্চবিত্তরা ভোগ করে, সেসব পণ্যের শুল্কহার বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। বন্ড সুবিধায় আনা আমদানি পণ্য যাতে খোলাবাজারে বিক্রি না করা হয় সেজন্য বন্ডেড ওয়্যারহাউসে পণ্য মজুদকাল কমিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বাড়ানোর পণ্যের তালিকায় রয়েছে সব ধরনের মদ-বিয়ার, সিগারেট, চুরুট বা তামাকজাতীয় পণ্য, আম, কমলা, ছোট কমলালেবু, তাজা-শুকনা আঙুর, তরমুজ, আপেল, নাশপাতি, পাম ফল, চেরি ফল, স্ট্রবেরি, কিউই ফল, কফি, গ্রিন টি, চা পাতা, গোলমরিচ, দারচিনি, লবঙ্গ, পাস্তা, মিষ্টি বিস্কুট, ওয়েফার, কেক, পাউরুটি, জ্যাম-জেলি, কমলা-আপেলের জুস, সব ধরনের ফলের রস, সয়া সস, টমেটো কেচাপ, স্যুপ, আইসক্রিম, পানি, লবণ, কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম, পাইনবাদাম, সুপারি, খেজুর, ডুমুর ফল আভোকাডো, প্লাস্টিকের প্লেট, গোসলের বাথটাব, রান্নাঘরের বেসিন, দরজা-জানালা, মহিলাদের হাতব্যাগ, স্যুটকেস, চামড়ার বেল্ট, প্লাস্টিকের বোর্ড, অগ্নিনির্বাপক দরজা, সিগারেট পেপার, সুতির প্যান্ট-শার্টের কাপড়, প্রিন্টেড কাপড়, কার্পেট, থ্রি-পিস, হাতে তৈরি লেস, ছাতা, প্লাস্টিকের ফুল, মারবেল-গ্রানাইট, ইমিটেশন জুয়েলারি, ছাদে ব্যবহৃত টাইলস, সিরামিকের সিংক, বাথরুম ফিটিংস, বাথরুমে ব্যবহত গ্লাসওয়্যার, টেবিলওয়্যার (কাপ-পিরিচ), স্যানিটারিওয়্যার, রেজার, ব্লেড, ইলেকট্রিকওয়্যার, সব ধরনের তালা-চাবি, সব ধরনের ফ্যান, এয়ারকন্ডিশনার, ডিপ ফ্রিজ, রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইলেকট্রিক ওভেন, হোম অ্যাপ্লায়েন্স সামগ্রী, স্মার্টফোন, স্পিকার, সব ধরনের ব্যক্তিগত গাড়ি, সাইকেল, দেয়ালঘড়ি, অ্যালার্ম ঘড়ি, গাড়ির সিট, কাঠের ফার্নিচার, ভিডিও গেম, তাস, টেবিল টেনিস ও টেনিস খেলার সরঞ্জাম, বল (গলফ, টেবিল টেনিস, টেনিস), মাছ ধরার বঁড়শি ইত্যাদি।
এদিকে এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপনকান্তি জানান, ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন থেকে প্রাপ্ত সুপারিশের ভিত্তিতে নির্দিষ্টসংখ্যক পণ্যের আমদানি শুল্ক বাড়ানোর একটি প্রস্তাব এনবিআরে পাঠানো হয়েছে।