April 24, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, December 31st, 2021, 8:02 pm

রুট-উইলিয়ামসনের সঙ্গে বর্ষসেরার লড়াইয়ে আফ্রিদি-রিজওয়ান

অনলাইন ডেস্ক :

ছেলেদের ক্রিকেটে আইসিসির ২০২১ সালের বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা পেয়েছেন পাকিস্তানের দুই জন। কিপার-ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ রিজওয়ানের সঙ্গে আছেন ফাস্ট বোলার শাহিন শাহ আফ্রিদি। স্যার গারফিল্ড সোবার্স ট্রফি জয়ের লড়াইয়ে তাদের সঙ্গী নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ও ইংল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়ক জো রুট। এই বছরের আইসিসি অ্যাওয়ার্ডসে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মনোনীতদের নাম ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বর্ষসেরা ক্রিকেটারের লড়াইয়ে থাকা চার জনের নাম প্রকাশ করে বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্তা সংস্থা। আগের তিন দিন বর্ষসেরা টেস্ট, টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে ক্রিকেটারের সংক্ষিপ্ত তালিকা দেওয়া হয়েছিল।
রিজওয়ান আছেন টি-টোয়েন্টির সংক্ষিপ্ত তালিকাতেও। টেস্টে আছেন রুট।
২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে পারফরম্যান্সের বিচারে আইসিসির অ্যাওয়ার্ডস প্যানেল এই তালিকা তৈরি করেছে।
জো রুট (ইংল্যান্ড): ১৮ ম্যাচে ৫৮.৩৭ গড়ে ১ হাজার ৮৫৫ রান, সেঞ্চুরি ৬টি
ব্যাট হাতে ইংলিশ টেস্ট অধিনায়কের ২০২১ সালটা কেটেছে স্বপ্নের মতো। লাল বলের ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের মেরুদ- হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। অনেক সময়ই একাই দাঁড়িয়ে গেছেন উইকেটে।
রুট বছরের শুরুটাই করেন গল টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২২৮ রানের ম্যারাথন ইনিংস দিয়ে। একই মাঠে পরের টেস্টে খেলেন ১৮৬ রানের আরেকটি দুর্দান্ত ইনিংস।
সেই ফর্ম তিনি ধরে রাখেন ভারত সফরেও। চেন্নাইয়ে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে করেন ডাবল সেঞ্চুরি। ভারতের পেস ও স্পিন আক্রমণ সামলে খেলেন ২১৮ রানের ইনিংস। ৩৭৭ বলে ১৯ চার ও ২ ছক্কায় গড়েছিলেন দারুণ ইনিংসটি, যা প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডকে এনে দিয়েছিল ৫৭৮ রানের বড় সংগ্রহ। পরে ম্যাচটি জিতে নেয় তারা ২২৭ রানে।
দেশের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও আলো ছড়ান তিনি। প্রথম তিন টেস্টেই করেন সেঞ্চুরি। কোভিডের প্রভাবে পঞ্চম টেস্ট স্থগিত হওয়ার আগে চার টেস্টে ৯৪ গড়ে ৫৬৪ রান করে সিরিজের সর্বোচ্চ স্কোরার তিনিই।
ওই সিরিজের পারফরম্যান্সে আইসিসি টেস্ট ব্যাটসম্যানদের র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রায় ছয় বছর পর শীর্ষে ফেরেন রুট। পরে যদিও তাকে ছাড়িয়ে যান অস্ট্রেলিয়ার মার্নাস লাবুশেন।
অস্ট্রেলিয়ায় চলতি অ্যাশেজ সিরিজে প্রথম তিন টেস্টে ভালো শুরু করেও ইনিংস অবশ্য বেশি বড় করতে পারেননি রুট। তিন টেস্ট শেষে তিন ফিফটিতে ২৫৩ রান করে সর্বোচ্চ স্কোরার যদিও তিনিই। তবে তিন ম্যাচেই হেরে গেছে তার দল।
টেস্টে এই বছর শেষ করেন তিনি ১ হাজার ৭০৮ রান নিয়ে। ইতিহাসের মাত্র তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে এক বছরে ১ হাজার ৭০০ রান তার। ২০০৬ সালে মোহাম্মদ ইউসুফের ১ হাজার ৭৮৮ ও ১৯৭৬ সালে ভিভ রিচার্ডসের ১ হাজার ৭১০ রান আছে রুটের ওপরে।
শাহিন শাহ আফ্রিদি (পাকিস্তান): ৩৬ ম্যাচে ২২.২০ গড়ে ৭৮ উইকেট। সেরা বোলিং ৫১ রানে ৬ উইকেট
পকিস্তানের দীর্ঘদেহী এই পেসার তিন সংস্করণে বছর জুড়েই আলো ছড়িয়েছেন। বিশেষ করে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে মনে রাখার মতো একটি বছর কেটেছে তার।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গতি আর স্কিল দিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেন আফ্রিদি। প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে শুরুতে দারুণ দুটি ডেলিভারিতে দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুলকে আউট করে তিনিই বেঁধে দেন সুর। যে কোনো সংস্করণের বিশ্বকাপে ১৩ বারের চেষ্টায় প্রথমবারের মতো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হারাতে পারে পাকিস্তান, যেখানে জয়ের নায়ক আফ্রিদি।
আসরে পাকিস্তানের সেমি-ফাইনালে খেলার পথে ছয় ম্যাচে তিনি উইকেট নেন ৭টি।
ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে এই বছরে ২১ ম্যাচে তার প্রাপ্তি ২৩ উইকেট। ইনিংসের শুরুতে ও ডেথ ওভারে গতি, সুইং আর ইয়র্কারে নাজেহাল করে ছেড়েছেন ব্যাটসম্যানদের।
টেস্ট ক্রিকেটে নিউ জিল্যান্ডে বছরের শুরুটা তেমন ভালো না হলেও দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দারুণ বোলিং করেন তিনি। বছরের বাকিটায় তা ধরে রাখেন জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও বাংলাদেশ সফরে। সব মিলিয়ে এই সময়ে ৯ টেস্টে ১৭.০৬ গড়ে উইকেট নেন ৪৭টি।
কেন উইলিয়ামসন (নিউ জিল্যান্ড): ১৬ ম্যাচে ৪৩.৩১ গড়ে ৬৯৩ রান, সেঞ্চুরি ১টি
২০২১ সালে উইলিয়ামসনকে শুধু রান করার দিক থেকেই বিচার করা যাবে না, তার অসাধারণ নেতৃত্ব দারুণ সব সাফল্য এনে দিয়েছে দলকে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নিউ জিল্যান্ড পায় তাদের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা সাফল্য। প্রথমবার আইসিসি টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর হওয়ার স্বাদও পায় তারা এই বছরেই।
বছরে প্রথম টেস্টেই কিউই অধিনায়ক ডাবল সেঞ্চুরি করেন পাকিস্তানের বিপক্ষে। সাউথ্যাম্পটনে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও ব্যাট হাতে তিনি রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ভারতের মানসম্পন্ন বোলিং আক্রমণের সামনে প্রথম ইনিংসে করেন ৪৯ রান। পরে ১৩৯ রান তাড়ায় দলের জয় নিয়ে ফেরেন তিনি অপরাজিত ৫২ রানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও তার ঠা-া মস্তিষ্কের কৌঁসুলি নেতৃত্ব নিউ জিল্যান্ডকে তোলে ফাইনালে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফাইনালে ব্যাটিং মাস্টারক্লাসের প্রদর্শনীতে ৪৩ বলে তিনি খেলেন ৮৫ রানের চমৎকার এক ইনিংস।
তার নান্দনিক ব্যাটিংয়ে অকার্যকর হয়ে পড়ে মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স, জশ হেইজেলউড, অ্যাডাম জ্যাম্পাদের নিয়ে গড়া অস্ট্রেলিয়ার বোলিং। ১০ চার ও ৩ ছক্কায় গড়া ছিল উইলিয়ামসনের ৮৫ রানের ইনিংসটি। স্পর্শ করেন তিনি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ড। যদিও শিরোপা জেতা হয়নি তার দলের।
মোহাম্মদ রিজওয়ান (পাকিস্তান): ৪৪ ম্যাচে ৫৬.৩২ গড়ে ১ হাজার ৯১৫ রান, সেঞ্চুরি ২টি এবং ডিসমিসাল ৫৬টি
২০ ওভারের সংস্করণে এই বছরটা রিজওয়ানের কেটেছে স্বপ্নের মতো। প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এক পঞ্জিকাবর্ষে এক হাজার রান করার কীর্তি গড়েন তিনি। বছর শেষ করেন ২৯ টি-টোয়েন্টিতে ১ হাজার ৩২৬ রান নিয়ে। গড় ৭৩.৬৬ আর স্ট্রাইক রেট ১৩৪.৮৯। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি উইকেটের পেছনেও ছিলেন দারুণ কার্যকর।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সেমি-ফাইনালে খেলায় রিজওয়ানের ছিল বড় অবদান। ৬ ম্যাচে ৭০.২৫ গড় ও ১২৭.৭২ স্ট্রাইক রেটে ২৮১ রান করে এই কিপার-ব্যাটসম্যান ছিলেন টুর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।
বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে জয়ে রিজওয়ান রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ১৫২ রানের লক্ষ্য রিজওয়ান ও অধিনায়ক বাবর আজমের উদ্বোধনী জুটিতেই পেরিয়ে যায় পাকিস্তান। জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ শামিদের আক্রমণ সামলে ৫৫ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৭৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন রিজওয়ান।
টেস্ট ক্রিকেটেও তিনি রাখেন উন্নতির ছাপ। সাদা পোশাকে ৯ ম্যাচে ৪৫.৫০ গড়ে করেন ৪৫৫ রান। তিন সংস্করণে বছর জুড়েই তিনি ছিলেন দারুণ ধারাবাহিক।
আইসিসির ভোটিং একাডেমি ও ক্রিকেট সমর্থকদের যৌথ ভোটে নির্বাচন করা হবে বর্ষসেরা ক্রিকেটার। ভোটিং একাডেমিতে আছেন জ্যেষ্ঠ ক্রীড়া সাংবাদিক ও ধারাভাষ্যকাররা। আগামী ২৪ জানুয়ারি ঘোষণা করা হবে বিজয়ীর নাম।