রূপপুরে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার জন্য রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু সংস্থা রোসাটমকে অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচোভ গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ আহ্বান জানান।
সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার এম নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
শেখ হাসিনা রোসাটমকে বলেন, চলমান প্রকল্প শেষ হলে রূপপুরে আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছে বর্তমান সরকার।
তিনি বলেন, নতুন দুটি ইউনিট স্থাপনের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে কারিগরি জরিপ করা প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিটের জ্বালানি বর্জ্য রাশিয়ায় ফেরত নেওয়ার সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন।
রোসাটমের মহাপরিচালক প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদিত পারমাণমিক জ্বালানি বর্জ্য রাশিয়ান ফেডারেশনকে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে রাশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেন এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব আনুষ্ঠানিকতা যথাসময়ে সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দেন।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পারমাণবিক জ্বালানি বর্জ্য রাশিয়ায় ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ইতোমধ্যে ঢাকা ও মস্কোর মধ্যে একটি আন্তঃরাষ্ট্রীয় চুক্তি সই হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় বিশেষ করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সহায়তার জন্য রাশিয়াকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল এবং তা বাস্তবায়িত হচ্ছে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় রাশিয়ার সহায়তা এবং পরবর্তীতে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে সহায়তার কথা স্মরণ করেন তিনি।
পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী।
রোসাটমের মহাপরিচালক রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে জানান।
তিনি বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ২০২৫ সালের মধ্যে উৎপাদনে যাবে এবং জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করবে।
তিনি আরও বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় নতুন দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ ইউনিট (ইউনিট-৩ ও ইউনিট-৪) নির্মাণের জন্য রুশ সরকারের কাছে প্রস্তাব করেন তিনি।
মহাপরিচালক বলেন, প্রথম দুটি ইউনিটের নির্মাণকাজ শেষ হলেই নতুন ইউনিট-৩ ও ইউনিট-৪ এর নির্মাণকাজ দ্রুত শুরু করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বিদ্যমান পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর সম্প্রসারণ আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে এবং কারিগরি ও পারমাণবিক নিরাপত্তার আলোকে অধিকতর লাভজনক ও যুক্তিসঙ্গত, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতও।
তিনি বলেন, প্রকল্পে বাংলাদেশ ও রাশিয়ানসহ প্রায় আড়াই হাজার কর্মী কাজ করছেন। একই সঙ্গে তারা দক্ষতাও অর্জন করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যান্য পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে বাংলাদেশের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে রোসাটমের মহাপরিচালকের প্রতি আহ্বান জানান।
রোসাটমের মহাপরিচালক বলেন, মহামারি ও নিষেধাজ্ঞার কারণে কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকলেও কাজ স্বাভাবিক গতিতে চলছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তিগতভাবেই প্রতিবন্ধকতা এড়ানো হয়েছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।
বর্তমানে রূপপুর প্রকল্প এলাকায় ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইউনিটের (১২০০ x ২ = ২৪০০ মেগাওয়াট) নির্মাণকাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
চলতি বছরের ডিসেম্বরে প্রথম ইউনিট চালু হবে। ইউনিট-১ ও ইউনিট-২ থেকে ২০২৫ ও ২০২৬ সালে বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে।
—–ইউএনবি
আরও পড়ুন
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
কমতে শুরু করেছে কুড়িগ্রামের নদীর পানি, ভাঙন আতঙ্কে মানুষ
দিনাজপুরে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় নিহত ২