November 15, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, October 29th, 2021, 8:45 pm

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ এগুলেও অনিশ্চিত সঞ্চালন লাইন নির্মাণ

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ এগুলেও এখনো সঞ্চালন লাইন নির্মাণ অনিশ্চিত। এখন পর্যন্ত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, জরিপ ও কিছু নক্সা তৈরি ছাড়া সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজে তেমন অগ্রগতি নেই। আর সঞ্চালন লাইন সময়মতো নির্মাণ না হলে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা যাবে না। সেক্ষেত্রে বৃহৎ ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে অলস বসিয়ে রাখতে হবে। আর তার বিপরীতে বিপুল পরিমাণ অর্থক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে গুনতে হবে। ফলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি আর্থিকভাবে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে। তবে সঞ্চালন লাইন তৈরির কাজে নিয়োজিত পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিজিসিবি) দাবি, পরিকল্পনা অনুযায়ীই কাজ হচ্ছে। যথাসময়েই শেষ হবে সঞ্চালন লাইন তৈরির কাজ। তবে ঠিক কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে তা প্রতিষ্ঠানটি এখনই তা আগাম বলতে নারাজ। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ইতিমধ্যে পাবনায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে পারমাণবিক চুল্লিপাত্র অর্থাৎ নিউক্লিয়ার রিএ্যাক্টর প্রেসার ভ্যাসেল বসানো হয়েছে। চলতি মাসের ১০ তারিখে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তার উদ্বোধন করেন। রাশিয়া থেকে দ্বিতীয় ইউনিটের রিএ্যাক্টরটি পাঠানোর প্রক্রিয়াও গত সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালে নির্ধারিত সময়েই উৎপাদন শুরু করতে পারবে। কিন্তু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ এগোলেও তার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
সূত্র জানায়, ভারতের লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) চুক্তির সহায়তায় সরকারি মালিকানাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। ১০ হাজার ৯৮ কোটি টাকার ওই প্রকল্পের ৮ হাজার ২১ কোটি টাকা দিচ্ছে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক। বাকিটা সরকার ও পিজিসিবির নিজস্ব অর্থায়নে সংস্থান হচ্ছে। বিগত ২০১৮ সালের এপ্রিে বিদ্যুৎ প্রকল্পের সঞ্চালন লাইন নির্মাণে গৃহীত প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পায়। আর প্রকল্পটি ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। একনেকে অনুমোদনের এক বছর পর ২০১৯ সালের মে মাসে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ নিয়ে চুক্তি সই হয়। ৪৬৪ কিলোমিটারের ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন প্রকল্পটি সহজে ও দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য ৪টি প্যাকেজে বিভক্ত করা হয়। সেগুলো হলো ১০২ কিলোমিটার রূপপুর-বগুড়া লাইন, ১৪৪ কিলোমিটার রূপপুর-গোপালগঞ্জ লাইন, ১৪৭ কিলোমিটার রূপপুর-ঢাকা লাইন ও ৫১ কিলোমিটার আমিনবাজার-কালিয়াকৈর লাইন। তার মধ্যে ১৩ কিলোমিটার নদী পারাপার। ওই নদী পারাপার লাইনের মধ্যে ৬ কিলোমিটার পদ্মা নদীতে ও ৭ কিলোমিটার যমুনা নদীতে স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। ২০১৮ সালের এপ্রিলে কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় ৩ বছর পর প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। ফলে এখনো সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়া সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজে তেমন একটা অগ্রগতি হয়নি। গত বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ। তারপর করোনার কারণে চলতি অর্থবছরেও অনেকটা স্থবিরতার মধ্যেই রয়েছে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ।
সূত্র আরো জানায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে আগামী ২০২৩ সালের মধ্যেই কাজ শেষ হবে। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ফুয়েল লোড করা হবে। তার আগে অর্থাৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে অবশ্যই গ্রিড লাইনের কাজ শেষ করতে হবে। যদি তা না করা যায় তাহলে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো রূপপুরকেও সঞ্চালন লাইনের জন্য বসিয়ে রাখতে হবে। যদি নির্ধারিত সময়ে গ্রিডলাইনের নির্মাণকাজ সম্ভব না হয় তাহলে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, সময় মতো সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ না হলে তা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। তার আগে চলতি বছরের মার্চে ১৬০০ মেগাওয়াটের পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন হলেও সঞ্চালন লাইন তৈরি না হওয়ার কারণে মাত্র ৬২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে একটি সঞ্চালন লাইন যাবে। আর সেতুর কাজের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সঞ্চালন লাইনের কাজেরও অগ্রগতি হবে। সেজন্যই এখন সিঙ্গেল লাইন দিয়ে জাতীয় গ্রিডে ৬২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত যোগ হচ্ছে। রূপপুরের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতিতে সঞ্চালন লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। মূলত একনেকে অনুমোদনের পর ঠিকাদার ও বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতেই অনেক সময় চলে গেছে। তারপরও আশা করা যাচ্ছে নির্দিষ্ট সময়েই সঞ্চালন লাইন তৈরি হবে।
অন্যদিকে রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বর্তমানে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি বিদেশী নাগরিক কাজ করছে। অধিকাংশই রাশিয়ার। তাছাড়া ওই প্রকল্পে ইউক্রেন, উজবেকিস্তান ও ভারতের কিছু দক্ষ প্রকৌশলী রয়েছে। একই সাথে জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞরাও খ-কালীন পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে। আর দেশীয় বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন কমিটির সদস্য হিসেবে নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দেশের ১ হাজার ৪২৪ জনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ধাপে ধাপে তাদের রাশিয়া পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে সঞ্চালন লাইন নির্মাণে করোনার পরে কাজে আবারো গতি ফিরেছে দাবি করে পিজিসিবি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া জানান, প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদী পারাপার লাইন প্যাকেজের দরপত্র মূল্যায়ন করে ঠিকাদারদের তালিকা এক্সিম ব্যাংকের কাছে পাঠানো হয়েছে। ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের ঋণ হওয়ায় সেখানে বেশকিছু শর্ত রয়েছে। বিশেষত লোকবল নিয়োগ, মালামাল ক্রয়, পরামর্শক নিয়োগসহ আরো কিছু কাজ তাদের তত্ত্বাবধানে হবে। শর্তে ৭৫ শতাংশ মালামাল ভারত থেকে আমদানি করার কথা বলা হয়েছে। বাকি ২৫ শতাংশ স্থানীয়ভাবে এবং অন্যান্য দেশ থেকে সংগ্রহ করতে হবে। সব কিছু মিলিয়ে একটু সময়তো লাগবেই। তবে সঞ্চালন লাইন নির্মাণে গতি এসেছে। প্রকল্প এলাকায় পুরোদমে কাজ চলছে। ইতিমধ্যে টাওয়ার নির্মাণে ডিজাইন, রুট সার্ভে, অবকাঠামো নির্মাণসহ নানা কাজ শেষ হয়েছে। এটি একটি বড় প্রকল্প। প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন, দরপত্র আহ্বান, ভারতীয় কোম্পানির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম করতে একটু দেরি হলেও আগামী বছরের আগামী বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে তৈরি করে দেয়ার কথা। বাঘাবাড়ি থেকে রূপপুর লাইনের কাজ চলমান। রিভার ক্রসিংয়ের টেন্ডারটাতে একটু সময়ক্ষেপণ হয়েছে। তবে ২০২২ এর জানুয়ারির মধ্যে পদ্মার ওপর লাইন তৈরির কাজ হয়ে যাবে। সেতু কর্তৃপক্ষও চেষ্টা করছে। রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজের অগ্রগতি বিষয়টি মাথায় রেখেই সমন্বয় করে এগিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসার আগেই বেশকিছু লাইনের কাজ শেষ হয়ে যাবে। আশা করা যায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।