September 19, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, August 25th, 2024, 9:32 pm

রেমিট্যান্স বাড়ায় কাটছে শুরু করছে রিজার্ভ খরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চলতি আগস্ট মাসের প্রথম দিকে দেশে রেমিট্যান্স আসা থমকে গেলেও পরে তা বেড়েছে বহুগুণ। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চিতি বা রিজার্ভ পরিস্থিতি ফের ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকে সঞ্চিত রিজার্ভের পরিমাণও কিছুটা বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্যানুযায়ী, চলতি মাসের ২০ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। তবে আইএমএফের মানদ- বিপিএম-৬ মডেল অনুযায়ী রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া সরকারের যাবতীয় চলতি দায় ছাড়া ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ উন্নীত হয়েছে ১৫ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলারে।

এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণেও সক্ষম হলো বাংলাদেশ। সংস্থাটির শর্ত ছিল আগামী সেপ্টেম্বরে রিজার্ভ ১৪ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারে ধরে রাখতে হবে। তার এক মাস আগেই সেই লক্ষ্যে পৌঁছাল দেশ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ উদ্যোগের পালে হাওয়া দিয়েছে দেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন। অনেক দিন থেকেই দেশে রেমিট্যান্স আসার প্রবাহ কম ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীরা মুখ ফিরিয়ে থাকা বাংলাদেশে বেশি করে রেমিট্যান্স পাঠাতে শুরু করেন।

ড. ইউনূস সরকারের ভাবমূর্তিও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটা ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। বিভিন্ন দেশ থেকে ঋণ, অনুদান ও এফডিআই আসার পথ তৈরি হয়েছে। এসবের ইতিবাচক একটা প্রভাব বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে পড়ছে। এর ফলে যেখানে জুলাই মাসের হিসাবে চলতি দেনা বাদ দিয়ে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ ছিল ১৩ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার, সেখানে আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহান্তেই তা গিয়ে দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলারে।

এদিকে গত জুলাই মাসে রেমিট্যান্সে খরা দেখা যায়। জুলাইয়ে ১৯০ কোটি ডলার বা ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা বিগত ১০ মাসের মধ্যে ছিল সর্বনিম্ন। এতে জুলাই শেষে দেশের গ্রোস রিজার্ভ দাঁড়ায় ২৫ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার, যা বিপিএম-৬ পদ্ধতির হিসাবে ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে দায় বাবদ প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার বাদ দিলে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ১৪ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে ১৯০ কোটি ৯০ লাখ ডলার প্রবাসী আয় দেশে আসে। তার আগের মাস জুনে এসেছিল ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার। সে হিসাবে এক মাসে রেমিট্যান্স কম ৬৩ কোটি ২৬ লাখ ডলার। তবে তখন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলেছিল, রেমিট্যান্সের হিসাব এক মাসে তুলনা করলে হয় না, বিশেষ কারণে একমাসে কমে গেলে, পরিবেশ স্বাভাবিক হলে তা আবার বাড়তে থাকে।

সূত্র জানায়, দেশে কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট বন্ধ থাকাসহ নানা কারণে জুলাইয়ের শেষে ও আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে রেমিট্যান্স কমে যায়। আন্দোলনে সহিংসতায় বহু হতাহতের প্রতিবাদে দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠানোর বিষয়ে ক্যাম্পেইন করেন অনেক প্রবাসী। সব মিলিয়ে রেমিট্যান্স কমে যায়। এর আগে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম বাড়তে থাকে, যার প্রভাবে বৈশ্বিক ডলারের দামও চড়তে থাকে।

অন্যদিকে চাহিদা মেটাতে আমদানি বৃদ্ধি এবং পরিস্থিতি সামলাতে ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমানোর ফলে দেশে ডলারের সরবরাহ সংকট আরও গভীর হতে থাকে। দামও বাড়তে থাকে লাগামহীন। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক নানা ধাপ পার করে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ডলারকে বাজারভিত্তিক ব্যবস্থায় নিয়ে আসে। এতে স্থানীয় বাজারে ডলার নিয়ে সৃষ্ট শঙ্কা দূর হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ডলার-সংকট নিরসনে পণ্য আমদানি-রপ্তানির আড়ালে পাচার ঠেকাতে পণ্যের মূল্য যাচাই, ঋণপত্র খোলায় মার্জিন বৃদ্ধিসহ কড়াকড়ি শর্ত আরোপ করা হয়েছে।

রেমিট্যান্স প্রক্রিয়া আরও সহজ, হুন্ডি প্রতিরোধ এবং রপ্তানি পণ্যের সঠিক হিসাব নির্ণয়ের মতো সমন্বিত পদক্ষেপে ডলার সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। এতে রিজার্ভ ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এদিকে রিজার্ভের পাশাপাশি বেড়েছে ডলারের দামও। বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে তারল্য বাড়ানোর উদ্যোগ হিসেবে আন্তব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যান্ড ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা হয়েছে। নতুন এই সিদ্ধান্তের ফলে ডলারের দাম ১১৮ টাকা থেকে বেড়ে এখন ১২০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। এর আগের ক্রলিং পেগ ব্যবস্থায় ডলারের মধ্যবর্তীর দাম ছিল ১১৭ টাকা, যা এক টাকা বেশি অর্থাৎ ১১৮ টাকায় লেনদেন হতো।