নিজস্ব প্রতিবেদক:
রেলওয়ের উন্নয়নে দীর্ঘদিন পর বিভিন্ন দেশ থেকে অত্যাধুনিক রেলইঞ্জিন সংগ্রহ করা হয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আরো ইঞ্জিন আমদানি করা হবে। কিন্তু অত্যাধুনিক ভারি এসব ইঞ্জিনের ভার বহনে বিদ্যমান রেললাইনের পুরনো ব্রিজগুলো সক্ষম নয়। তার মধ্যে পূর্বাঞ্চল রেলেরই ওই রকম ৬টি সেতু রয়েছে। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ওসব সেতুতে নতুন ইঞ্জিন চলাচলের বিষয়টি না ভেবে নতুন অত্যাধুনিক ইঞ্জিনআমদানি করায় এখন বিপাকে পড়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ফলে বাধ্য হয়েই ওসব ইঞ্জিন ব্যবহারের জন্য সেতুগুলোতে সংস্কারকাজের পরিকল্পনা করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে গত বছর ১০টি নতুন লোকোমোটিভ আমদানি করা হয়। ইঞ্জিনগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহার না হয়েই ওই রেলওয়ের ওয়ার্কশপে পড়ে ছিল। বর্তমানে ওসব ইঞ্জিন দিয়ে নির্দিষ্ট কিছু রুটে সার্ভিস পরিচালনা করা হচ্ছে। তাছাড়া আরো ২০টি ইঞ্জিন আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যার মধ্যে ১০টি দেশে এসে পৌঁছেছে। আর আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আরো ১০টি দেশে চলে আসবে। আগের সবচেয়ে ভারি ইঞ্জিনগুলোর গড় ওজন প্রতি এক্সেলে ১১ দশমিক ৯৬ লোডের হিসাবে (প্রতিটি ইঞ্জিনে ৬ এক্সেল) ৭০ থেকে ৭২ টন। বর্তমানে আমদানি হওয়া ও আমদানির প্রক্রিয়ায় থাকা ইঞ্জিনগুলোর গড় ওজন ১০০ টনেরও বেশি (প্রতি এক্সেলে ১৫ থেকে ১৬ টন)। সর্বশেষ প্রযুক্তির ইঞ্জিন হওয়ায় ওসব ইঞ্জিন এক্সেল লোডের হিসাব থেকেও ভারি হয়। ওই কারণে আমদানি হওয়া নতুন ইঞ্জিনগুলো প্রায় শতবর্ষী সেতুগুলো দিয়ে পারাপারের সময় দুর্ঘটনা ঝুঁকি অনেক বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাতে রেলের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি হতাহতের আশঙ্কাও প্রবল হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
সূত্র জানায়, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ওসব রেলসেতু দিয়ে বর্তমানে ১১ দশমিক ৯৬ টন এক্সেল লোডবিশিষ্ট লোকোমোটিভ/কোচ নিয়ন্ত্রিত গতিসীমায় চলাচল করে। কিন্তু বর্তমানে আমদানি হওয়া লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিনগুলো ১৫ থেকে ১৬ টন এক্সেল লোডের। বিদ্যমান পুরনো ইঞ্জিনের তুলনায় এক্সেল প্রতি লোডের পরিমাণ ৩ থেকে ৪ টন বেশি হওয়ায় সেগুলোর সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে সেতুগুলো আপদকালের বিবেচনায় মেরামত বা লোড বাড়ানোর কার্যক্রম নিতে যাচ্ছে রেলওয়ে। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে অনেক পুরোনো রেলের ৭টি সেতু হলো কালুরঘাট রেলওয়ে সেতু, ভৈরব পুরাতন সেতু, কুশিয়ারা সেতু, ঘোড়াশাল (আপ) সেতু, শম্ভুগঞ্জ সেতু, ঘুমঘাট সেতু ও ছাতক-সিলেট রুটের ২৮ নং সেতু। ওসব জীর্ণ সেতু দিয়ে নতুন আমদানি হওয়া ও আমদানিতব্য ভারি ইঞ্জিন চলাচল করতে পারবে কিনা সে বিষয়ে গত জুনে বুয়েটকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিতে মহাপরিচালকের অনুমোদন চেয়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগ। ওই সেতুগুলোকে দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামত কিংবা নতুন সেতু নির্মাণ সম্ভব হবে বলেই বেশি এক্সেল লোডের ইঞ্জিন চলাচলের কারিগরি উপযুক্ততা যাচাইয়ে বুয়েটের বিআরটিসি বিভাগকে সরাসরি নিয়োগ পদ্ধতিতে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিতে প্রস্তাব করা হয়। সম্প্রতি প্রকৌশল বিভাগের ওই প্রস্তা অনুমোদন করে রেলপথ বিভাগ। তাছাড়া বিশেষ প্রকল্প হিসেবে দোহাজারী-কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের জন্য কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতুর স্থলে নতুন সেতু নির্মাণের আগে ট্রেন চলাচল নিরাপদ করতেও বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিচ্ছে রেলওয়েঅ। ওই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ অক্টোবর বুয়েটের তিন সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল কালুরঘাট সেতু সরেজমিনে পরিদর্শনও করেছে।
এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী সবুক্তগীন জানান, রেলে দীর্ঘদিন ধরে ইঞ্জিন সংকট ছিল। বর্তমানে রেলওয়ে সংকট দূর করতে ইঞ্জিন আমদানি শুরু করেছে। সুদূরপ্রসারী চিন্তার অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে ভৈরব সেতুসহ বেশ কয়েকটি পুরনো সেতুর স্থলে নতুন সেতু নির্মাণও করা হয়েছে। কিন্তু কয়েকটি সেতু নির্মাণ পরিকল্পনাধীন থাকায় নতুন আমদানি হওয়া ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চলাচলে পুরনো সেতুগুলোতে আপাতত সংস্কারকাজ করা হবে। সংস্কারের মাধ্যমে ওসব সেতুর এক্সেল লোড বাড়ানো গেলে নতুন ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চালাতে সমস্যা হবে না।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম