April 20, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, December 18th, 2022, 8:19 pm

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মিয়ানমারের মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হচ্ছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মিয়ানমারের মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা অনেক আগ থেকেই তা লক্ষ্য করে আসছি। সেটাকে নিরুৎসাহিত করতে আমরা একটা কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তারা শিগগিরই একটা সমাধান বের করবেন। রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমারের মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার থেকে বিরত থাকেন এবং আমাদের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেন, সেই ব্যবস্থা করবেন।

রবিবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে সাংবাদিকদের তিনি এমন তথ্য দিয়েছেন।

আজ ‘বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইন শৃঙ্খলা’ সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির ষষ্ঠ সভা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন আসাদুজ্জামান খাঁন।

সভা শেষে তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে আমাদের নেটওয়ার্কে ঢুকতে পারে, তার ব্যবস্থা করা নিয়েও বিস্তারিত আলাপ হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী ও টহল রাস্তা নির্মাণ প্রায় শেষ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চতুর্দিকে আমরা কাঁটাতারের বেষ্টনী, টহল রাস্তা ও ওয়াচটাওয়ার নির্মাণে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা এরইমধ্যে প্রকল্পের কাজ ৯৫ শতাংশ শেষ করে দিয়েছে। কোনো কোনো জায়গায় ৯৯ শতাংশ কাজও শেষ হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, ‘তারা আমাদের এপিবিএনের কাছে পর্যায়ক্রমে তা বুঝিয়ে দিচ্ছেন। শুধু নিয়ন্ত্রণ কক্ষগুলো তৈরি বাকি রয়েছে। বাকি সব কাজ শেষ হয়েছে।’

তিনি জানান, রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও বিকাশ নিয়ে আমরা কাজ করছি। তাদের দক্ষতা বাড়ানো, বিশেষ করে তারা নিজ দেশে ফিরে গিয়ে কিংবা তাদের জীবিকা অর্জনে যা যা করা দরকার, তা নিয়েও বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জন্মনিয়ন্ত্রণ, পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বিভিন্ন এনজিও, সরকার, মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সবাই কাজ করেছে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আজ আমরা যে রিপোর্ট দেখতে পেলাম, সে অনুসারে আমরা ৬৫ শতাংশ রোহিঙ্গাকে জন্ম নিয়ন্ত্রণের আওতায় নিয়ে আসতে পেরেছি। এটা আরও ভালো জায়গায় অর্থাৎ আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও বাইরে মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান অব্যাহত থাকবে। সেখানে কিছু কিছু অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। তা নজরদারিতে আনা হচ্ছে। আমাদের এপিবিএনও কাজ করছে।’

তিনি জানান, ভাসানচরে একটা দীর্ঘ দাবি ছিল যে সেখানে স্বাস্থ্যসেবা বাড়াতে হবে। এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। আমাদের ভাসানচরে ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা কমিউনিটি গেছে। এনজিও, পুলিশও সেখানে গেছে। সেখানে একটি ভালো হাসপাতাল হওয়া দরকার। আজ বৈঠক তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

হাসপাতালটি যাতে আরও সমৃদ্ধ করা হয় ও শিগগিরই তা কার্যকারিতায় নিয়ে আসতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যাতে কাজ করে খেতে পারে, সেজন্য সেখানে বিভিন্ন এনজিও সক্রিয় রয়েছে। তাদের আমরা আরও সহযোগিতা করবো। তারা (রোহিঙ্গারা) যাতে সেখানে কৃষিপণ্য উৎপাদন করতে পারে, সে জন্য ছোটো ছোটো লেক করে দেয়া হয়েছে। সেখানে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক কাজ করছে।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ব্যবহারিকভাবে মৎস্য ও কৃষি উৎপাদনে দক্ষ করে তুলতে ব্র্যাক কাজ করছে বলেও জানান মন্ত্রী।

মাঝিদের (রোহিঙ্গা নেতা) কয়েকজন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সামনে যাতে আর এ ধরনের ঘটনা না-ঘটে, সে জন্য সেনাবাহিনী থেকে প্রশাসন সবাইকে আরও বেশি সতর্ক হতে বলা হয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে যত দ্রুত সম্ভব প্রত্যাবাসনে আমরা কাজ করছি। ক্যাম্পের পাশে থাকা বিভিন্ন বাহিনী ও গোয়েন্দাসংস্থাকে ভালোভাবে কাজ করতে নির্দেশনা দেয়া হবে। যাতে অপরাধ হ্রাসের পাশাপাশি মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা দ্বিপক্ষীয়, ত্রিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় আলোচনা করেছি। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বন্ধু দেশগুলোও কাজ করছে। আমাদের আশা, শিগগিরই এর সমাধান হবে।

যুক্তরাষ্ট্র কী পরিমাণ রোহিঙ্গা বাংলাদেশ থেকে নিতে চায় জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নিজেদের ভিসা দিয়েই বিভিন্ন দেশ রোহিঙ্গাদের নিচ্ছে। বছর তিনেক আগে আমার সঙ্গে জাতিসংঘে নেদারল্যান্ডসের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয়েছিল। তিনি তখন রোহিঙ্গা নেয়ার জন্য উৎসাহ প্রকাশ করেছিলেন। আজ জানতে পারলাম তিনি মাত্র সাতজন নিয়েছেন। আর অস্ট্রেলিয়া নিয়েছে ২৪। এটা সংখ্যায় খুবই কম। এ নিয়ে কথা বলে সবার মনোযোগ টানতে চাই না।

তবে আমেরিকা কতজন রোহিঙ্গা নেবে, কীভাবে নেবে; তা নিয়ে বাংলাদেশকে বিস্তারিত জানাবেন বলে জানান মন্ত্রী।

—-ইউএনবি