March 28, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, September 30th, 2021, 9:19 pm

রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন প্রত্যক্ষদর্শীরা

রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ

অনলাইন ডেস্ক :

রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ নিহত হওয়ার পর কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সন্ত্রাসীরা পাঁচ রাউন্ড গুলি করলে তিন রাউন্ড গুলি সরাসরি তার বুকে লাগে। এতে মুহিবুল্লাহর মৃত্যু হয়। প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের স্বজনরা জানান, এশার নামাজের পর ক্যাম্পে নিজ অফিসে বসা ছিলেন মুহিবুল্লাহ। এ সময় অজ্ঞাতনামারা তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবিবুল্লাহ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, উখিয়া কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়া ক্যাম্পে এশার নামাজ শেষ করে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) অফিসে অবস্থানকালে একটি বন্দুকধারী দল আমার ভাইয়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ওই অফিসে কর্মরত অন্যান্যের মারধর করে ছেড়ে দিলেও ভাইয়ের বুকে গুলি চালায় মাস্টার আবদুর রহিম নামে এক সন্ত্রাসী। বন্দুকধারীদের এ দলে মাস্টার আবদুর রহিম, মুর্শিদ, লালুসহ ২০ থেকে ২৫ জন ছিল। রোহিঙ্গাদের যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য আমার ভাই এগিয়ে আসতেন। তাদের অধিকার আদায়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছিলেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ঘাতকদের শাস্তির দাবি জানান তিনি। উল্লেখ্য, গত বুধবার রাত ৮টার দিকে কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পে গুলি করে হত্যা করা হয় এই আলোচিত রোহিঙ্গা নেতাকে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে মুহিবুল্লাহর লাশ কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে আনার পর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। এই হত্যাকা-ের সঙ্গে রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠন আরসাকে দায়ী করেছে স্বজনরা। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ইতোপূর্বে মুহিবুল্লাহ নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। তাছাড়া প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করতে বাংলাদেশ সরকারসহ এনজিও, আইএনজিও এবং বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে আসছিলেন এই নেতা। তার এই ভূমিকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় রোহিঙ্গা ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আরসাসহ অন্যান্য গ্রুপগুলো। এর ধারাবাহিকতায় তাকে খুন করা হয়েছে বলে দাবি স্বজনদের।
যেভাবে রোহিঙ্গা নেতা হন মুহিবুল্লাহ: জানা যায়, মুহিবুল্লাহ মিয়ানমারের আরকান মংডু এলাকার মৌলভী ফজল আহম্মদের ছেলে। ১৯৯২ সালে মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আসেন তিনি। এরপর থেকেই উখিয়ার ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায় বসবাস করতেন। একপর্যায়ে ১৫ জন সদস্য নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানরাইটস’ (এআরএসপিএইচ)। জনশ্রুতি রয়েছে এ সংগঠনের ব্যানারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা করছিলেন তিনি। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গার ঢল নামার পর থেকে পরিচিতি বাড়ে মুহিবুল্লাহর। এরপরে তিনি আলোচনায় আসেন ২০১৯ সালে। সে বছর জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ১৭ দেশের যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২৭ প্রতিনিধি সাক্ষাৎ করেন সেখানে যোগ দেন মুহিবুল্লাহ। একই বছর রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসার দুই বছর পূর্তিতে আয়োজন করেন মহাসমাবেশের। মুহিবুল্লাহর মূল উত্থান শুরু হয় যখন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যুক্ত হয় জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)। রোহিঙ্গাদের বক্তব্য জানতে মুহিবুল্লাহর সংগঠন ‘এআরএসপিএইচ’ এর সঙ্গে যোগাযোগ করে ‘ইউএনএইচসিআর’। ইংরেজি ভাষা এবং রোহিঙ্গাদের ব্যবহৃত ভাষা জানায় দুই পক্ষের যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে ওঠেন তিনি। ধীরে ধীরে প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন বিদেশিদের। জানা যায়, ২০১৮ সালের পর জাতিসংঘ মহাসচিবসহ যত বিদেশি প্রতিনিধি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গেছেন তাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই রোহিঙ্গা প্রতিনিধি হিসেবে মুহিবুল্লাহ ও তার সঙ্গীদের দেখা করানো হয়েছে। এই মুহিবুল্লাহই মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিবকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে মুহিবুল্লাহকে একাধিকবার আটক করে র‌্যাব। কিন্তু আবার প্রশাসনের নির্দেশে ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে। জানা যায়, চলতি বছরের আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে খবর পাওয়া যায় যে ২২ আগস্ট প্রত্যাবাসনের দিন ঠিক করেছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। এ খবর পাওয়ার পরই মুহিবুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে এনজিওগুলো। ধীরে ধীরে মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের প্রধান পাঁচ নেতার একজন হয়ে ওঠেন। রোহিঙ্গাদের একটি সূত্রের দাবি, ক্যাম্পগুলোতে মুহিবুল্লাহ বিরোধী অন্য একটি সশস্ত্র গ্রুপও সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু মুহিবুল্লাহর সঙ্গে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সুসম্পর্ক থাকায় আলোচনায় ছিল তার সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস। আর এ কারণে সাধারণ রোহিঙ্গারাও মুহিবুল্লাহর ভক্ত ছিলেন। জানা যায়, মুহিবুল্লাহ সবসময় বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক প্রত্যাবাসন দাবি করে এসেছেন। এ কারণে মিয়ানমার সরকারেরও কালো তালিকায় ছিলেন তিনি।