November 22, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, July 13th, 2021, 7:45 pm

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘে বিনা ভোটে প্রস্তাব গৃহীত

ফাইল ছবি

অনলাইন ডেস্ক :

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর নিপীড়নের বিচার এবং তাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের উপর গুরুত্ব দিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। মানবাধিকার পরিষদে বাংলাদেশ মিশন গত সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রস্তাব পাসের খবর জানিয়ে বলেছে, ২০১৭ সালে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণের পর এই প্রথম কোনো প্রস্তাব বিনা ভোটে জাতিসংঘে গৃহীত হল। এই প্রস্তাবটি পাসের ক্ষেত্রে জেনেভার বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার বিষয়টি উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সেই বিবেচনায় এবারের প্রস্তাবটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় মাইলফলক। মিয়ানমারে গণহত্যার স্বীকার হয়ে ২০১৭ সালের পর সাত লাখের মতো রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তার আগ থেকে ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ছিল। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিব্ধ হলেও কয়েক বছরেও প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি। রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের উপর চাপ বাড়াতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্যে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে এই প্রস্তাব পাসের খবর এল। জেনেভায় মানবাধিকার পরিষদের ৪৭তম অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংক্রান্ত প্রস্তাবটি পাস হয়। বাংলাদেশের উদ্যোগে ইসলামিক সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) সব রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ‘রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক প্রস্তাবটি উপস্থাপিত হয়েছিল। বাংলাদেশ মিশন জানায়, মিয়ানমারের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে শুরু থেকেই প্রস্তাবের বিভিন্ন বিষয়ে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে প্রবল মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। অবশেষে, নিবিড় ও সুদীর্ঘ আপস-আলোচনা শেষে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হলো। প্রস্তাবটিতে বিতাড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। এছাড়া, তাদের মিয়ানমারে ফেরত যাওয়া পর্যন্ত এ গুরুভার বহনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মানবিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয়। পাস হওয়া প্রস্তাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যৌন অপরাধসহ সব প্রকার নির্যাতন, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থার আওতায় আনা ও তদন্ত প্রক্রিয়া জোরদার করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং আন্তর্জাতিক আদালতে চলমান বিচার প্রক্রিয়াকেও সমর্থন জানানো হয়। প্রস্তাবে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারকে মিয়ানমার বিষয়ক ‘নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তথ্যানুসন্ধানী মিশন’র সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতির উপর মানবাধিকার পরিষদ এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রতিবেদন উপস্থাপনের অনুরোধ জানানো হয়। অধিবেশনে প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় জেনেভা মিশনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মানবিক বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্মম নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের সীমানা উন্মুক্ত করে দেন। তবে অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, গত চার বছরেও মিয়ানমারের অসহযোগিতা ও অনীহার কারণে অদ্যাবধি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব হয়নি। তিনি জাতিসংঘের আলোচ্যসূচিতে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান ও রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার সুরক্ষার বিষয়টি সক্রিয় আলোচনায় রাখার আহ্বান জানান। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বিশ্ব সম্প্রদায়ের রোহিঙ্গাদের প্রতি মনোযোগ হারানো উচিত হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে পূর্ণ নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে নিজেদের আবাসস্থলে ফেরত পাঠানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দৃশ্যমান ও কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান মোস্তাফিজুর।