জেলা প্রতিনিধি, পটুয়াখালী (কলাপাড়া) :
সাগরকন্যা কুয়াকাটার শুটকির রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রয়েছে এর দারুণ কদর। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চলে বেচা কেনা। প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করা হয় বলে এখানকার শুটকি মাছের সুখ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। তবে লইট্টা, ছোট চিংড়ি মাছের চাহিদা বেশি। এ ছাড়াও রুপচাদা, চ্যাপা, ভেটকি, ছুরি, লবস্টার, পাবদা, পোমা, কোরাল, ভোল, ইলিশসহ নানা প্রজাতীর সামুদ্রিক মাছ শুটকি করে বিক্রি করেছেন জেলেরা। কিন্তু এসব উৎপাদনে লাগেনি আধুনিকতার ছোঁয়া। নেই নির্দিষ্ট প্রক্রিয়াজাত করণের স্থান। সাগর পাড়েই প্রাকৃতিক উপায়ে শুকানো হচ্ছে সামুদ্রীক মাছ। এ শুটকি শিল্পের উন্নয়নে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিলে এই শিল্প জাতীয় অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। আর এখাকার উৎপাদিত শুটকি দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রফতানি হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
শুটকি ব্যবসায়িদের সূত্রে জানা গেছে, কুয়াকাটায় ছোট বড় মিলিয়ে অর্ধশতাধিক দোকান রয়েছে। অন্তত: ৫০ প্রজাতির শুটকি উৎপাদন করলেও লইট্টা এবং চিংড়ির চাহিদা সব থেকে বেশি। প্রতিটি দোকানে প্রতিদিন গড়ে ৪০ হাজার টাকা বেচা কেনা হয়। তবে শুক্র ও শনিবার পর্যটকের বেশি চাপ থাকে। তাই এসব দিনে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা বিক্রি হয়ে থাকে। তাদের ভাষ্যনুযায়ি পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকেই ধারাবাহিক ভাবে পর্যটকের আগমন বৃদ্ধি পাওয়ায় অর্থনৈতিক গতিশীলতার সঙ্গে তরান্বীত হয়ে উঠেছে শুটকির বাজার।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, শীত মৌসুমের প্রথম দিকে শুরু হয় শুটকি প্রক্রিয়াজাত করণের মহাকর্মযজ্ঞ। এতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সামান ভাবে এ কাজে যুক্ত রয়েছেন। কেউ কুড়িয়ে মাছ একত্র করছে। কেউবা প্যাকেট করছে। এরপর এসব শুঁটকি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানোর জন্য ব্যাস্ত রয়েছে শ্রমিকরা। কোন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই শুধুমাত্র কাঁচা মাছে লবণ মেখে সৈকতে বাঁশের মাচা বানিয়ে রোদে শুকিয়ে তৈরি করছেন শুটকি। কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট থেকে কিছুদূর পশ্চিমে গেলেই সৈকতে দেখা মিলবে সারি সারি শুটকির মাঁচা। বছরে ৪ থেকে ৫ মাস এখানেই শুটকি উৎপাদন করা হয় বলে জেলেরা জানান। তবে তাদের দাবী নির্দিষ্ট একটি শুটকি প্রস্তুত পল্লীর।
স্থানীয়রা জানান, এখানকার শুটকি সনাতন পদ্ধতিতেই উৎপাদন করা হয়। করোনার কারণে অনেক শুটকি ব্যবসায়ী ক্ষতির মুখে পরেছিল। সম্প্রতি পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় পর্যটকদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এ ব্যবসা ঘুড়ে দাঁড়াতে শুরু করেছে। আর বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রীক মাছের শুটকি কিনতে পেরে খুশি পর্যটকরা।
পর্যটক রাহায়েল আহমেদ জানান, এখানের শুটকির নাকি আলাদা স্বাদ ! তাই পরিবারের জন্য বেশ কিছু শুটকি কিনেছি। অপর এক পর্যটক মুরাদ বলেন, বন্ধুদের সাথে কুয়াকাটায় ভ্রমনে এসে বিভিন্ন পর্যটন স্পট ঘুড়ে দেখলাম। ভালই লেগেছে। যাবার সময় ৮ কেজি বিভিন্ন মাছের শুটকি কিনেছি। এরমধ্যে লইট্টা ও চিংড়ি বেশি রয়েছে।
শুঁটকি পল্লীর ব্যবসায়ী হানিফ মিয়া বলেন, শুটকি উৎপাদনে স্থায়ী পল্লী নেই। তবুও প্রায় ৩০ বছর ধরে চলছে এ ব্যবসা। অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পেশাটি মৌসুমি ব্যবসানির্ভর। প্রতি বছরই স্থান পরিবর্তন করতে হচ্ছে। তবে নির্দিষ্ট একটি স্থান থাকলে আমরা ভালোভাবে ব্যবসা করতে পারতাম। একই এলাকার আর এক ব্যবসায়ী নজির হাওলাদার জানান, পর্যটকরা সৈকত দেখার পাশাপাশি আত্মীয় স্বজনের জন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন শুটকি। প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়ায় বিদেশেও রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা। তবে তাদের নির্দিষ্ট স্থান থাকলে বর্ষা মৌসুমেও শুঁটকির ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারতেন বলে তিনি জানান।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, এখানকার মানসম্মত শুটকি উৎপাদনে মৎস্য বিভাগ কাজ করছে। তবে স্থায়ী শুঁটকি পল্লী নির্মাণের লক্ষ্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি