November 19, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, July 12th, 2023, 3:27 pm

শাহজাদপুরে জনতা ব্যাংকের একাউন্ট থেকে কোটি টাকা লোপাটের প্রধান হোতা রঞ্জু গ্রেফতার

জেলা প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ (শাহজাদপুর):

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে জনতা ব্যাংক শাখার গ্রাহকদের একাউন্ট থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি টাকা লোপাটের প্রধান হোতা ব্যাংকের পিয়ন আওলাদ হোসেন রঞ্জুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১১ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১ টায় শাহজাদপুর থানার অফিসার ইনচার্জের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন শাহজাদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, জনতা ব্যাংকের ম্যানেজার জেহাদুল ইসলাম বাদি হয়ে রঞ্জুর বিরুদ্ধে থানায় মামলায় দায়ের করেন। এর প্রেক্ষিতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল সোমবার ভোরে শাহজাদপুর থানা পুলিশের একটি চৌকস দল গোপালগঞ্জ জেলার মিয়াপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। তিনি আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পিয়ন রঞ্জু ব্যাংকের গ্রাহকদের একাউন্ট থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৫ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছেন বলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে গ্রেফতারকৃত পিয়ন রঞ্জুকে শাহজাদপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

জানা গেছে, পিয়ন রঞ্জু ব্যাংকের গ্রাহকদের টাকা জমা, একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন ও নতুন একাউন্ট খোলার সহায়তা করার সুযোগ নিয়ে জালিয়াতির মাধমে গ্রাহকদের একাউন্ট থেকে কোটি টাকা লোপাট করেছে। বিষয়টি জানাজানি হলে পিয়ন রঞ্জু ঈদুল আজহার ছুটির পর থেকে গা-,ঢাকা দেয়।

এদিকে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা অভিযোগ করেন, একাউন্ট থেকে কোটি টাকা লোপাটের ঘটনার সাথে ব্যাংকের অন্যান্য কর্মকর্তা জড়িত না থাকলে পিয়ন রঞ্জুর পক্ষে এতো টাকা আত্মসাত করা কোন অবস্থাতেই সম্ভব নয়। তারা অবিলম্বে তদন্ত পূর্বক এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানান। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা তাদের একাউন্ট থেকে খোয়া যাওয়া সমুদয় টাকা ফেরতের দাবি জানান।

এদিকে ব্যাংকের গ্রাহকদের কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় গঠিত ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান জনতা ব্যাংকের জেলা আঞ্চলিক অফিসের ডিজিএম জাহিদুল আলম জানান, ঘটনার সাথে ব্যাংকের কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যাংকের অর্ধশত গ্রাহকের একাউন্ট থেকে অর্ধ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে। অন্যদিকে ব্যাংকের ম্যানেজার জেহাদুল ইসলাম জানান, পিয়ন আওলাদ হোসেন রঞ্জু দৈনন্দিন ব্যাংকিং কার্যক্রমের অগোচরে ব্যাংকের সিল ও স্বাক্ষর জাল করে ভূয়া ভাউচারের মাধ্যমে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাত করেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ২৫ জন গ্রাহকের ৪৫ লক্ষ টাকা আত্মসাতের তথ্য পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন তদন্ত কমিটি কাজ করছেন। কতজন গ্রাহকের কি পরিমান টাকা আত্মসাত করা হয়েছে তা তদন্তে বেড়িয়ে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

উল্লেখ্য যে, ২০০৩ সালে জনতা ব্যাংক শাহজাদপুর শাখাতে সে পিওন কাম পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে ( No Work, No Pay) যোগদান করে। ২০০৭ সালে সে তার কাজের পাশাপাশি ডেচপাশের কাজ শুরু করে এবং ব্যাংকের প্রবেশ দ্বারে একটি ডেস্ক স্থাপন করে। সে তার কাজের পাশাপাশি যখন কেউ একাউন্ট খুলতে আসত তখন তার ফরম পুরণ করে দিত।
সে ২০২২ সালের শুরুর দিকে গ্রাহকদের কাছ থেকে জালিয়াতি করে টাকা নেয়ার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সে তার পরিচিত লোকদের টার্গেট করে এবং তাদের একাউন্ট খুলে দেয়। তার গ্রাহকরা তাকে বিশ্বাস করতেন এবং তার পরিচিত টার্গেট একাউন্টের কেউ টাকা জমা ও উত্তোলন করতে আসলে তার মাধ্যমেই করত। কোন গ্রাহক টাকা তুলতে আসলে তারা যে টাকার পরিমান লিখত তার বাম পাশে গোপনে সে একটি ডিজিট বসায়ে বেশি টাকা তুলত। আবার মাঝে মাঝে সে চেক নিজের কাছে রেখে তার কাছে থাকা টাকা দিয়ে দিত। পরে সুবিধামত সময়ে চেক দিয়ে বেশি টাকা উত্তোলন করত। এতদিন বিষয়টি লোক চক্ষুর আড়ালে থাকলেও গত ০৬/০৭/২৩ তারিখে জনতা ব্যাংক, শাহজাদপুর শাখার একজন গ্রাহক মো: আবু হানিফ উক্ত ব্যাংকে তার একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলনের জন্য আসেন এবং চেক জমা দেয়ার পরে তিনি জানতে পারেন যে, তার একাউন্টে কোন টাকা নাই। তিনি আরও জানান যে, ০২/০৫/২৩ তারিখে তিনি অত্র ব্যাংকে কর্মরত পিওন আওলাদ হোসেন রঞ্জুর মাধ্যমে ৫,০০,০০০/- (পাচ লক্ষ টাকা মাত্র) জমা প্রদান করেছেন। এরপরে তিনি উক্ত ব্যাংকের ম্যানেজারকে বিষয়টি অবহিত করেন। ম্যানেজার জানতে পারেন যে, আওলাদ হোসেন রঞ্জু ঈদের ছুটির পর থেকে ব্যাংকে অনুপস্থিত আছে এবং উক্ত তারিখে হানিফ এর কোন জমা ভাউচার নেই। রঞ্জুর অনুপস্তিতির বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রাহকরা ব্যাংকে আসতে শুরু করেন। উক্ত ঘটনায় ম্যানেজার শাহজাদপুর থানাতে ০৬- ০৭- ২০২৩ তারিখে সাধারন ডায়েরি করেন যাহার নং ৩২৭।