November 16, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, October 20th, 2022, 9:28 pm

শিক্ষার মান ধরে রাখায় বড় বাধা অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠান

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজধানীতে অনেক এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজে ভালো মানের শিক্ষক ও শিক্ষার অনূকূল পরিবেশ না থাকায় শিক্ষার্থী ভর্তি হয় না। অথচ কৌশলে সেসব প্রতিষ্ঠান অনুমোদন করিয়ে নেয়া হয়েছে। তারা এমপিওভুক্ত হওয়ায় যেসব সুবিধা পাচ্ছে, তা টিকিয়ে রাখতে অনুমোদনহীন স্কুলগুলো থেকে শিক্ষার্থী ধার করছে। অন্য স্কুলের শিক্ষার্থী দিয়ে তারা শর্তপূরণ করে বছরের পর বছর স্কুল চালাচ্ছে। অধীনস্থ এসব স্কুলগুলোকে অনুমোদনপ্রাপ্তরা ফিডিং স্কুল নামে অভিহিত করে থাকে। অনুমোদনহীন এসব স্কুল যুগ যুগ ধরে চললেও যেন দেখার কেউ নেই। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তাও জানেন না, তাদের এলাকায় কতটি এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিনিয়ত এমন ভুঁইফোঁড় স্কুলের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরের আনাচে-কানাচে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সরকারি অনুমোদন ছাড়াই অধিকাংশ স্কুল-কলেজ চলছে পাড়া-মহল্লার অলিগলি ও প্রধান সড়কের পাশের ভবনে। প্লে-গ্রুপ থেকে উচ্চমাধ্যমিকস্তর (এইচএসসি) পর্যন্ত পাঠদান করা হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানে। স্বল্প জায়গায় গড়ে ওঠা এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঢাকা শহরের অলিগলি, পাড়া-মহল্লায়, প্রধান সড়কের ওপর বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধিকাংশেরই নেই কোনো অনুমোদন। শিক্ষার পরিবেশ, ভালো মানের শিক্ষক ছাড়াই চলছে এসব প্রতিষ্ঠান। এলাকার গৃহিণী ও শিক্ষার্থীদের দিয়ে চলছে পাঠদান। নামমাত্র বেতনে তারা সেখানে শিক্ষকতা করেন। এর বাইরে শিক্ষার্থীদের কোচিং করিয়ে বাড়তি আয় করেন। অনুমোদনহীন এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অন্ধকার রুমে ক্লাস নেওয়া হয়। দিনেও সূর্যের আলো পৌঁছায় না এসব শ্রেণিকক্ষে। তার ওপর স্কুল কর্তৃপক্ষ বাড়তি আয় করতে শিক্ষার্থীদের নিম্নমানের প্রকাশনীর মানহীন বই কিনতে বাধ্য করে। এসব পাঠ্যবইয়ের কোনো গুরুত্ব না থাকলেও জোর করে সেগুলো পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। যুগের পর যুগ অনুমোদনহীন এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চললেও যেন তদারকির কেউ নেই। তবে নিজেদের অনুমোদন না থাকায় এসব স্কুল-কলেজগুলো অন্য কোনো অনুমোদিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করিয়ে পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেয়। যেসব এলাকায় এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে দেখা যায় বেশিরভাগই ওই এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কে গড়ে ওঠে, ফলে প্রতিদিন স্কুল শুরুর আগে ও ছুটির পর সেখানে তীব্র যানজট তৈরি হয়। ফলে স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় প্রতিদিন নানা সমস্যায় পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। ঝুঁকি নিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করতে হয় তাদের। অন্যদিকে রাজধানীর অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অলিগলির ফ্ল্যাট বাসা বা নিচতলায় অন্ধকারবদ্ধ স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে। বহুতল এসব ভবনের অনেকগুলোর ছাদের রেলিং পর্যন্ত নেই। খেলার স্থান না থাকায় শিক্ষার্থীরা সেসব ভবনের ছাদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খেলাধুলা করছে। এতে ঘটছে হতাহতের ঘটনা। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, শহরের আনাচে-কানাচে অননুমোদিত অনেক স্কুল গড়ে উঠেছে। এসব স্কুলের পাশে বসবাস করা অনেকেই তাদের সন্তানদের সেখানে পড়াচ্ছেন। অনুমোদন না থাকলেও এসব স্কুল হরহামেশা চলছে, কোনোভাবেই বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। বদ্ধ এবং সংকীর্ণ স্থানে গড়ে ওঠা এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা নেই। শুধু বাণিজ্যিক কারণে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। অধ্যাপক শাহেদুল খবির আরও বলেন, এদের রোধ করতে আইন না থাকায় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে শিক্ষা আইনে এসব স্কুলের বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। অনুমোদন ছাড়া কোনো ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যাবে না। এ আইন বাস্তবায়ন হলে অনুমোদন ছাড়া কেউ আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারবে না। বর্তমানে যেসব প্রতিষ্ঠান আছে সেগুলোকে তাদের পার্শ্ববর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হবে বলে তিনি জানান। সরকারি নজরদারি না থাকায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শাহজাহানের। তিনি বলেন, সারাদেশে আগে হাতে গোনা ৫০টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল খুঁজে পাওয়া যেতো না। এখন দেশে ৬০ হাজারের বেশি এমন স্কুল গড়ে উঠেছে। সেখানে দুই কোটি শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। কিন্ডারগার্টেন মূলত প্রাথমিক শিক্ষার জন্য। অথচ সেখানে অবৈধভাবে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হচ্ছে। এ ছাড়া শিক্ষার মান ধরে রাখতে এসব নামে মাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বড় ধরণের বাধা বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। তাঁরা ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা এসব মানহীন প্রতিষ্ঠান বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে মত দিয়েছেন।