নিজস্ব প্রতিবেদক:
শিক্ষা উপকরণের মূল্য বৃদ্ধিতে বিপাকে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। হু হু করে বাড়ছে শিক্ষার বিভিন্ন সামগ্রীর দামও। এমনকি কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, টিউশনসহ অন্যান্য খরচও বাড়ানো হয়েছে। গত কয়েক মাসে খাতা, কাগজ, কলম, পেন্সিলসহ অন্যান্য সামগ্রীর দাম অনেক বেড়েছে। আর ওই ব্যয় মেটাতে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের নাভিশ্বাস উঠছে। শিক্ষাবিদদের মতে, সাধারণ জিনিসপত্রের মতো শিক্ষা উপকরণসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় বৃদ্ধি কাম্য হতে পারে না। শিক্ষা উপকরণের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ভয়ানক অপরাধ হিসাবে গণ্য হওয়া উচিত। ওই ধরনের কর্মের জন্য অসাধু ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় আনার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। মূলত সরকারি সংস্থাগুলো সক্রিয় হলেই শিক্ষা উপকরণের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। শিক্ষার্থী এবং শিক্ষা খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, শিক্ষা উপকরণ ছোট-বড় সব খাতার দাম বেড়েছে। ওই বৃদ্ধির হার ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত। ছোট রুল টানা যে খাতার দাম আগে ছিল ১৫ টাকা, এখন ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২৫ টাকার খাতা এখন ৪০ টাকা বিক্রি হয়। ৮০ টাকার বড় খাতা ১২০-১৩০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। ৪৬ টাকার পেন্সিল বক্স বিক্রি হয় ৮০ টাকা। ৮০ টাকার জ্যামিতি বক্স ১৩০ টাকা। ২৬০ টাকার সাদা কাগজ এখন বিক্রি হয় ৪৮০ টাকা রিম। তাছাড়া বিভিন্ন প্র্যাকটিকাল খাতার দাম প্রতি পিসে ৭০-৮০ টাকা বেড়েছে। বেড়েছে কলম, পেন্সিল, স্কুলের পোশাক, স্কুলব্যাগ, পেন্সিল ব্যাগ, স্কেল, রাবার, শার্পনার, মার্কার, ফাইল, ক্যালকুলেটর, ক্লিপবোর্ড ইত্যাদির দাম। অথচ ওসব শিক্ষাসামগ্রী ছাত্রছাত্রীদের জন্য অপরিহার্য। ওসব খাতের ব্যয় কমানোর কোনো সুযোগ নেই। ফলে জীবন নির্বাহের বাড়তি খরচের পাশাপাশি শিক্ষায় বর্ধিত ব্যয়ের চাপে দিশেহারা অভিভাবকরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে অনেক অভিভাবক টিউটরের পেছনে খরচ কমিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। বাধ্য হয়েই তাদের ওই ব্যয় কমাতে হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বইও দাম বৃদ্ধির তালিকায় রয়েছে। ফান্ডামেন্টাল ফিজিক্স (ওয়াকার) নিউজপ্রিন্ট পেপার বইয়ে ১০০ টাকা বেড়েছে। ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স নিউজপ্রিন্ট বইয়ের দাম প্রতি পিসে ১০০ টাকা বেড়েছে। ইনট্রোডাকশন টু নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বেড়েছে ১০০ টাকা। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির দামও আগের চেয়ে বেশি। আর্টিফিশিয়াল হাড়ের দাম ৩০০ টাকা বেড়েছে। নতুন কঙ্কাল ২ বছর আগে ২৫-২৬ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও এখন ৩-৪ হাজার টাকা বেড়েছে। আর পুরোনো কংকালের দাম ৩৪ হাজার থেকে বেড়ে ৩৬ হাজার টাকা হয়েছে। ব্লাড প্রেশার মাপার মেশিনের দাম প্রতিটিতে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেড়েছে। স্টেথোস্কোপের দাম ২০০ টাকা বেড়েছে। বায়োলজি বক্স ৫০ টাকা করে বেড়েছে। এভাবে কাঁচি, টেপ, টর্চলাইট, হাতুড়ির দাম বেড়েছে। বেড়েছে মেডিকেল শিক্ষার সব ধরনের বইয়ের দাম। পাশাপাশি প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে পড়াশোনার ব্যয়ও অনেক বেড়েছে। ২০১২ সালে যেখানে ভর্তি খরচ ছিল ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা, এখন তা বেড়ে ১৮-২০ লাখ টাকা হয়েছে। আর টিউশন ফি বেড়েছে বহুগুণ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খরচও বেড়েছে। আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএসই ও ট্রিপল-ই বিভাগে কোর্স ফি বিগত ৫ বছরে ২০ শতাংশ বেড়েছে। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রেডিট প্রতি চার্জ ২০১৯ সালে যেখানে সাড়ে ৫ হাজার টাকা ছিল, বর্তমানে তা সাড়ে ৬ হাজার টাকা। তাছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও ব্যয় বহুগুণ বেড়েছে। একইভাবে স্কুলগুলোতেও চার্জ বেড়েছে।
এদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদদের অভিমত, শিক্ষা উপকরণের দাম বৃদ্ধিতে অল্প আয়ের পরিবারের সন্তানদের পড়াশোনার খরচ বহন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকার মেয়েদের মতো ছেলেদের জন্যও উপবৃত্তির ব্যবস্থা করতে পারে। পাশাপাশি শিক্ষা উপকরণে আরোপিত সব ধরনের ভ্যাট-ট্যাক্স এক বছরের জন্য প্রত্যাহার করা হলে দাম অনেকটাই কমে আসবে।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম