May 2, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, March 7th, 2024, 8:19 pm

শিল্পী সমিতির নির্বাচন : বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন ইলিয়াস কাঞ্চন

অনলাইন ডেস্ক :

নব্বই দশকের জনপ্রিয় নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। চার দশকের বেশি সময় অভিনয়জীবন তার। ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত অসংখ্য হিতে সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই অভিনেতা; যা আজও সিনেমাপ্রেমীদের মনে দাগ কেটে আছে। অভিনয়ের পাশাপাশি সমাজসেবামূলক কর্মকান্ডের অংশ হিসেবে গড়ে তোলেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলন। এ ছাড়া দুই বছর আগে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। তবে এবার আর নির্বাচন করবেন না বলে জানিয়েছেন এই অভিনেতা।

বলা যায়, অনেকটা কষ্ট নিয়েই নির্বাচন থেকে সরে এসেছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। শুধু তাই নয়, রীতিমতো শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্যও করেছেন এই অভিনেতা। দিন কয়েক আগেই আয়োজিত হয়ে গেল শিল্পী সমিতির বনভোজন। সেখানে অন্য তারকাদের সঙ্গে হাজির হয়েছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চনও। তবে বনভোজনে উপস্থিত হয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। সম্প্রতি দেশের একটি গণমাধ্যমে শিল্পী সমিতির নির্বাচনের নানান বিষয় নিয়ে কথা বলেন ইলিয়াস কাঞ্চন। এ সময় অভিনেতা জানান, দুঃখ নিয়েই সংগঠন থেকে বিদায় নিচ্ছেন তিনি।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, সত্যি বলতে, আমি তো আসলে শিল্পী সমিতির নির্বাচন করতেই চাইনি। অনেক অনুরোধের পর আমি সিদ্ধান্ত নিই। সাধারণত আমি যে দায়িত্ব নিই, সেই দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের চেষ্টা করি। এর আগে শিল্পী সমিতির সেক্রেটারি ছিলাম আমি। এই সমিতি প্রতিষ্ঠার পর প্রথম সেক্রেটারি ছিলেন আহমেদ শরীফ, এরপর আমি ছিলাম। সেসময় নির্বাচন করার জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে আমাদেরকে। যেটা মোটেও ভালো লাগেনি। আসলে একটা ভালো অবস্থানে থাকার পরও শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে পরে আর আগ্রহ দেখাইনি।

ওয়াদা করলে সেটা মানুষ রাখে নাকি রাখে না— এটা কিন্তু কম-বেশি সবারই জানা। এরপরও সবার বাড়িতে গিয়ে ভোট চাওয়ার পদ্ধতিটাও ভালো লাগেনি। অভিনেতা বলেন, সবসময়ই ভেবেছি যারা শিল্পী সমিতির সদস্য, তারা যেন অবশ্যই পেশাদার ও প্রকৃত শিল্পী হন। কিন্তু এবার শিল্পী সমিতি চালাতে গিয়ে দেখলাম, এখানে মোটেও সেটা নেই। জুনিয়র শিল্পী, নাচের শিল্পী, কেউ আবার ফাইটারদেরও নিজস্ব সংগঠন আছে। এদের সবারই শিল্পী পরিচয়টা রয়েছে দ্বিতীয়তে। অথচ তারা সবাই শিল্পী সমিতির পূর্ণ সদস্য হয়ে বসে আছেন। অথচ এই শিল্পী সমিতিতে আমাদের সময়ে নিয়ম, ১০ গুরুত্বপূর্ণ ছবির চরিত্রে অভিনয় করলেই সদস্যপদ পাওয়া যাবে। কিন্তু গত কয়েক বছরে এসব নিয়ম পুরোপুরি পাল্টে গেছে।

নিয়ম না মেনেই অনেকে সদস্য হয়েছেন। শুধু ভোটের কারণে এমনটা ঘটেছে। তাই এসব নিয়ে সব সময় জটিলতা লেগেই থাকত। তিনি আরও বলেন, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে ছয় শতাধিক শিল্পী! এটা ভাবা যায়! তা-ও প্রকৃত শিল্পী! সক্রিয় শিল্পী। যাদের নিজস্ব সংগঠন আছে তারা আমাদের সমিতিতে সহযোগী হিসেবে থাকতে পারেন। কিন্তু ভোটাধিকার পাবেন না। অথচ দীর্ঘ সময় ধরে এমন অনিয়ম চলছে। প্রকৃত শিল্পী কম থাকায় শিল্পী সমিতিতে ক্ষমতাধর হয়ে উঠেছেন নাচ ও ফাইটার সমিতির লোকজন। প্রকৃত শিল্পীর চেয়ে ওদের সংখ্যাটাই বেশি।

এবার নির্বাচন করলাম, এর আগে নির্বাচন কমিশনার ছিল। তখনো আমার কানে এসেছে, শিল্পী সমিতির নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি হয়। এই নির্বাচনেও টাকার ছড়াছড়ি হয়েছে, আমি তো নিজের চোখে দেখলাম। আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছিল যে, শিল্পী সমিতির নির্বাচনে কেন টাকা দিয়ে ভোট কিনতে হবে। আসলে এটা সমিতির পদ-পদবি ভিন্ন উপায়ে আয়-রোজগার করার সিস্টেম। তাই নির্বাচনে জিততে প্রকৃত শিল্পীদের বাইরে সবাই মরিয়া হয়ে ওঠেন।

শিল্পী সমতির নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি হয়— উল্লেখ করে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, এটা তো হওয়া উচিত নয়। টাকার ছড়াছড়ি হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে, নাম উল্লেখ না করেই বলছি, কিছু মানুষ এখানে আছেন যাদের টাকা আছে। এমনকি প্রকৃত শিল্পীও হতে পারেননি। কিন্তু নির্বাচন করতে চান। কারণ শিল্পী সমিতির সাইনবোর্ডটা থাকলে তাদের সুবিধা হয়। সমিতির সদস্য হওয়ার কারণে, ভালো ভালো জায়গায় যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। বসে আড্ডা দিতে পারছেন। অথচ চলচ্চিত্রে তাদের কোনো ভ্যালু নেই। তাদের ভালো কোনো সিনেমা নেই।

এমনকি কেউ তো আবার ঠিকমতো অভিনয়টাও জানেন না। শুধু কৌশল খাটিয়ে, টাকাপয়সা খরচ করে শিল্পী সমিতিতে সদস্যপদ হয়ে সব জায়গায় যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন। সত্যি বলতে, প্রকৃত শিল্পী বাইরে এদের সংখ্যা অধিক। তারা নির্বাচনে যেসব প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তাদের সবার কাছ থেকে টাকা নেন। এক রকম প্রতারণাও করেন। যারা প্রকৃত শিল্পী, শুধু তাদের ভোটাধিকার থাকলে এই ধরনের সমস্যা হতো না। এবারের পিকনিকে অদ্ভুত একটা ঘটনা ঘটেছে, মেয়েরা মেয়েরা দ্বন্দ্ব সংঘাতে জড়িয়েছেন।

এসব ঘটনা যেখানে ঘটে, সেখানে তো সভাপতি হিসেবে পরিচয় দিতে আমি রাজি নই। অনেকে আবার আমাকে নিয়েও অনেক নেটিবাচক মন্তব্য করেছেন। যেটা বলার কথা নয়। এসব সমিতির এখনকার অবস্থার কারণে সম্ভব হয়েছে। অভিনেতা বলেন, বেশ অনেক দিন থেকে শুরু হয়েছে। কিন্তু এসব মোটেই কাম্য নয়।

আমি দেখলাম, এমন অনেকে টাকা নিয়েছেন, যাদের টাকার প্রয়োজন নেই। ড্যান্সের এমন একজনকে ডেকে বললাম— তুমি যে টাকাটা নিতে আসছ, এটা তো তোমার দরকারও নেই। তোমার আয়ও আছে। কাজও করছ। না নিলেও পারো। তুমি চাইলে শিল্পী সমিতিতে তহবিল সংগ্রহে ভূমিকা রাখতে পারো। যাদের সত্যিকারের সহযোগিতা যার দরকার, তাদের কাজে আসবে। এ কথা বলার পর ড্যান্সের সেই ছেলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছে। কারণ, সোশ্যাল মিডিয়া তো এখন হাতের মুঠোয়। এখানে কোনো রেস্ট্রিকশন নেই। আমার সম্পর্কে বিভিন্ন কিছু লিখেছে! যদিও আমি এসবের প্রতিবাদও করিনি।