November 17, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, January 11th, 2022, 8:43 pm

শীতে কাবু রংপুর, ঠান্ডাজনিত রোগে ১১ শিশুর মৃত্যু

ফাইল ছবি

অনলাইন ডেস্ক :

পৌষের শেষ দিকে এসে রংপুরে বাড়ছে শীত। ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ার তীব্র শীতে নাজেহাল এ অঞ্চলের বাসিন্দারা। শীতের কারণে নিউমোনিয়া, ঠান্ডাজনিত ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর-সর্দিসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বেড়েছে। আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিশু। গত পাঁচ দিনে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তাদের সবার বয়স ১ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে। হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছে কমপক্ষে ৫ শতাধিক শিশু। গত সোমবার রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের বহির্বিভাগে ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে হাসপাতালে আসছেন স্বজনরা। তবে হাসপাতালে বহির্বিভাগে চিকিৎসক মাত্র দুজন। এতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন দুই চিকিৎসক। দুই মেডিক্যাল কর্মকর্তা ছাড়া রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রার, আবাসিক চিকিৎসক ও সহকারী অধ্যাপক পদের কোনও চিকিৎসককে সেখানে দেখা যায়নি। হাসপাতালের বহির্বিভাগে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকা স্বজনদের অভিযোগ, এখানে নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসক। রোগী দেখার নামে ‘ভানুমতির খেলা’ চলছে। লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী থেকে সাত মাসের সন্তানকে নিয়ে এসেছেন মা আফরোজা বেগম। তিনি জানান, এক সপ্তাহ ধরে তার মেয়ের জ¦র কমছে না। স্থানীয় চিকিৎসকদের পরামর্শে ওষুধ সেবন করিয়েও কাজ হয়নি। তারা বলছেন, নিউমোনিয়া হয়েছে। সকাল ৭টায় হাসপাতালে এসেছেন। বহির্বিভাগে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু তার সামনে অন্তত ১০০ জনের সিরিয়াল। তিনি আরও জানান, দুজন চিকিৎসকের একজন রোগী দেখছেন, অন্যজন ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। এখানে অন্তত ৫ থেকে ৭ জন চিকিৎসককে দায়িত্ব দিলে ভালো হতো। তাহলে দুর্ভোগে পড়তে হতো না। একই কথা বললেন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ থেকে আসা মমতাজ বেগম। তিনি জানান, তার পাঁচ মাস বয়সী ছেলের কাশি কমছে না। কাশতে কাশতে বমি করছে। তার ওপর প্রচ- জ¦র। প্রথমে জরুরি বিভাগে নিলেও তারা বহির্বিভাগে দেখাতে বললেন। বহির্বিভাগ থেকে লিখে দিলে ভর্তি নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। এক বছরের ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন রংপুরের তারাগঞ্জের আখতার হোসেন ও তার স্ত্রী। ছেলের নিউমোনিয়া হয়েছে বলে জানালেন। তাদের দাবি, যারা রোগী দেখছেন, তারা কেউই শিশু বিশেষজ্ঞ নন। মেডিক্যাল অফিসার দিয়ে রোগী দেখালে ভালো কিছু হবে না। সন্তানকে প্রাইভেট চেম্বারে বড় ডাক্তার দেখাবেন বলে জানান তারা। তবে প্রাইভেট চেম্বারে চিকিৎসকরা বেশি ফি নেন বলেও অভিযোগ করেন এ দম্পতি। রংপুর নগরীর লালবাগ বস্তি থেকে শিশু সন্তানকে নিয়ে এসেছেন আল্পনা বেগম। তার সন্তানের ডায়রিয়া হয়েছে। এভাবেই অন্তত ৫০ জন রোগীর স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা কেউ নিউমোনিয়া অথবা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত সন্তানকে নিয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসেছেন। এ বিষয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা পরিচালকের অনুমতি ছাড়া সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলবেন না বলে জানান। তবে তারা শীতের সময় বাচ্চাদের পর্যাপ্ত গরম পোশাক পরানোর বিষয়ে জোর দেন। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. রেজাউল করিম জানান, প্রচ- শীতের কারণে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বাড়ছে। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা শিশুদের মধ্যে যাদের অবস্থা সংকটাপন্ন মনে হচ্ছে, তাদের ভর্তি করা হচ্ছে। গত পাঁচ দিনে শিশু ওয়ার্ডে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ১১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে এমনিতেই প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ জন মারা যায়। এ ক্ষেত্রে শিশুরাও মারা যেতে পারে। তবে রোগীর স্বজনরা যথাসময়ে হাসপাতালে নিয়ে এলে অনেককে সুস্থ করা সম্ভব হতো।’