অনলাইন ডেস্ক :
টানা ৯ মাস ধরে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এরইমধ্যে অধিকৃত খেরসন থেকে পিছু হটেছে রুশ সেনারা। ইউক্রেনের জন্য খেরসন পুনরুদ্ধার একটি বর্জন হলেও আসন্ন শীতকাল দেশটির জন্য বিপদের কারণ হতে পারে বলে মনে করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ডব্লিউএইচও বলছে, এবারের শীতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির তীব্র সংকটে হুমকির মুখে পড়তে পারে লাখ লাখ ইউক্রেনীয় নাগরিকের জীবন।ডব্লিউএইচও আরও বলছে, নিরাপত্তা ও উষ্ণতার খোঁজে আসন্ন শীতে অন্তত ৩০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতে পারেন। সোমবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে এক সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএইচওর ইউরোপীয় অঞ্চলের পরিচালক ড. হ্যান্স হেনরি পি ক্লুজ বলেন, রাশিয়ার আক্রমণে ইউক্রেনের প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা ধ্বংস হয়ে গেছে।‘বর্তমানে দেশটির অন্তত এক কোটি মানুষ বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছেন। এই শীতে এসব অসহায় মানুষের একমাত্র লক্ষ্য হবে যেভাবেই হোক বেঁচে থাকা।’শুধু তাই নয়, ডব্লিউএইচওর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের স্বাস্থ্য বা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অন্তত ৭০৩টি হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।ধারণা করা হচ্ছে, আসন্ন শীতে ইউক্রেনের কিছুকিছু এলাকার তাপমাত্রা মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যেতে পারে। এমন অবস্থায় দেশটির বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চরম বিপাকে পড়বেন ইউক্রেনীয়রা।ড. হ্যান্স হেনরি পি ক্লুজ বলছেন, গত কয়েক সপ্তাহে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ ও মূল শহরগুলোর জ্বালানি, স্বাস্থ্য ও বেসামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালায় রাশিয়া। এর ফলে ইউক্রেনের স্বাস্থ্যব্যবস্থা এখন সবচেয়ে বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মৌলিক চাহিদা মেটাতে প্রয়োজনীয় জ্বালানি, পানি ও বিদ্যুতের তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে।‘ইউক্রেনের অধিকাংশ হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডগুলোতে ইনকিউবেটর প্রয়োজন। ব্লাড ব্যাংকের জন্য রেফ্রিজারেটর ও নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে ভেন্টিলেটর প্রয়োজন। আর এগুলো চালু রাখতে দরকার নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি বা বিদ্যুৎ সরবরাহ।’ডা. ক্লুজ জানান, দোনেতস্কের ১৭ হাজার এইচআইভি রোগীর জন্য তিনি খুবই চিন্তিত। কারণ, খুব শিগগির এসব রোগীকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ওষুধের সংকট দেখা দিতে পারে।ডব্লিউএইচওর আঞ্চলিক এ পরিচালক বলছেন, দোনেতস্কের বেশিরভাগ অংশ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকায় ওইসব অঞ্চলে জরুরিভাবে মানবিক স্বাস্থ্য করিডোর স্থাপন করা দরকার।ইউক্রেনে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, করোনার মৌলিক টিকাদনের হার কম হওয়ায় লাখ লাখ ইউক্রেনীয় নাগরিকের করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে। তাই এই শীতে দেশটিতে করোনার সংক্রমণও বাড়তে পারে।এ বছরের ৮ অক্টোবর ক্রিমিয়ার সঙ্গে রাশিয়াকে সংযুক্তকারী কার্চ সেতুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকা-ের পর থেকে ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলো লক্ষ্য ব্যাপকহারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে রাশিয়া।এছাড়া, গত মাসে অধিকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপের বৃহত্তম বন্দরনগরী সেভাস্তোপলের কাছাকাছি কৃষ্ণ সাগরে রুশ নৌবহরে ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর ইউক্রেনের জ্বালানি স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে বেশ দফায় দফায় ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে মস্কো।বিবিসি বলছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত গত সপ্তাহেই ইউক্রেনে সবচেয়ে বেশি বিমান হামলা চালায় রাশিয়া। ওইসব হামলারও মূল লক্ষ্যবস্তু ছিল ইউক্রেনীয় জ্বালানি অবকাঠামো ও বেসামরিক ভবনগুলো।
আরও পড়ুন
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২
তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে যুদ্ধ
হারিকেন হেলেনে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু