অনলাইন ডেস্ক :
অনুশীলনে নামার আগে বোর্ডে ছক আঁকলেন কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। ‘বল এখানে থাকলে কী করতে হবে’-এই একই প্রশ্ন করতে থাকলেন বারবার। হাত উঁচিয়ে সাবিনা খাতুন-মনিকা চাকমারা উত্তর দিতে লাগলেন। এই চেনা দৃশ্যের মধ্যে একটু যেন ব্যতীক্রম মেয়েদের উত্তর দেওয়ার ভঙ্গি। তাদের কণ্ঠের দৃঢ়তা বলে দিচ্ছিল দলের মধ্যে বয়ে চলেছে আত্মবিশ্বাসের স্রোত। যে স্রোতের তোড়ে মালদ্বীপকে ভাসিয়ে দিতে চাওয়ার তাড়না স্পষ্ট। নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে বুধবার মালদ্বীপের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচ দিয়ে এবারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের পথচলা শুরু করবে বাংলাদেশ। স্থানীয় সময় সাড়ে ৫টায় মাঠে গড়াবে ম্যাচটি। দশরথ স্টেডিয়ামের লাগোয়া আর্মি হেডকোয়ার্টার মাঠে মঙ্গলবার সকালের কাঠফাটা রোদে প্রস্তুতি সেরেছে বাংলাদেশ। শুরুতে ছক কষে প্রশ্ন শুরু করলেন ছোটন। আঙুলটা প্রতিপক্ষের বক্সের কাছাকাছি নিয়ে প্রশ্ন করতেই কখনও সাবিনা, কখনও কৃষ্ণা দৃপ্ত কণ্ঠে উত্তর দিলেন-আমাকে শট নিতে হবে। কোচের আঙুল ঘুরে মাঠের মাঝামাঝি আসতে মনিকা-মারিয়া মান্দার চিৎকার-আমাকে ছুটে গিয়ে বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে। একইভাবে মাসুরা পারভীন, আঁখি খাতুনও বলতে থাকলেন-আমাকে ব্লক করতে হবে আক্রমণ। শুরুর এই প্রশ্ন-উত্তর পর্বের ছাপ ফুটে উঠল প্রস্তুতিতে। প্রস্তুতি শেষে অধিনায়ক সাবিনাও জানালেন, উপভোগের মন্ত্রে উজ্জীবিত তার দল। “মেয়েরা খেলাটা উপভোগ করছে। কোচ যেভাবে কৌশল সাজিয়েছেন, আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন। সে অনুযায়ী আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। এখন তা মালদ্বীপের বিপক্ষে করে দেখাতে হবে।” পরিসংখ্যানের পাতায় তাকালে আশাবাদী হতেই পারে বাংলাদেশ। মালদ্বীপের বিপক্ষে একচ্ছত্র আধিপত্য ‘লাল-সুবজ’ জার্সিধারীদের। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ও এসএ গেমস মিলিয়ে তাদের বিপক্ষে খেলা তিন ম্যাচের সবগুলোতেই জয়ী বাংলাদেশ। ২০১৪ সালে ইসলামাবাদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের জয়টি ছিল ৩-১ গোলে। ২০১৬ এসএ গেমসের জয় ২-০ ব্যবধানে। সাফে ২০১৭ সালে সবশেষ দেখায় তো মালদ্বীপকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেছিল বাংলাদেশ। শিলিগুঁড়ির আসরে ৬-০ গোলে তাদেরকে উড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছিলেন সিরাত জাহান স্বপ্না, জোড়া গোল করেছিলেন সাবিনা, এক গোল নার্গিস খাতুনের। বর্তমান দলে অবশ্য নেই নার্গিস। আছেন সাবিনা ও স্বপ্না। পরিসংখ্যানের আরেকটি পাতায়ও এগিয়ে বাংলাদেশ। এ বছরে এখনও হারের তেতো স্বাদ পায়নি ছোটনের দল। গত জুনে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে খেলা দুই প্রীতি ম্যাচে প্রথমটি ৬-০ গোলে জয়ের পর দ্বিতীয়টি গোলশূন্য ড্র করেছিল বাংলাদেশ। অন্যদিকে মালদ্বীপ তিন ম্যাচ খেলে একটি জিতেছে, হেরেছে দুটিতে। তবে বাংলাদেশ কোচ মালদ্বীপকে হালকাভাবে নিচ্ছেন না মোটেও। “প্রথম ম্যাচ চ্যালেঞ্জিং হবে। তবে আমি মনে করি, মেয়েরা এ চ্যালেঞ্জ ভালোভাবেই মোকাবেলা করতে পারবে। সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়ে মেয়েরা ম্যাচটা খেলবে। আশা করি, শুরু থেকে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে ভালো ফুটবল উপহার দিবে এবং ইনশাল্লাহ জয় নিয়ে মাঠ ছাড়বে।” “মালদ্বীপের বিপক্ষে আগের ম্যাচ এখন আমাদের কাছে অতীত। আমাদের ভাবনা এখন আজকের ম্যাচ নিয়ে। প্রতিটি ম্যাচই নতুন, অন্যরকম হয়। এখানে সবগুলোই সিনিয়র টিম, আমার মূল্যায়ন হচ্ছে, এখানে সবগুলো দলই ভালো। কাউকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই।” কাঠমান্ডুর কন্ডিশন নিয়েও দুঃশ্চিন্তা নেই বাংলাদেশের। গত শনিবার নেপালে নোঙর ফেলার পর কিছুটা ঠা-া অনুভূত হয়েছিল, কিন্তু মাঝের তিন দিনের আবহাওয়া বাংলাদেশের মতোই। কন্ডিশনের সঙ্গে মেয়েরা মানিয়ে নিয়েছে ভালোভাবেই। ছোটনের যা একটু দুর্ভাবনা আঙুলের চোটে ডিফেন্ডার আনাই মোগিনির ছিটকে যাওয়া নিয়ে। তবে, হাতে অনেক বিকল্প আছে বলেও জানালেন তিনি। ইঙ্গিত দিলেন আনাইয়ের জায়গায় নিলুফা ইয়াসমিন নীলাকে খেলানোর। “আনাইয়ের বিকল্প দলে আছে। আমার চাওয়া শুধু মেয়েরা এতদিন ধরে যে সুন্দর ফুটবল খেলে আসছে, মালদ্বীপ ম্যাচে যারা সুযোগ পাবে, তারা আগের সেই সুন্দর ফুটবলটাই খেলুক।”
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা