কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় অবহেলিত কৃষকদের ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেলো
মোঃ আবু রায়হান, শেরপুর :
শেরপুর জেলা পাঁচটি উপজেলা নিয়ে গঠিত। অত্র পাঁচটি উপজেলার সিংহ ভাগ লোক কৃষক। এই জেলার কৃষকরা ধান পাট ও নানা জাতের সবজি চাষ করে থাকে। কিন্তু সীমান্তবতী তিনটি উপজেলা ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার শত শত একর উঁচু জমি পানির অভাবে অনাবাদি পড়ে থাকতো। এতে অত্রাঞ্চলের দরিদ্র প্রান্তিক চাষীরা জমি থাকতেও অভাব অনটনে দিন-যাপন করতো। কারন ঐ সমস্ত জমিতে কোন কিছু উৎপাদন করা সম্ভব হতো না। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে পানির ব্যবস্থা করে এই সমস্ত উঁচু জমি গুলিতে পানির ব্যবস্থা মাধ্যমে নানা জাতের শাক-সবজি চাষাবাদ শুরু করছে। ফলে অত্রাঞ্চলের কৃষকেরা লাভবান হচ্ছে। প্রায় ১যুগ পূর্বে অত্রাঞ্চলে নরসিংদী থেকে কিছু অভিজ্ঞ কৃষক ওই এলাকায় বসতি স্থাপন করে। এই সমস্ত দক্ষ কৃষকের নানা প্রযুক্তি দিয়ে বিভিন্ন রকমের শাক-সবজি উৎপাদন শুরু করে। এতে খুলে যায় কৃষকের ভাগ্য। বিভিন্ন সবজি চাষের উন্মুক্ত দুয়ার খোলার ফলে নরসিংদীর থেকে আসা কৃষকদের নানা প্রযুক্তি সংযোগ করে উৎপাদন শুরু করে অত্র অঞ্চলের কৃষকরা। বছরের বারো মাস জুরে সব ধরনের সবজি উৎপাদন শুরু করে। শীত মৌসুমের সবজী শ্রীষ্মকালেও উৎপাদন শুরু করে। এতে কৃষকরা সফলতা অর্জন করে। তাঁদের উৎপাদিত সবজি অধিক লাভে বিক্রি করে। এতে কৃষকরা অনেক লাভবান হচ্ছে। বর্তমানে ওই অঞ্চলের উৎপাদিত নানা জাতের সবজি এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অভ্যান্তরে সবজির যোগান দিয়ে আসছে। একদিকে কৃষকরা যেমন লাভবান হচ্ছেন। তেমনি এই এলাকার কৃষকদের পতিত জমি গুলি থেকে উৎপাদন হচ্ছে হাজার হাজার মন নানা জাতের সবজি। ওই তিনটি উপজেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চল হলদিগ্রাম, গাড়োকোনা, সন্ধ্যাকুড়া, গান্ধীগাঁও, ভালুকা, ফুলহারী, বাঁকাকুড়া, গজনী, ফাঁকরাবাদ, ভারুয়া, গুমরা, হলদি বাটা, বনগাঁও, জিগাতলা, নন্নী, কর্ণঝোরাসহ আরো অনেক এলাকা। এই এলাকার হাজার হাজার একর জমিতে এখন বছর জুরে নানাজাতের সবজি চাষ হচ্ছে। শাক-সবজির মধ্যে রয়েছে, লাউ, কুমুর, শঁসা, পেঁপেঁ, জিঙ্গা, কদু, ঢেঁড়স, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, চিচিঙ্গা, বরবটি, কাকরোল, মিষ্টি লাউ, সিম, পটল, গাজর, মূলা, ডাঙ্গা, লাল-শাক, পালং-শাক, পুঁইশাক, মহিকচু, উলকচুসহ বিভিন্ন জাতের সবজি চাষাবাদ করে এখন অত্র অঞ্চলে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। তাঁরা ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে সচ্ছল হয়েছে।
উল্লেখ্য, এক সময় এই অঞ্চলের কৃষকরা খেয়ে না খেয়ে অনাহারে দিন যাপন করত। আর বর্তমানে তারা অনেক সুখ স্বাচ্ছন্দে জীবন যাপন করছে। ওই অঞ্চলের জমি বিক্রি করতে গেলে কৃষকরা বিক্রি করতে পারত না। কারণ ওই সমস্ত জমিতে কোন কিছু উৎপাদন করা সম্ভব হতো না। তাই এই সমস্ত অনাবাদি জমি কিনতে চায়নি। আর বর্তমানে ওই অঞ্চলের জমি সবচাইতে দাম বেশি। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সহযোগিতায় তারা শীত মৌসুমের সবজি শ্রীষ্মকালে উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে এবং প্রায় সব ধরনের সবজি ওই অঞ্চলে উৎপাদন করছে কৃষকেরা।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানায় আমরা আন্তরিকতার সাথে সার্বিক ভাবে সহযোগীতা করছি। ফলে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে, এতে আমরা খুশি। কারণ আমাদের উদ্দেশ্য কৃষকদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করা। তাই আমাদের সহযোগিতার ফলে কৃষকরা লাভবান হলে সরকারের উদ্দেশ্য আমাদের সরকারি দায়িত্ব পালন করার জন্য কৃষকরা লাভবান হলে আমরাও খুশি হই।
প্রতিদিন অত্র এলাকা থেকে হাজার হাজার মণ সবজি ঢাকা, ময়মনসিংহ সহ বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। এ সমস্ত সবজি বিক্রি করে কৃষকরা প্রতিদিন নগদ টাকা হাতে গুনছে এতে কৃষকরা বেজায় খুশি। সবজির পাশাপাশি অঞ্চলে কৃষকরা বাড়ির আশপাশে লিচু, লেবু, মালটা, কমলা, আম, জাম, কলা, সহ অন্যান্য ফুলের বাগানও করে তারা লাভবান হচ্ছে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি