অনলাইন ডেস্ক :
শেষ বলে চার বা ছক্কায় ম্যাচ জয় ক্রিকেটে খুব বিরল নয়। ১৯৮৬ সালে শারজাহতে জাভেদ মিয়াঁদাদের সেই ঐতিহাসিক ছক্কা, ২০০৮ সালে চামিন্দা ভাসের শেষ দুই বলে শিবনারাইন চন্দরপলের চার ও ছক্কায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয় কিংবা আরও কিছু ঘটনা আছে। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের টানা চারটি ছক্কা তো এখনও সবার স্মৃতিতে টাটকা। কিন্তু রিঙ্কু সিং যা করলেন, এমন কিছু কি কোনো পর্যায়ের ক্রিকেটেই হয়েছে আগে কখনও? প্রশ্নটা উঠছে। আপাতত উত্তর নেই। কারণ রিঙ্কু যা করেছেন, এর তুলনীয় কিছু নেই। অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয়, অভাবনীয় কিংবা কোনো বিশেষণই আসলে যথেষ্ট নয় তার কীর্তি বোঝাতে। আইপিএলে রোববার রিঙ্কুর শেষ ওভারের বীরত্বের পর ভারতীয় ক্রিকেট এখন উত্তাল তাকে নিয়ে চর্চায়। আহমেদাবাদে রোববার গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে রান তাড়ায় শেষের আগের ওভারেও ধুঁকছিলেন রিঙ্কু। গুজরাটের আইরিশ বাঁহাতি পেসার জশ লিটলের টানা দুই বলে যখন রান নিলেন না, তার রান তখন ১৪ বলে ৮। ২০৫ রান তাড়ায় কলকাতার তখনও লাগে ৮ বলে ৩৯! ওভারের শেষ দুই বলে ছক্কা ও চার মারলেন রিঙ্কু। ম্যাচে তবু উত্তেজনা সামান্যই ফিরল। শেষ ওভারে যে লাগে ২৯ রান! শেষ ওভারে ইয়াশ দয়ালের প্রথম বলে সিঙ্গেল নিলেন উমেশ যাদব। এরপরই রিঙ্কুর ঝলকের শুরু। তার একেকটি শটে বল যেন পেয়ে গেল ডানা, টানা ৫ বল উড়ে গেল সীমানার ওপারে! বোলিং যদিও ছিল খুবই বাজে। টানা তিনটি ফুল টস করেন বোলার ইয়াশ, পরের দুটি অফ স্টাম্পের বাইরে লেংথ বল। কিন্তু ডেলিভারি যেরকমই হোক না কেন, টানা ৫ বলে টাইমিং ও জোর ঠিকঠাক রাখা, শেষ ওভারের স্নায়ুর চাপকে জয় করা, এসব তো চাট্টিখানি কথা নয়! ম্যাচের পর সামাজিক মাধ্যমে যেমন ঝড় বয়ে যায় রিঙ্কুকে নিয়ে। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, হরভজন সিং, বেন স্টোকস, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, ইয়ান বিশপ, বিরেন্দর শেবাগ, সবার টুইটে রিঙ্কুকে নিয়ে বিস্ময় ও প্রশংসা। সাবেক ভারতীয় অলরাউন্ডার ইরফান পাঠান লিখলেন, “রিঙ্কু সিংয়ের অবিশ্বাস্য হিটিং।” ইরফানের বড় ভাই আরেক সাবেক অলরাউন্ডার ইউসুফ পাঠানের কথাও একই, “রিঙ্কু সিংয়ের অবিশ্বাস্য হিটিংৃআইপিএল স্বাক্ষী হলো সবচেয়ে নাটকীয় সমাপ্তিগুলোর একটির।” অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চের বিস্ময়-বচন, “জীবনে এরকম কিছু কখনও দেখিনি।” সাবেক ভারতীয় ব্যাটসম্যান সুব্রামানিয়াম বদ্রিনাথের কণ্ঠেও সেই সুর, “শেষ ওভারে টানা ৫ ছক্কায় জয়, আগে কখনও এরকম কিছু দেখিনি। কুর্নিশ, রিঙ্কু সিং।” রিঙ্কুর কীর্তি কতটা অবিশ্বাস্য ও অবিস্মরণীয়, তা সত্যিকার অর্থে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন সাবেক ভারতীয় ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ কাইফ। “শেষ ওভারের রোমাঞ্চ ব্যাপারটির অর্থই এদিন বদলে দিয়েছেন রিঙ্কু সিং। শেষ বলে ছক্কার ক্লাইম্যাক্স তো কত শুনেছি, কিন্তু শেষ ৫ বলে ছক্কা তো স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। রিঙ্কু, কী দুর্দান্ত এক ফিনিশার!” ঠিক এতটা কঠিন না হলেও রিঙ্কু শেষ দিকে অবিশ্বাস্য এক জয়ের দুয়ারে কলকাতাকে পৌঁছে দিয়েছিলেন গত মৌসুমেও। লক্ষ্নৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে জয়ের জন্য শেষ ৩ ওভারে কলকাতার প্রয়োজন ছিল ৫৫ রান। রিঙ্কু ও সুনিল নারাইনের ঝড়ে ২ ওভারে আসে ৩৪ রান। শেষ ওভারে সমীকরণ দাঁড়ায় ২১ রানের। মাকার্স স্টয়নিসের করা ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি মারেন রিঙ্কু, পরের দুই বল উড়িয়ে দেন ছক্কা। চতুর্থ বলে নেন ২ রান। শেষ ২ বলে তখন লাগে কেবল ৩ রান। পঞ্চম বলে এভিন লুইসের অসাধারণ এক ক্যাচে রিঙ্কু আউট হয়ে যান ১৫ বলে ৪০ রান করে। শেষ বলে স্টয়নিস বোল্ড করে দেন উমেশ যাদবকে। কলকাতা হেরে যায় ২ রানে। সেবার জিততে না পারলেও অবিশ্বাস্য কিছু করার বিশ্বাসটা পেয়েছিলেন, যা এবার প্রেরণা জুগিয়েছে বলে ম্যাচ শেষে জানালেন রিঙ্কু। “ভেতরে ভেতরে একটা বিশ্বাস ছিল যে আমি পারব, কারণ গত বছরও প্রায় একইরকম একটা ইনিংস খেলেছিলাম লক্ষ্নৌর বিপক্ষে। সেই বিশ্বাসটা তাই এদিনও ছিল এবং তা দেখাতে পেরেছি।” “রানা ভাই (কলকাতা অধিনায়ক নিতিশ রানা) বলেছিলেন, ‘বিশ্বাস রাখো, শেষ পর্যন্ত লড়ে যাও।’ উমেশ ভাই সিঙ্গেল নেওয়ার পর বলেছিলেন, ‘¯্রফে মেরে দে রিঙ্কু, কোনো কিছু ভাবিস না।’ আমি চেষ্টা করে গেছি।” তবে বিশ্বাস যতই থাকুক, ৫ বলে ছক্কা কি সত্যিই ভাবতে পেরেছিলেন? এবার রিঙ্কু বললেন, ভাবাভাবির ব্যাপারেই যাননি তিনি। “সত্যি বলতে, খুব বেশি কিছু ভাবিনি আমি। ¯্রফে প্রতিটি বলে সাড়া দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ৫ ছক্কা মেরে দেব, এটা কখনও ভাবতে পারিনি। ¯্রফে শট খেলে গেছি, বিশ্বাসটা ছিল, এভাবেই আমরা ম্যাচ জিতে গেছি।” গত আইপিএলে রিঙ্কুর ওই ইনিংসটির কারণেই তার ওপর শেষ পর্যন্ত ভরসা ছিল বলে জানালেন কলকাতা অধিনায়ক নিতিশ রানা। “রিঙ্কু গত বছরও এরকম খেলেছে, যদিও আমরা সেই ম্যাচ জিততে পারিনি। এদিন সে যখন দ্বিতীয় ছক্কাটি মারল, তখন বিশ্বাস বাড়তে শুরু করল। কারণ ইয়াশ দয়াল (বোলার) ঠিকঠাক বল রাখতে পারছিল না। তাই কোথাও না কোথাও বিশ্বাসটা জন্মেছিল আমার।”“লক্ষ্য যত কঠিনই হোক না কেন, বিশ্বাস ধরে রাখা জরুরি। তবে এটাও সত্যি, এই ধরনের পরিস্থিতিতে একশ ম্যাচের মধ্যে কেবল একটিই জেতা যায়।”
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা