অনলাইন ডেস্ক :
শেষ ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কাকে ৪ উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে সোমবার জানিথ লিয়ানাগের লড়িয়ে সেঞ্চুরিতে ২৩৫ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ জিতে যায় ৫৮ বল বাকি রেখে। বাংলাদেশের বোলিং ইনিংসের শেষ দিকে ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন সৌম্য সরকার। তার ‘কনকাশন’ বদলি হিসেবে নেমে তানজিদ হাসান খেলেন ৯ চার ও ৪ ছক্কায় ৮১ বলে ৮৪ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। শেষ দিকে ১৮ বলে ৪৮ রানের অপরাজিত বিধ্বংসী ইনিংস খেলে জয় ত্বরান্বিত করেন রিশাদ হোসেন। তানজিদের সৌজন্যে বাংলাদেশের রান তাড়ার শুরুটা হয় ভালো। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর প্রথমবার খেলতে নেমে দারুণ ব্যাটিং করেন তিনি। ৫০ রানের উদ্বোধনী জুটি যখন ভাঙে, এনামুল হক ফেরেন ২২ বলে ১২ রান করে। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বিদায় নেন ১ রান করেই।
তৃতীয় উইকেটে ৪৯ রানের জুটি গড়েন তানজিদ ও তাওহিদ হৃদয়। প্রথম দুই উইকেট নেওয়া লাহিরু কুমারা এই জুটিও ভাঙেন। শর্ট বলে বজে শটে ২২ রান করে ফেরেন হৃদয়। নিজের পরের ওভারে মাহমুদউল্লাহকেও ফিরিয়ে ওয়ানডেতে প্রথমবার চার উইকেটের স্বাদ পান কুমারা। একটু পর আরও বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় সীমানায় ধরা পড়েন তানজিদ। সেখান থেকে মুশফিকুর রহিম ও মেহেদী হাসান মিরাজের ৪৮ রানের জুটি দলকে এগিয়ে নেয় কিছুটা দূর। হাসারাঙ্গাকে ছক্কার চেষ্টায় মিরাজ যখন আউট হন ২৫ রানে, বাংলাদেশ তখন পড়ে যায় অনিশ্চয়তায়। উইকেট বাকি ছিল ৪টি, রান প্রয়োজন তখনও ৫৮। কিন্তু রিশাদের ব্যাটে উড়ে যায় সব অনিশ্চয়তা।
প্রথম বলে ছক্কা দিয়ে শুরু করেন রিশাদ। হাসারাঙ্গার ওই ওভারে মারেন আরও একটি করে চার ও ছক্কা। লঙ্কান লেগ স্পিন তারকার পরের ওভারে তা-ব বইয়ে দেন তিনি। তিন চার ও দুই ছক্কায় ওভার থেকে নেন ২৪ রান। পরের ওভারে মুশফিকের ব্যাটরে কানায় লেগে বাউন্ডারিতে জিতে যায় দল। অবিচ্ছিন্ন জুটিতে আসে ২৫ বলে ৫৯ রান। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কা শুরুতেই বিপদে পড়ে যায়। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই পাথুম নিসাঙ্কাকে এলবিডব্লিউ করেন তাসকিন আহমেদ। রিপ্লেতে যদিও দেখা যায়, বল চলে যাচ্ছিল লেগ স্টাম্পের বেশ বাইরে দিয়ে। তবে রিভিউ নেননি নিসাঙ্কা।
তাসকিন পরের ওভারে দারুণ এক আউট সুইঙ্গারে বিদায় করেন আভিশকা ফার্নান্দোকে। সেই ধাক্কা সামাল দেওয়ার আগেই শ্রীলঙ্কা হারায় সাদিরা সামারাউইক্রামাকে। একাদশে ফিরে প্রথম ওভারে উইকেট পান মুস্তাফিজুর রহমান। এরপর লড়াইয়ের চেষ্টা করেন কুসাল মেন্ডিস ও চারিথ আসালাঙ্কা। কিন্তু খুব দীর্ঘায়িত হয়নি তা। রিশাদ হোসেন আক্রমণে এসেই ফেরান ২৯ রান করা মেন্ডিসকে। তৃতীয় ম্যাচে এসে প্রথম উইকেটের স্বাদ পেলেন এই লেগ স্পিনার। আসালাঙ্কার ইনিংস ৩৭ রানে থামান মুস্তাফিজ।
১৬ বল খেলে প্রথম রানের দেখা পাওয়া দুনিথ ওয়েলালাগে থামেন ওই এক রানেই। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাও পারেননি টিকতে। দুজনকেই ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ। এই সময়টায় এক প্রান্ত আগলে ছিলেন লিয়ানাগে। তাকে দারুণভাবে সঙ্গ দেন মাহিস থিকশানা। ১৫৪ রানে ৭ উইকেট হারানো দলকে উদ্ধার করে দুজনের ৬০ রানের জুটি। ইনিংসের একমাত্র অর্ধশত রানের জুটি যা।
মুস্তাফিজ পায়ে টান লাগায় মাঠ ছাড়ার পর ওই ওভার করতে এসে সৌম্য ভাঙেন এই জুটি। এরপর লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে শতরান পূরণ করেন লিয়ানাগে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে আগের ৫ ইনিংসে একবার ৯৫ রানে থমকে যান তিনি, ফিফটি করেন আরও দুটিতে। এবার স্বাদ পেলেন প্রথম সেঞ্চুরির। ১১ চার ও ২ ছক্কায় ১০২ বলে ১০১ রান করে অপরাজিত থাকেন ২৮ বছর বয়সী ক্রিকেটার। শ্রীলঙ্কা স্পর্শ করে ২৩৫। সেই পুঁজি নিয়ে তারা লড়াই জমিয়ে তোলার ইঙ্গিত দিয়েছিল বটে। কিন্তু শেষে পার্থক্য গড়ে দেন রিশাদ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ২৩৫ (নিসাঙ্কা ১, আভিশকা ৪, মেন্ডিস ২৯, সামারাউইক্রামা ১৪, আসালাঙ্কা ৩৭, লিয়ানাগে ১০১*, ওয়েলালাগে ১, হাসারাঙ্গা ১১, থিকশানা ১৫, মাদুশান ৩, কুমারা ১; শরিফুল ১০-০-৫৫-০, তাসকিন ১০-১-৪২-৩, মুস্তাফিজ ৯-১-৩৯-২, সৌম্য ২-০-১০-১, মিরাজ ১০-১-৩৮-২, রিশাদ ৯-০-৫১-১)
বাংলাদেশ: ৪০.২ ওভারে ২৩৭/৬ (এনামুল ১২, তানজিদ , শান্ত ১, হৃদয় ২২, মাহমুদউল্লাহ ১, মুশফিক ৩৭*, মিরাজ ২৫, রিশাদ ৪৮*; থিকশানা ৯.২-১-৩৫-০, মাদুশান ৭-০-৫২-০, কুমারা ৮-০-৪৮-৪, হাসারাঙ্গা ৯-০-৬৪-২, ওয়েলালাগে ৬-০-৩০-০, আসালাঙ্কা ১-০-৮-০)।
ফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: রিশাদ হোসেন।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান