November 24, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, December 19th, 2022, 9:49 pm

শ্লথ হয়ে পড়েছে মোবাইল কোম্পানিগুলোর ফোরজি ও ফাইভজি সম্প্রসারণের কাজ

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মোবাইল কোম্পানিগুলোর ফোরজি ও ফাইভজি সম্প্রসারণের কাজ শ্লথ হয়ে পড়েছে। ফলে ফাইভজির বাণিজ্যিক কার্যক্রম পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। বর্তমানে স্থাপিত টাওয়ারের আওতাধীন এলাকা ও জনগোষ্ঠীকে বিবেচনা নিলে দেশের সিংহভাগ এলাকাই ফোরজি সেবার আওতায় এসেছে। কিন্তু মানসম্পন্ন সেবা দেয়ার প্রয়োজনে নিয়মিতভাবে নেটওয়ার্ক উন্নয়ন করা জরুরি। কারণ একাধিক টাওয়ারের মধ্যবর্তী স্থানে নেটওয়ার্ক দুর্বল বা অনুপস্থিত থাকার পাশাপাশি জনবহুল এলাকায় নেটওয়ার্কের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। সেসব ক্ষেত্রে নতুন করে টাওয়ার বা ই-নোড-বি স্থাপনের প্রয়োজন পড়ে। আর ওসব প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ দেশের বাইরে থেকে আনতে হয়। কিন্তু বিদ্যমান ডলার সঙ্কটের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। আর সেজন্যই সেলফোন অপারেটররা সম্প্রসারণ করতে পারছে না ফোরজি ও ফাইভজির কার্যক্রম। মোবাইল অপারেটর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সেলফোন অপারেটরদের আমদানি ব্যয় বেড়েছে। সর্বশেষ প্রান্তিকে মূলধনি ব্যয়ও বেড়েছে। ডলার সঙ্কটে প্রতিষ্ঠানগুলো মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে নতুন করে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছে না। বরং আগের এলসির বিপরীতে আসা যন্ত্রাংশ দিয়েই এখনো নেটওয়ার্ক উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। তাতে পরিকল্পনা অনুযায়ী নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সেবার মানোন্নয়নে অনেক অপারেটরই আমদানিনির্ভরতা কমাতে বিকল্প খুঁজছে।
সূত্র জানায়, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে গ্রামীণফোনের প্রায় ৩৭ কোটি ২১ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। অথচ আগের বছরের একই সময়ে অপারেটরটি ওই খাতে ৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকারও বেশি মুনাফা করেছিল। তাছাড়া রবি আজিয়াটা চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারজনিত কারণে ১২৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা লোকসান গুনেছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। বর্তমানে মোবাইল অপারেটরগুলোর ফাইভজির বাণিজ্যিক কার্যক্রম নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। যদিও রাষ্ট্রায়ত্ত সেলফোন অপারেটর টেলিটক বাংলাদেশ লি. গত বছরের ১২ ডিসেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে দেশের ৬টি স্থানে ফাইভজি সেবা চালু করে। ফাইভজির ওসব সাইটের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয়, জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু স্মৃতিসৌধ, সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল। চলতি বছরের মধ্যে টেলিটকের ২০০টি সাইটে ফাইভজি নিশ্চিত করার পরিকল্পনা রয়েছে। তাছাড়া গ্রামীণফোনও পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি নেটওয়ার্ক চালু করেছে। অপারেটরটি ২৬ জুলাই ঢাকা ও চট্টগ্রামে সফলভাবে ফাইভজি ট্রায়াল পরিচালনা করে। আর ২৮ সেপ্টেম্বর রবি আজিয়াটা ফাইভজির ট্রায়াল পরিচালনা করেছে। ঢাকা ও রংপুরে পরীক্ষামূলকভাবে ওই সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ফাইভজি চালুর পরিকল্পনা ছিল। আর আগামী বছর ফাইভজির বাণিজ্যিক সেবা ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্য ছিল। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও চলছিল। নিলামের মাধ্যমে অপারেটররা তরঙ্গও বরাদ্দ পায়। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় যথাসময়ে ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে।
সূত্র আরো জানায়, দেশে কর্মরত বেসরকারি তিন অপারেটরেরই চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে মূলধনি ব্যয় বেড়েছে। এ প্রান্তিকে রবি আজিয়াটার মূলধনি ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৫৬০ কোটি টাকা, যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। বাংলালিংকের মূলধনি ব্যয় চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে দাঁড়িয়েছে ৪৭৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আগের প্রান্তিকে তার পরিমাণ ছিল ১০০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। তবে এ সময়ে মূলধনি ব্যয় কমিয়ে এনেছে গ্রামীণফোন। প্রান্তিকটিতে তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ ২৮০ কোটি টাকা, যা দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ছিল ৫৬০ কোটি টাকা। আর আগের বছরের একই সময়ে ওই ব্যয় ছিল ১৯০ কোটি টাকা।
এদিকে রবি আজিয়াটা ইতোমধ্যে নিজেদের অর্ধেকের বেশি গ্রাহককে ফোরজি সেবার আওতায় নিয়ে এসেছে। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে রবির গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৪৪ লাখ। তার মধ্যে ফোরজি গ্রাহক সংখ্যা ২ কোটি ৭৬ লাখ। রবির গ্রাহকদের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর হার ৭৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ওসব গ্রাহকের ৬৭ দশমিক ৩ শতাংশ ফোরজি প্রযুক্তির সেবাগ্রহীতা। ১৫ হাজার ২১৯টি ফোরজি সাইটের (টাওয়ার) মাধ্যমে দেশের জনসংখ্যার ৯৮ দশমিক ২ শতাংশ রবির ফোরজি সেবার আওতায় এসেছে। এ বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে রবির প্রত্যেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী গড়ে ৫ দশমিক ৭ জিবি ডাটা ব্যবহার করেছে। তাছাড়া তৃতীয় প্রান্তিক শেষে জনসংখ্যার ৭৯ দশমিক ৪ শতাংশ বাংলালিংকের ফোরজি নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে। আগের প্রান্তিকে তা ৭৭ শতাংশ ছিল। এ প্রান্তিকে তাদের সাইটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৬০০। তার মধ্যে ফোরজি সাইটের সংখ্যা ১৩ হাজার ৫০০। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ফোরজি সাইট বেড়েছে ৪০ শতাংশেরও বেশি। অপারেটরটির ৩ কোটি ৭০ লাখ গ্রাহকের মধ্যে ১ কোটি ৫০ লাখ গ্রাহক ফোরজি সেবার আওতায় এসেছে। এ সময়ে বাংলালিংকের গ্রাহকপ্রতি গড় ডাটা ব্যবহারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ জিবি। তাছাড়া গ্রামীণফোন লিমিটেড চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণে বিনিয়োগ করেছে ২৭৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এ সময়ে গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক সাইটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৭১৯। তার মধ্যে ফোরজির সাইট ১৯ হাজার ১০০টি। তৃতীয় প্রান্তিক শেষে অপারেটরটির মোট গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ১৮ লাখ। তার মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী গ্রাহক ৪ কোটি ৫৫ লাখ। এ সময়ে গ্রামীণফোনের ফোরজি গ্রাহক সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩ কোটি ২০ লাখ।
অন্যদিকে মোবাইল অপারেটর সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক হলেও বড় অংকের মূলধনি বিনিয়োগের ফলে মুনাফার হার আশানুরূপ হচ্ছে না। টেকসই মূলধনি বিনিয়োগের কারণে হাই ডেপ্রিসেয়েশন ও অ্যামোর্টাইজেশন ব্যয় মুনাফার পরিমাণ সীমিত করে দিচ্ছে। তবে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই মুনাফা অর্জন নিশ্চিত করতে এই কর্মকৌশলের কোনো বিকল্প নেই। মূলত ডলারের মূল্যবৃদ্ধি মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির ব্যয়ে দীর্ঘসূত্রতা বাড়াচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানান, দেশের বেশির ভাগ এলাকাই মোবাইল অপারেটরদের ফোরজি নেটওয়ার্কের আওতায় চলে এসেছে। তাদের সেবার মান নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও বৈশ্বিক অর্থনীতির যে প্রভাব এ খাতও তার বাইরে নয়। আর এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করেই অপারেটরদের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করতে হবে।