নিজস্ব প্রতিবেদক:
ওমিক্রনসহ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে তাতে আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে দেশের হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তির কোনো জায়গা থাকবে না বলে আগাম সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, আমরা টিকা দিয়ে যাচ্ছি, পাশাপাশি আমাদের ওমিক্রন ও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তাতে আমরা কিছুটা হলেও চিন্তিত ও আতঙ্কিত। আমরা চাই না, সংক্রমণ এভাবে বৃদ্ধি পাক। গত বছর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণের হার ২৯-৩০ শতাংশে উঠেছিলো। এখন ধাপে ধাপে বাড়ছে, এভাবে বাড়লে ৩০ শতাংশে পৌঁছাতে সময় লাগবে না। হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যাও বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে হাসপাতালে রোগী ভর্তির কোনো জায়গা থাকবে না। তখন চিকিৎসা দেওয়া দুরূহ হয়ে পড়বে। সোমবার (১৭ জানুয়ারী) সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান। এদিন দুপুর ১টায় ঢাকাস্থ রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার ভি মান্টিটস্কি সচিবালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, রাশিয়ান অ্যাম্বাসেডর এসেছিলেন টিকার বিষয়ে কথা বলতে। রাশিয়ার সঙ্গে টিকার চুক্তি করেছিলাম, সেটা এখনো আছে। তবে আমরা এখনো তাদের কাছ থেকে চুক্তির টিকা পাইনি। আমরা চুক্তি অনুযায়ী টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে বলেছি। টিকার দুটি করে ডোজ লাগে, আমরা বলেছি দুটি ডোজ একসঙ্গে দিতে হবে। তারা বলেছেন, তাদের আরেকটি নতুন টিকা আছে ‘স্পুটনিক লাইট’। আমরা সেটার কাগজপত্র দিতে বলেছি, ওষুধ প্রশাসনের ডিজি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখবেন। পরে এটি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবো। এখন যে চুক্তি আছে সেই টিকাগুলো দিলে আমাদের ভালো হবে। টিকার বুস্টার ডোজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা টিকার বুস্টার ডোজ দিয়ে যাচ্ছি। বুস্টার ডোজে খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। কারণ ছয় মাস সবার পূরণ হয়নি। এ পর্যন্ত প্রায় ৭ লাখের মতো বুস্টার ডোজ দিতে পেরেছি। আমি প্রথমেই জানাচ্ছি যে, বুস্টার ডোজের বয়স ছিল ৬০ বছর। এখন থেকে ৫০ বছর বয়সীদের বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন রয়েছে। দেশে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী পরিস্থিতিতে ১২ বছরের কম বয়সীদের স্কুলে যাওয়া নিয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ১২ বছরের কম বয়সীদের টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত আমরা এখনো নিইনি। কারণ, এখনও ডব্লিউএইচও আমাদের সেই সিদ্ধান্তটি দেয়নি। সিদ্ধান্ত পেলে সে অনুযায়ী কাজ করতে পারবো। শিশুরা সশরীরে স্কুলে আসতে পারে এবং ভার্চুয়ালিও ক্লাস করতে পারে, দুটি অপশনই রয়েছে। তবে সেটা অভিভাবক এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভর করে। এই সিদ্ধান্ত আমরা দিতে পারি না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়টা বলতে পারবে। আমাদের কাছে কোনোরকম পরামর্শ চাইলে আমরা সে বিষয়ে আলোচনা করবো। বহির্বিশ্বে কীভাবে এটি দেখা হচ্ছে, কীভাবে এটি নিয়ে কাজ করছে, তার ওপর ভিত্তি করে পরামর্শ দিতে পারবো। জাহিদ মালেক আরও বলেন, ১ কোটি ৭ লাখ টিকা দেওয়া হয়েছে, এটা একটা বিরাট বড় ফিগার। অনেক দেশের পপুলেশনও এত নাই। কোনোরকম সমস্যা হলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। আমরা চাই, ছেলেমেয়েরা টিকা নিক, সকলেই নিক। আমরা শুধু সুরক্ষা অ্যাপসের ওপরই নির্ভরশীল না। আমরা বলেছি, বার্থ সার্টিফিকেট নিয়ে আসেন, কোনো পত্র না আনলেও টিকা দিয়ে দেবো। দরকার হলে আমরা একটা কার্ড ফিলাপ করে দেবো। স্কুল কর্তৃপক্ষকে বলা আছে, তাদের লিস্ট অনুযায়ী আমরা টিকা দিচ্ছি। রাজধানীতে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ৬৯ শতাংশ ওমিক্রনে আক্রান্ত বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, জিনোম সিকোয়েন্সিং করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। জাহিদ মালেক বলেন, ঢাকায় কিছু জরিপ করেছি, তার মধ্যে দেখা গেছে ওমিক্রন এখন ৬৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। যেটা আগে ১৩ শতাংশ ছিল। সবশেষ ১০-১৫ দিনের মধ্যে আমরা জরিপে এটি পেয়েছি। এই জরিপ ঢাকায় করা হয়েছে। ঢাকার বাইরেও আমরা মনে করি একই হার হবে। ৫০ বছর বয়সীরাও এখন থেকে করোনার টিকার বুস্টার ডোজ পাবেন জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের টিকা কার্যক্রম চলমান আছে। আমরা টিকার বুস্টার ডোজ দিয়ে যাচ্ছি। বুস্টার ডোজে খুব বেশি অগ্রগতি লাভ করেনি। কারণ ৬ মাস সবার পূরণ হয়নি। এ পর্যন্ত প্রায় ৭ লাখের মতো বুস্টার ডোজ দিতে পেরেছি। আমি প্রথমেই জানাচ্ছি, যে বুস্টার ডোজের বয়স ছিল ৬০ বছর। এখন থেকে ৫০ বছর বয়সীদের বুস্টার ডোজ দেয়া হবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন রয়েছে। তিনি বলেন, টিকা নিলে মৃত্যুঝুঁকি কমে। কিন্তু সংক্রমণের ঝুঁকি কমে না। এ বিষয়টি মনে রাখতে হবে। এ পর্যন্ত সাড়ে ১৪ কোটি টিকা দিয়েছি। আমাদের টিকা যা হাতে আছে এবং যা পাবো তাতে আমাদের জনগণের যতো টিকা প্রয়োজন তার চেয়ে বেশিই আছে। মাস্ক পরবেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন এবং ভ্যাকসিনটা সময়মতো নিয়ে নেবেন। সরকারের যে ১১ দফা বিধিনিষেধ আছে তা মেনে চলার অনুরোধ জানান মন্ত্রী। জাহিদ মালেক আরও বলেন, ৫০ বছরে নামিয়ে এনে বুস্টার ডোজ দিলে প্রায় ৭০ লাখ মানুষকে বুস্টার ডোজ দিতে হবে। সেটা আমাদের জন্য কোনো অসুবিধা নয়। আমরা শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীদের প্রায় এক কোটি সাত লাখ টিকা দিয়ে ফেলেছি। আমাদের কাছে টিকা আছে নয় কোটি ৩০ লাখ ডোজ। টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন যারা করেছেন তাদের অধিকাংশের টিকা দেওয়া হয়ে গেছে, খুব একটা বাকি নেই। মন্ত্রী বলেন, আমাদের বিভিন্ন রকমের মেলা হয়, রাজনৈতিক প্রোগ্রাম হয়। এখানেও লক্ষ্য করেছি কোনো রকমের মাস্কের ব্যবহার নাই। খুব স্বল্প সংখ্যক মানুষ মাস্ক পরেন। সেটা কিন্তু তারা নিজেদের নিজেরা ঝুঁকিতে ফেলছে। মাস্ক পরলে সংক্রমিত হয় না এটা প্রমাণিত।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম