অনলাইন ডেস্ক :
দেশে নারীর ক্ষমতায়ন ও আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে পোশাকশিল্পের যে ভূমিকা আছে তার আলোকে দৃঢ়চেতা নারী পোশাকশ্রমিকদের সংগ্রাম ও সাফল্যের গল্প বলা হয়েছে ‘শিমু’ চলচ্চিত্রে। ছবিটির মুক্তি সম্পর্কে পরিচালক রুবাইয়াত হোসেন জানান, ‘২০১৯ সালে সিনেমার কাজ শেষ করেছিলাম। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে, অবশেষে বাংলাদেশের দর্শকদের সিনেমাটি দেখাতে পারব। সবাইকে অনুরোধ করব সিনেমাটি হলে গিয়ে দেখার জন্য।’ সিনেমার প্রধান চরিত্রের অভিনেত্রী রিকিতা নন্দিনী শিমু বলেন, ‘আমি সবসময় আন্তর্জাতিক মানের কাজ করতে পছন্দ করি। যেখানে মানুষের জীবনের প্রকৃত গল্প তুলে ধরা হয়। গল্পটা জানার পর মনে হয়েছে এটা সত্যি অন্যরকম। শিমু চরিত্রটা আমার জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। নিজেকে প্রস্ত্তত করার জন্য আমি এ সময় অন্য কোনো সিনেমায় অভিনয় করিনি। আমরা আমাদের চারপাশে অসংখ্য শিমুদের দেখি কিন্তু তাদের জীবনটা কেমন তা কখনো ভেবে দেখি না। এটা আমার স্ট্রাগলের সাথেও কোনো না কোনোভাবে সম্পর্কযুক্ত। শুধু আমার নয়, গল্পটা সবাইকে স্পর্শ করবে।’ পরিচালক রুবাইয়াত হোসেনের পাশাপাশি এ সিনেমার কলাকুশলীদের সিংহভাগই নারী। চিত্রগ্রহণ করেছেন সাবিন ল্যাঞ্চেলিন, শব্দগ্রহণে এলিশা আলবার্ট এবং শিল্প নির্দেশনায় ছিলেন জোনাকি ভট্টাচার্য্য। ছবির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিকিতা নন্দিনী শিমু, নভেরা রহমান, দীপান্বিতা মার্টিন, পারভীন পারু, মায়াবি মায়া, মোস্তফা মনোয়ার, শতাব্দী ওয়াদুদ, জয়রাজ, মোমেনা চৌধুরী, ওয়াহিদা মল্লিক জলি ও সামিনা লুৎফা প্রমুখ। দুটি অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিতা চৌধুরী ও ভারতের শাহানা গোস্বামী। শ্রমিকনেত্রী ডালিয়া আক্তারের জীবনের সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্রটি। শুধু তাই নয় চিত্রনাট্য থেকে চিত্রধারণ, এমনকি ছবিটির প্রদর্শনে তার উপস্হিতি ছিল উল্লেখ করার মতো। শুরুতে ছবিটির নাম ছিল ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’, পরে নাম পাল্টে রাখা হয় ‘শিমু’। ২০১৬ সালের লোকার্নো চলচ্চিত্র উৎসবে ওপেন ডোরস ল্যাবে অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে ‘শিমু’র কাজ শুরু হয়। চিত্রনাট্যের জন্য রুবাইয়াত হোসেন জিতে নেন আর্টে ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার। টরেন্টো চলচ্চিত্র উৎসবে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারের পর ছবিটি প্রদর্শিত হয় ৬৩তম বিএফআই লন্ডন চলচ্চিত্র উৎসবে। এছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সমাদৃত ও পুরস্কৃত হয়েছে ছবিটি। ফ্রান্সের সেইন্ট জঁ দ্য-লুজ চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতে নেন রিকিতা নন্দিনী শিমু। ইতালির টোরিনো বা তুরিন চলচ্চিত্র উৎসবে পেয়েছে ইন্টারফেদি পুরস্কার এবং ফ্রান্সের এমিয়েন্স আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে জিতে নিয়েছে সেরা দর্শক পুরস্কার ও জুরি পুরস্কারসহ ৩টি পুরস্কার। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ফ্রান্স, ডেনমার্ক, কানাডা ও পর্তুগালের বিভিন্ন সিনেমা হলে বাণিজ্যিকভাবে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ নামে মুক্তি পায় ছবিটি। ২০২০ সালে আমেরিকার বিভিন্ন হলে প্রদর্শনের পর ছবিটির বাণিজ্যিকভাবে দেখানো হয় মেক্সিকো, চীন, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক ও জার্মানীর বিভিন্ন সিনেমা হলে। আর চলতি মার্চে বাংলাদেশে মুক্তির পরপরই এপ্রিলে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেতে যাচ্ছে জাপানের বিভিন্ন সিনেমা হলে। বাংলাদেশের খনা টকিজ ও ফ্রান্সের লা ফিল্মস দ্য এপ্রেস-মিডির ব্যানারে নির্মিত শিমু ছবিটির প্রযোজক ফ্রঁসোয়া দক্তেমা ও আশিক মোস্তফা এবং সহ-প্রযোজক পিটার হিলডাল, পেদ্রো বোর্হেস, আদনান ইমতিয়াজ আহমেদ ও রুবাইয়াত হোসেন। ছবিটির পরিবেশনা ও আন্তর্জাতিক বিক্রয় প্রতিনিধি ফ্রান্সের পিরামিড ফিল্মস। প্রথম ছবি মেহেরজান (২০১১) এবং দ্বিতীয় ছবি আন্ডার কনস্ট্রাকশন (২০১৫)-এর পর ‘শিমু’ রুবাইয়াত হোসেনের তৃতীয় ছবি। এদিকে, চলচ্চিত্রকার রুবাইয়াত হোসেনের তত্ত্বাবধানে ১৬ জন নারী নির্মাতার অংশগ্রহণে শুরু হয়েছে সুলতানা’স ড্রিমের প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণ কর্মশালা। আর এই কর্মশালা থেকেই সেরা দুজন নির্মাণ করতে পারবেন ‘ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স’ শিরোনামে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীরা হলেনÑ লাবনী আশরাফ, আতশী কর্মকার, ফাতিহা তাইরা, জাহারা নাজিফা নোভা, নুসরাত জাহান ইশাত, ফারাহ জলিল, আফ্রিদা মেহজাবীন, ফারিয়া বেগম রাইয়া, ফাজানা নূর, নেহা শামীম, ফারিয়া মানার, মনন মুনতাকা, মাহমুদা আক্তার মনিশা, প্রাচিতা অহনা আলম, তিজাইয়া থমাস ও মো. শিহাব সিনেমার গল্প এবং নির্মাণ প্রসঙ্গে পরিচালক বলেন, ‘শিমু আমার কাছে একটা স্পিরিট। যে সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে সামনে এগিয়ে যায়। সে তার লক্ষ্যে স্হির থাকে এবং অনেক বড় বড় শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হয়। বাংলাদেশের যারা শ্রমজীবী নারী তাদের কাছে সিনেমাটি খুব ভালো লাগবে, কারণ তারা নিজেদের গল্পটা পর্দায় দেখতে পাবেন। সেইসাথে বাংলাদেশে যারা ভালো গল্পের সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন তাদের কাছেও ভালো লাগবে। আমি সবসময় গবেষণা করে কাজ করি। আসল চরিত্রদের খুঁজে তাদের সাথে মিশে গল্পটা লেখার চেষ্টা করি। তারপর চরিত্রের সাথে মিল রেখে কাস্ট করি। স্টার দেখে আমি কাস্ট করি না, গল্পই আমার সিনেমার স্টার।’
আরও পড়ুন
ইউটিউব থেকে সরানো হলো শাকিবের ‘তুফান’
চিন্তিত অনন্যা পান্ডে
কনাকে নিয়ে সুখবর দিলেন আসিফ