নিজস্ব প্রতিবেদক:
কুমিল্লা জেলার ৪টি মহাসড়কে উন্নয়ন করার কথা থাকলেও প্রকল্প সংশোধন সংক্রান্ত জটিলতায় শুরুই করা যায়নি কাজ। এ-সংক্রান্ত একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশন থেকে ফেরত পাঠানোর ২ বছরের বেশি সময় পর এসেছে সংশোধিত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব)। ফলে প্রকল্প প্রস্তুতিতেই পেরিয়ে গেছে মেয়াদের অধিকাংশ সময়। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ছিল প্রকল্পের প্রস্তাবিত মেয়াদ। তবে এ বিষয়ে ব্যাখা দিয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দপ্তর। ‘কুমিল্লা সড়ক বিভাগের ৪টি জেলা মহাসড়ক যথাযথমান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পে ঘটেছে এমন ঘটনা। তবে সম্প্রতি প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ শেষ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়ছে, প্রকল্পটির প্রথম প্রস্তাব আসার পরই অনুষ্ঠিত পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভার বেশ কিছু সুপারিশ দেওয়া হয়। এসব সিদ্ধান্ত মেনে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয় সংগ্রহ এবং প্রস্তাবিত সড়কের টপোগ্রাফি ও মৌজা ম্যাপ সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়া ইউটিলিটি স্থানান্তর ব্যয় পুনর্গঠিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) অন্তর্ভূক্ত করাসহ ও অন্যান্য কার্যক্রম করতেই পুনর্গঠিত ডিপিপি পাঠাতে ২ বছরের বেশি সময় প্রয়োজন হয়েছে। সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এটি বাস্তবায়িত হলে কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে টেকসই, নিরাপদ ও ব্যয় সাশ্রয়ী সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে কুমিল্লা জেলার কুমিল্লা সদর, সদর দক্ষিণ, লালমাই, বরুড়া, নাঙ্গলকোট এবং চৌদ্দগ্রাম উপজেলায়। প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) সত্যজিত কর্মকার বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় কুমিল্লা সড়ক বিভাগের চারটি জেলা মহাসড়ক যথাযথমান ও প্রশস্ততায় উন্নীত করা হবে। এটি হলে কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে দ্রুত ও নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সড়কগুলো নির্মিত হলে প্রতিদিন গড়ে ১০ লাখ ২৪ হাজার টাকা ভ্রমণজনিত ব্যয় এবং যানবাহন পরিচালন ব্যয় সাশ্রয় হবে। এ ছাড়া এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন দ্রুত, নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ নিশ্চিত হবে। তাই এটি অনুমোদন যোগ্য।’ পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর ২০২০ সালের ২৩ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর।’ প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, প্রস্তাবিত জেলা মহাসড়ক ৪টি ২০০৮ সালের জুলাই পর্যন্ত এলজিইডির আওতাধীন থাকায় যোগাযোগ অবকাঠামো দুর্বল ছিল। কুমিল্লা সদর, সদর দক্ষিণ, লালমাই, চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, ববুড়া উপজেলা কুমিল্লা জেলার গুরুত্বপূর্ণ ইকনমিক গ্রোথ সেন্টার। এই উপজেলাগুলো উৎপাদিত কৃষিপণ্য স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। এ ছাড়া বার্ড, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ময়নামতি শালবন বিহার, কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ, লালমাই পাহাড় দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র। জেলা মহাসড়ক ৪টি যথাযথমান ও প্রশস্ততায় উন্নীত করার মাধ্যমে সব অঞ্চলে কৃষিভিত্তিক শিল্প ও পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ হতে মোট ৯৮৭ কোটি ৭২ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয় পরিকল্পনা কমিশনে। এ সময় ২০২০ সালের জুলাই হতে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছিল। প্রকল্পটির ওপর ২০২০ সালের ২৩ জুলাই প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ হাজার ২৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে- ৮৪.৯১ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ, ৬ লাখ ২০ হাজার ২৮৪ ঘনমিটার সড়ক বাঁধ প্রশস্তকরণ, ৭৯.৬৫ কিলোমিটার বিদ্যমান পেভমেন্ট পুনর্নির্মাণ, ৭৯.৬৫ কিলোমিটার সারফেসিং, ৪.৪৩ কিলোমিটার রিজিড (আরসিসি) পেভমেন্ট নির্মাণ এবং ২৫৪ মিটার আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। এর আগে, ২০২০ সালের ২৩ জুলাই অনুষ্ঠিত প্রকল্পের পিইসি সভায় প্রকল্পের কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট করার কথা বলা হয়েছিল। সেগুলো হলো- মোট কী পরিমাণ ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে, কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিনা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর কোন বিরূপ প্রভাব পড়বে কিনা- সেসব পুর্র্নগঠিত ডিপিপিতে উল্লেখ করতে হবে। এ ছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয় সংক্রান্ত তথ্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে সংগ্রহ করে ডিপিপিতে সংযুক্ত করতে হবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের রাস্তাগুলোর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের বর্তমান অবস্থা ও প্রকল্পের আওতায় নির্মিত রাস্তার একটি তুলনামূলক চিত্র আকারে পুনর্গঠিত ডিপিপিতে উল্লেখ করার কথাও বলা হয়েছিল। ওই পিইসি সভায় আরও বলা হয়, প্রকল্পে প্রস্তাবিত কালভার্টগুলো প্রকল্প এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত কিনা তা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ড্রেনেজ ওপেনিং রাখতে হবে। প্রস্তাবিত ডিপিপিতে ১.৭০ কিলোমিটার অংশে কতটি বাঁক সরলীকরণ করা হবে তার বিবরণ টেবিল আকারে ও রঙিন ম্যাপে পুর্র্নগঠিত ডিপিপিতে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। প্রকল্পে প্রাইস কন্টিনজেন্সি ও ফিজিক্যাল কন্টিজেন্সি উভয় খাতে এক শতাংশ করে ৯৬৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকার পরিবর্তে প্রাইস কন্টিনজেন্সি ও ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সি উভয় ০.৫ শতাংশ করার কথাও বলা হয়েছিল।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি