November 22, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, August 28th, 2021, 7:22 pm

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের তথ্য খতিয়ে দেখবে এনবিআর

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের তথ্য খতিয়ে দেখবে। মূলত কর রেয়াত সুবিধার অপব্যবহার বন্ধ করতেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর থেকে প্রত্যেক কর অঞ্চলকে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দেয়া হয়েছে। কর অঞ্চলগুলোকে সঞ্চয় অধিদপ্তরের ডেটাবেজ থেকে করদাতাদের বিনিয়োগের সত্যতা যাচাই করে ১৫ দিন অন্তর প্রতিবেদন আকারে এনবিআরে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সঞ্চয়পত্র কিনলে কর ছাড় পাওয়া যায়। একজন করদাতা বর্তমানে বার্ষিক আয়ের ২৫ শতাংশ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে তার বিপরীতে ১৫ শতাংশ কর রেয়াত পেয়ে থাকে। তবে তার বেশি কিনলে তা রেয়াতযোগ্য হিসাবে গণ্য করা হয় না। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তির বার্ষিক আয় ৪ লাখ টাকা থাকলে এক লাখ বিনিয়োগ কর রেয়াতযোগ্য হিসাবে গণ্য হবে। ওই হিসাবে বিনিয়োগকারী ১৫ হাজার টাকা কর ছাড় পায়। এখন কর অঞ্চলগুলো জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর থেকে পাঠানো ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে করদাতাদের সঞ্চয়পত্র সংক্রান্ত বিনিয়োগের সঠিকতা যাচাই করবে। এভাবে করজাল বৃদ্ধি, ডেস্ক অডিট, ফিল্ড অডিটসহ আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণ সহজতর হবে। তবে প্রান্তিক বিনিয়োগকারীসহ করদাতারা যেন কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় তা নিশ্চিত করা হবে। সেজন্য কার্যক্রমটি পরিদর্শী কর্মকর্তাদের (যুগ্ম ও অতিরিক্ত কমিশনার পদমর্যাদার কর্মকর্তা) তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন করা হবে। কর অঞ্চলগুলো থেকে ছক আকারে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীদের তথ্য এনবিআরে পাঠানো হবে। তাতে করদাতার নাম ও টিআইএন, আয়বর্ষ, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ, রিটার্ন দাখিল করেছে কিনা, আয়কর রিটার্নে প্রদর্শিত সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের অঙ্ক উল্লেখ করে প্রতিবেদন দেয়া হবে।
সূত্র জানায়, প্রতিবছরই রিটার্ন জমা দেয়া করদাতাদের বড় একটি অংশ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের বিপরীতে কর রেয়াত দাবি করে। এতোদিন কর বিভাগের পক্ষে বিনিয়োগের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। করদাতার আদৌ ঘোষিত বিনিয়োগ বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কর রেয়াত নিয়েছে কিনা তা নিরূপণ করা যেত না। কেবল সন্দেহ হলে ‘কেস-টু-কেস’ ভিত্তিতে সঞ্চয় অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়ে বিনিয়োগের সঠিকতা যাচাই করা হতো। ওই কারণে সঞ্চয়পত্রে কর রেয়াতের অপব্যবহার হতো। বিশ্বাসের ভিত্তিতেই দাবি অনুযায়ী রেয়াত দেয়া হতো। এমন অনেক ভুয়া বিনিয়োগের প্রমাণও মিলেছে। ওই জালিয়াতি বন্ধের লক্ষ্যে সঞ্চয় অধিদপ্তরের সিস্টেমের সঙ্গে সমন্বয় খুবই জরুরি। তবে তার বাইরেও নানাভাবে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের অপব্যবহার হচ্ছে। যেমন শুধু রেয়াত নেয়ার জন্য রিটার্ন জমার আগে অনেকে সঞ্চয়পত্র কেনে। আবার রিটার্ন জমার পর বিক্রি করে দেয়। এটিও সরকারকে ধোঁকা দেয়ার গুরুতর অনিয়ম।
সূত্র আরো জানায়, গত ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ মুনাফা দেয়া হয়। একক নামে বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে ৩০ লাখ ও যৌথ নামে ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যায়। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ঊর্ধ্বসীমা নেই। তাছাড়া তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং মেয়াদ ৩ বছর। একক নামে এ সঞ্চয়পত্রে ৩০ লাখ ও যৌথ নামে ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যায়। আর পরিবার সঞ্চয়পত্র শুধু নারীরা কিনতে পারে। একক নামে ৪৫ লাখ টাকা পর্যন্ত কেনা যায় এবং এর মেয়াদ পাঁচ বছর। পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। তাছাড়া পেনশনার সঞ্চয়পত্র শুধু অবসরপ্রাপ্ত সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং মৃত চাকরিজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগী স্বামী/স্ত্রী/সন্তান কিনতে পারবেন। একক নামে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা যায়। তিন মাস অন্তর ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ হারে মুনাফা দেয়া হয়। অবশ্য সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে যে মুনাফা দেয়া হয় তা থেকে উৎসে কর হিসাবে ৫-১০ শতাংশ অর্থ কেটে রাখা হয়।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা এনবিআরের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এ উদ্যোগে সরকারি দুই সংস্থার মধ্যে স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বাড়বে। অনেক সময়ই সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে অনেক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয় না। আর হলেও তা অত্যন্ত ধীরগতিতে হয়। তাতে চূড়ান্তভাবে জনগণই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নতুন উদ্যোগে ভুয়া বিনিয়োগ ধরা পড়বে। যাদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে কর ফাঁকি দেওয়ার অভিপ্রায় নেই, তাদের জন্যও এই ইন্টিগ্রেশন ভালো হবে। তবে অটোমেশন বা ইন্টিগ্রেশনে সব সংস্থার সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে আইনি বাধা থাকলে তা দূর করা জরুরি। তাহলেই ভালো সুফল পাওয়া যাবে। সরকার অটোমেশন সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে একদিকে যেমন রাজস্ব আদায় বহুলাংশে বাড়বে, অন্যদিকে অসৎ মানুষের মধ্যে অপরাধ করার প্রবণতাও বন্ধ হবে।
অন্যদিকে সম্প্রতি এক আলোচনায় এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেছিলেন, করদাতা সঞ্চয়পত্রে কত টাকা বিনিয়োগ করেছেন, সে অনুযায়ী রিটার্ন এবং কর দিয়েছে কিনা, সেসব খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সব মাধ্যম কাজে লাগিয়ে করজাল বৃদ্ধি এবং সঠিক কর নির্ধারণের প্রচেষ্টা চলছে। কারা কত টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছে? কত টাকার সঞ্চয়পত্র আছে? তার রিটার্নের চেহারা কী? এমনকি সঞ্চয়পত্রের সম্পদের হিসাবটা দেখানো হয়েছে কিনা সেগুলোও খতিয়ে দেখা হবে। তা করা গেলে কর হার কমানো যেতে পারে।