নিজস্ব প্রতিবেদক:
সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমানো হচ্ছে। আগামী ৩ বছরে সাধারণ মানুষের কাছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি টাকা কমানো হবে। পাশাপাশি সঞ্চয়পত্র খাতের সুদহারও কমানো হচ্ছে। ফলে যাদের হাতে পুরোনো সঞ্চয়পত্র থাকবে তারা উচ্চ সুদ পাবে কিন্তু নতুনরা কিনতেও পারবে না। মূলত সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধ ব্যয় কমাতেই সরকার এমন সিদ্ধান্তের দিকে যাচ্ছে। আর সরকারের এমন সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ। মূলত এদেশের অধিকাংশ মধ্যবিত্তই নিরাপদ বিনিয়োগ ও মুনাফার জন্য পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ও ব্যাংকে রাখার পরিবর্তে সঞ্চয়পত্র কিনে থাকে। অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকার আগামী ২০২২-২৩ থেকে ২০২৪-২৫ পর্যন্ত ওই ৩ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ নেয়া ৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকা কমিয়ে আনবে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ৩৫ হাজার কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছে। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমিয়ে ২৭ হাজার ৫শ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হবে। অর্থাৎ দ্বিতীয় বছরে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পরবর্তী অর্থাৎ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আরো ২ হাজার ২২০ কোটি টাকা কমিয়ে ২৫ হাজার ২৮০ কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি মধ্যমেয়াদে সার্বিক সুদহার ৬ শতাংশের নিচে আনা হবে। ফলে সঞ্চয়পত্র খাতেও বড় ধরনের সুদহার কমানো হবে।
সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পর সুদ পরিশোধ ব্যয় হবে ৪২ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। তবে ওই সুদ পরিশোধের মধ্যে আগের সুদ অন্তর্ভুক্ত থাকছে। চলতি অর্থবছরে সুদ পরিশোধ ব্যয় হবে ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আর ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে ৩৪ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা। সাধারণত প্রতিবছর সরকার বাজেটের ঘাটতি মেটাতে দেশের ভেতর থেকে ব্যাংকিং খাত এবং সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। এ বছরও সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। বিনিয়োগের জন্য মধ্যবিত্তদের কাছে সঞ্চয়পত্র অনেকটা নিরাপদ হয়ে উঠছে। কিন্তু সরকারকে ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র উভয় খাতেই ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু এখন সঞ্চয়পত্রের সুদহার ব্যাংকের সুদের চেয়ে বেশি। ফলে ভবিষ্যতে ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নেয়া হবে। তাতে সরকারের সুদ পরিশোধ ব্যয় কমে আসবে। এমনিতে কৃচ্ছ সাধন করা হচ্ছে। নানা দিক থেকে ব্যয় কমানো হচ্ছে। ওই কর্মসূচির আওতায় সঞ্চয়পত্র থেকেও ব্যয় কমানো হবে।
সূত্র আরো জানায়, মূল্যস্ফীতির তোড়ে অব্যাহতভাবে বাড়ছে দ্রব্যমূল্য। কিন্তু ব্যাংকে আমানতের সুদহার কম। অস্থিতিশীল পুঁজিবাজারও অনিরাপদ হয়ে উঠছে। মধ্যবিত্তদের একমাত্র ভরসা হচ্ছে সঞ্চয়পত্র খাত। সঞ্চয়পত্র থেকে বৃহত্তম একটি জনগোষ্ঠী উপকৃত হচ্ছে। সামাজিক সুরক্ষার আওতা হিসাবে সঞ্চয়পত্র কাজ করছে। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণের অঙ্ক বেড়েই চলছে। খেলাপি ঋণই এখন ব্যাংকগুলোর গলার কাঁটা। যার ফলে ব্যাংকের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ছে। আর খেলাপি ঋণ রাষ্ট্রের যেভাবে ব্যয় বাড়াচ্ছে তা সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে সাধারণ মানুষকে দেয়া সুদের তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু খেলাপি ঋণ আদায়ের হার খুব বেশি নয়। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে সরকারকে ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সুদ দিতে হবে। আর গত জুন পর্যন্ত দেশে খেলাপি ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা।
এদিকে এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদদের মতে, সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার সীমা কমানো হলে স্বাভাবিকভাবেই বিক্রি কমবে। তাতে মধ্যবিত্ত মানুষের সমস্যা হবে। কারণ মধ্যবিত্ত মানুষগুলোর অনেকেই সঞ্চয়পত্রের মুনাফা দিয়ে সংসার পরিচালনা করছে। কিন্তু তাদের আয়ের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এখন সুদ কমানোর যে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে তা মূলত আমলাতান্ত্রিক সুদ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। এ ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রের ভলিউম না কমিয়ে সুদহার বাজারের অন্যান্য সঞ্চয়ের সঙ্গে লিঙ্ক করে দিতে পারে। মোট বাজেটের ১১ থেকে ১২ শতাংশ সুদ পরিশোধে যাচ্ছে। আর সঞ্চয়পত্র সুদ পরিশোধে ওই সুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যাচ্ছে। আবার সঞ্চয়পত্র মধ্যবিত্তদের আয়ের একটি উৎসও।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি