সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় তাদের দুই সন্তানের জবানবন্দি নেয়ার সময় আদালতের আদেশ অমান্য হয়েছে কি না তা জানতে বাবুল আক্তারের ভাই অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান লাবু ও মাগুরার সমাজ সেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মো. আশাদুল ইসলামকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ৭ আগস্ট তাদের স্বশরীরে হাজির হতে বলা হয়েছে।
বুধবার (২৭ জুলাই) বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি সাহেদ নুরউদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালত বলেন, শুধু দাদার উপস্থিতিতে শিশুদের জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য আমরা আদেশ দিয়েছিলাম। কিন্তু তাদের চাচা জোর করে সেখানে প্রবেশের চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ এসেছে। এটা তো তিনি করতে পারেন না। আমরা তার মুখে ও সমাজ সেবা কর্মকর্তার মুখে সেদিনের ঘটনা শুনতে চাই। আদালতের আদেশ অমান্য হয়েছে কি না, তা জানতে চাই। এ কারণে তাদের ৭ আগস্ট আসতে হবে।
আদালত বলেন, একজন পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হত্যা এটা সেনসিটিভ মামলা। এ মামলার বিচার স্বচ্ছভাবে হওয়া উচিত। সমাজসেবা কার্যালয়ে নিয়ে বাবুল আক্তারের দুই শিশু সন্তানের জবানবন্দি নেয়ার আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
এ ব্যাপারে আইনজীবী শিশির মনির জানান, হাইকোর্ট মাগুরার সমাজসেবা কার্যালয়ে নিয়ে শিশুদের দাদার উপস্থিতিতে জবানবন্দি নেয়ার জন্য এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে জবানবন্দি নেয়ার পর এ ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তাকে একটি রিপোর্ট দিতে বলেছিলেন।
সে অনুযায়ী তদন্ত কর্মকর্তার দেয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, মাগুরার সমাজসেবা কার্যলয়ে জবানবন্দি নেয়ার সময় শিশুদের চাচা ডিস্টার্ব করেছেন। আর আমরা অভিযোগ করেছি তদন্ত কর্মকর্তা আরেকজন ব্যক্তিকে নিয়ে সমাজসেবা কার্যালয়ে ঢুকে জবানবন্দি নিয়েছে। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের প্রেক্ষিতে সেজন্য শিশুদের চাচা ও সমাজসেবা কর্মকর্তাকে তলব করেছেন। উনাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে হয়তো সেদিন কি ঘটেছিল, সে ব্যাপারে।
এর আগে এক আবেদনের ভিত্তিতে গত ৮ জুন মিতু হত্যা মামলায় তাদের দুই সন্তানের জবানবন্দি নিতে পিবিআই’র তদন্ত কর্মকর্তাকে চট্টগ্রাম থেকে মাগুরায় যাওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। মাগুরা জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ে শিশুদের জবানবন্দি গ্রহণ করতে পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তাকে এ নির্দেশ দেয়া হয়।
ওইদিন আদালত বলেছিলেন, তদন্ত কর্মকর্তারা মাগুরায় যাওয়ার তিনদিন আগে শিশুদের দাদাকে জানাতে হবে। শিশুদের জবানবন্দি রেকর্ড করার সময় জেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা, একজন নারী পুলিশ সদস্য ও শিশুদের দাদা উপস্থিত থাকবেন। শিশু আইনের বিধানাবলী অনুসরণ করে শিশুদের জবানবন্দি নিতে হবে। নির্ধারিত দিনে শিশুদের হাজির করতে কোনো গড়িমসি এবং টালবাহানা করলে চলবে না।
পরে গত ৪ জুলাই মাগুরায় গিয়ে শিশুদের জবানবন্দি রেকর্ড করে তদন্ত কর্মকর্তা। এরপর তদন্ত কর্মকর্তা হাইকোর্টে এ ব্যাপারে একটি রিপোর্ট দাখিল করেন।
গত ১৬ মার্চ দুই সন্তানকে শিশু আইন মেনে সতর্কতার সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ। আদালতের এ আদেশের পরে তদন্ত কর্মকর্তা শিশু দুটিকে পিবিআইয়ের অফিসে হাজির করতে নোটিশ দেয়, যেটা তারা শিশু আইন অনুযায়ী করতে পারেন না। এ কারণে শিশু আইন অনুসারে যাতে শিশু দুটিকে মাগুরার সমাজসেবা কার্যালয়ে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তার নির্দেশনা চেয়ে গত ৩০ মার্চ হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেন বাবুলের বাবা আবদুল ওয়াদুদ ও বাবুলের ভাই হাবিবুর রহমান।
২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে নগরের জিইসি মোড় এলাকায় খুন হন মাহমুদা খানম। সে ঘটনায় তার স্বামী বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে পিবিআই গত বছরের ১২ মে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ওই বছরের ১৪ অক্টোবর আদালতে নারাজি আবেদন করেন বাবুলের আইনজীবী। গত ৩ নভেম্বর আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি গ্রহণ না করে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শুনানি শেষে বাবুলকে স্ত্রী খুনের এই মামলায় শোন অ্যারেস্ট দেখান। এরপর গত ১২ মে বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাবুল আক্তার বর্তমানে ফেনী কারাগারে রয়েছেন।
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম