March 29, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, November 27th, 2021, 9:12 pm

সবজির দামে স্বস্তি এলেও অস্বস্তি অন্যান্য নিত্যপণ্যে

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রকৃতিতে শীতের আমেজ বিরাজ করছে। বাজারও এখন শীতের রকমারি সবজিতে ভরপুর। ফলে কয়েক দিন ধরে উত্তাপ ছড়ানোর পর কমতে শুরু করেছে সবজির দাম। এতে ভোক্তারা কিছুটা স্বস্তি পেলেও দুশ্চিন্তা রয়ে গেছে অন্যান্য নিত্যপণ্যে। আগে থেকে বাড়তি দরে বিক্রি হওয়া বহু পণ্যের দামে এখনও সুখবর মেলেনি।
সূত্র জানায়, বাজারে ১০ থেকে ১২ দিন আগে প্রতি কেজি শিমের দাম ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা। দাম এখন তিন ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। মানভেদে ৩০ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে এক কেজি শিম। ফুলকপি ও বাঁধাকপির দামও গত সপ্তাহের তুলনায় পিস প্রতি কমেছে ৫ থেকে ১০ টাকা। আকারভেদে এই সবজি দুটির পিস বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। কাঁচা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে। তবে ১০ টাকা দাম বেড়ে পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১৩০ টাকা।
কলিসহ পেঁয়াজের কেজিতে দর পাঁচ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। ভারতীয় পেঁয়াজের দামও তিন থেকে পাঁচ টাকা কমে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। আগের মতোই ৫৫ থেকে ৬০ টাকা খরচ হবে দেশি পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে।
এক কেজি নতুন আলু পাওয়া যাচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। আগের মতোই ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পুরোনো আলু। গাজরের দাম ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। এ ছাড়া বরবটি, পটোল, করলা, শসাসহ বেশিরভাগ সবজি ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
মাছের বাজারেও এসেছে কিঞ্চিত পরিবর্তন। সূত্র জানায়, ইলিশের দাম প্রায় অপরিবর্তিত থাকলেও অন্য মাছের ক্ষেত্রে দাম কিছুটা কম দেখা গেছে। এক কেজি ওজনের ইলিশ এক হাজার টাকা আর এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশের দাম এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ১৫০ টাকা রাখছেন বিক্রেতারা। এ ছাড়া মানভেদে রুই ও কাতলার কেজি পাওয়া যাচ্ছে ২৩০ থেকে সর্বোচ্চ ২৮০ টাকায়। শিং মাছের কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ এবং কই মাছের কেজি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
তবে অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামে কষ্টে আছেন সীমিত আয়ের মানুষ। আটা-ময়দা, চিনি, মসুর ডাল, সয়াবিন তেল চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। চালের দামে খুব বেশি হেরফের দেখা যায়নি। এ বিষয়ে কারওয়ান বাজারের মুদি দোকানদাররা জানান, জ¦ালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে পরিবহন ভাড়া বেড়ে গেছে। বিভিন্ন কোম্পানি তাদের পণ্যের দাম আরও বাড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছেন। গত সপ্তাহে কয়েকটি কোম্পানি আটা-ময়দার দাম বাড়িয়েছে। সামনের দিনগুলোতে নিত্যপণ্যের দাম আরেক দফা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা তার। দুই থেকে তিন মাস ধরে ব্রয়লার মুরগির আকাশচুম্বী দামে নাকাল ছিলেন রাজধানীবাসী। শীতের মৌসুমে বাজারে সাধারণত ব্রয়লারের দাম কম থাকার কথা। কিন্তু ব্রয়লারের কেজিতে ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা। বাজারভেদে ডিমের ডজন ১০৫ থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এখন সয়াবিন তেল ও মসুর ডালের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১০ টাকা বাড়িয়ে ১১০ টাকা করা হয়েছে। আর ৫ টাকা বাড়িয়ে প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জানা যায়, ঢাকাসহ সারা দেশে বুধবার থেকে বাড়তি দামে তেল ও মসুর ডাল বিক্রি শুরু করে সংস্থাটি। তবে চিনির দাম বাড়ানো হয়নি। সংস্থাটি প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকায় বিক্রি করছে।
এর আগে গত মার্চে টিসিবি সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১০ টাকা ও চিনির দর কেজিপ্রতি ৫ টাকা বাড়িয়েছিল।
সূত্র জানায়, বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৫৫-১৬০ টাকা, চিনি প্রতি কেজি ৮০ টাকা ও মাঝারি দানার মসুর ডাল প্রতি কেজি ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারের তুলনায় দাম কম হওয়ায় টিসিবির ট্রাকের পেছনে ভিড় রয়েছে। সকালে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, টিসিবির পণ্য এবং খাদ্য অধিদপ্তরের খোলাবাজারে বিক্রি (ওএমএস) কর্মসূচির চাল-আটার ট্রাক কাছাকাছি দাঁড়ানো। দুটো ট্রাকের পেছনেই মানুষের দীর্ঘ সারি।
এদিকে, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেছেন, এক লাফে জ¦ালানি তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। বিশ্ববাজারে এখন জ¦ালানি তেলের দাম কমছে। দেশেও দাম কমানোর বিষয়টি বিবেচনার সময় এসেছে। আশাকরি সরকার এটি দেখবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে এফবিসিসিআইর নেতৃত্বে বাংলাদেশ বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স সফরে অর্জন তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, বিশ্ববাজারের সাথে সমন্বয় করে জ¦ালানি তেলের দাম বাড়ানো উচিত ছিল। কিন্তু এক লাফে লিটারে ১৫ টাকা দাম বাড়ানো ঠিক হয়নি। করোনার কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ২০২২ সাল নাগাদ সময় লেগে যাবে। দেশে জ¦ালানি তেলের দাম বাড়ানোর আগে রপ্তানিতে যেসব ক্রয়াদেশ এসেছিল সেগুলোর উৎপাদন খরচ এখন তুলনামূলক বেশি পড়বে। এতে রপ্তানিকারকরা আর্থিক ক্ষতির মুখ পড়বে। কঠিন এই মূহুর্তে জ¦ালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে উৎপাদন ও রপ্তানি ব্যাহত হবে।