পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, সব অংশীজনদের আন্তরিক সহযোগিতা ছাড়া সরকার সহিংসতামুক্ত নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে পারবে না।
বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়ার বৈঠকে নির্বাচনসংক্রান্ত আলোচনা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মোমেন বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে আমরা আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে চাই। তারাও (যুক্তরাষ্ট্র) এটাকে শান্তিপূর্ণ করার কথা বলেছে। তারপর আমরা বলেছি, আমরা এর গ্যারান্টি দিতে পারি না। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আয়োজন শুধু সরকারের একার ওপর নির্ভর করে না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে সহিংসতা মুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করতে সব রাজনৈতিক দল ও জনগণের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ করতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারে, যাতে সব দল ও মতের মানুষ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে সহযোগিতা করতে পারেন।
মোমেন বলেন, ‘আমাদের দেশে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা মানুষকে বিশ্বাস করি। আমরা মনে করি না জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া কেউ ক্ষমতায় আসতে পারবে। ভোট কারচুপির মাধ্যমে কেউ ক্ষমতায় এলে এই সরকার বেশি দিন টিকবে না। আমাদের এরকম নজির আছে।’
নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানালেও ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো অনেক দেশ তাদের দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের অনুমতি দেয় না।
তিনি মনে করেন না যে, বিদেশিরা কোনো কিছুকে ভালো বললেই, তা ভালো হবে, না হলে ভুল হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা বিদেশিদের কাছ থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে দেশ চালাতে চাই না।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ ছাড়া বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও আলোচনা হয়।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
আজরা জেয়াকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন করা।’
জেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের আগে মিয়ানমারে অনুকূল পরিবেশ তৈরি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি রোহিঙ্গাদের উন্নত জীবিকা নিশ্চিত করতে তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুরু করা উচিৎ, অন্যথায় রোহিঙ্গারা হত্যা, আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান ও বাণিজ্যসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় এই অঞ্চলটি নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা এখানে দীর্ঘদিন অবস্থান করায় হতাশ হয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে এবং এখানে তারা কোনো ভবিষ্যৎ দেখছে না।
শেখ হাসিনা গাম্বিয়ার দায়ের করা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) দায়ের করা মামলায় আন্তর্জাতিক সমর্থন কামনা করেন।
আজরা জেয়া প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য ১১৬ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এদিকে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জাতিসংঘ মহাসচিবের গণহত্যা প্রতিরোধবিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা ও আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল অ্যালিস ওয়াইরিমু এনদেরিতু।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যাকে গণহত্যা (জেনোসাইড) হিসেবে স্বীকৃতি দিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি মিয়ানমারে গণহত্যার বিচার কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে জাতিসংঘের সহযোগিতা কামনা করেন।
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
কমতে শুরু করেছে কুড়িগ্রামের নদীর পানি, ভাঙন আতঙ্কে মানুষ
দিনাজপুরে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় নিহত ২