May 19, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, July 31st, 2023, 8:18 pm

সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এডিস রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না

সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এডিস রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। ঢাকাসহ সারাদেশে এডিস রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। এডিস রোগ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন জাতীয় পরিকল্পনা। আর মশা নিধন করতে পারলেই ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ কমে আসবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোশতাক হোসেন ইউএনবিকে বলেন, সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এডিস রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। ঢাকাসহ সারাদেশে মশা নিধন করতে হলে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের আন্তঃমন্ত্রণালয় টাস্কফোর্সের একটি নির্দেশনা আছে। অনেকগুলো কাজ ব্যক্তিগতভাবে করা যায়, আবার অনেকগুলো ব্যক্তিগতভাবে করা যায় না। আপনার ফ্ল্যাট পরিচ্ছন্ন করতে গেলে সিটি করপোরেশনের অভিজ্ঞ কর্মী, ফ্ল্যাট মালিক সমিতির স্বেচ্ছাসেবক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সমন্বয় লাগবে। আর মশা নিধন করতে পারলেই ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ কমে আসবে। মশা নিধনে সমন্বিত একটা চেষ্টা না থাকলে শুধু প্রচার করলে হবে না।

তিনি আরও বলেন, শুধু জরিমানা করে জনস্বাস্থ্যের সমস্যার সমাধান হবে না। সিটি করপোরেশনের কর্মীরা এলে জনগণ দরজাই খুলবে না,ঢুকতে দেবে না। ঢুকলেই জরিমানা করবেন। একটি হটলাইন দিয়ে দিয়েছেন মশক আছে কি না জানানোর জন্য। কে ফোন দিয়ে জরিমানা ডেকে নিয়ে আসবে। এসে লার্ভা পাবেন আর জরিমানা করবেন। সাধারণ বিষয়ে জরিমানা হতে পারে, কিন্তু জনস্বাস্থ্যের বিষয়ে জরিমানা দিয়ে জনগণকে দূরে সরিয়ে দিয়েন না। কমিউনিটি সম্পৃক্ততার যেই কাঠামো স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশিকায় দেওয়া আছে সেটা অনুসরণ করুন।

ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, সিটি করপোরেশনের প্রয়োজনের তুলনায় কিচ্ছু নেই। পুরো শহরে মশক নিয়ন্ত্রণে ঢাকায় প্রতি ওয়ার্ডে ১১ জন শ্রমিক কাজ করছেন। অথচ ঢাকা শহরের একটি ওয়ার্ডে লাখের বেশি লোক থাকে। এখানে স্থানীয় সরকার বিভাগে যেই নির্দেশিকা তাতে বলা আছে, প্রয়োজনে ১০টি বা তার বেশি ভাগ করে গলি-মহল্লাসহ ডেঙ্গু প্রতিরোধ কমিটি করতে হবে। সেখানে ১১ জন কর্মী নয়, সঙ্গে অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী লাগবে। সেই স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার ইউএনবিকে বলেন, দেশের মানুষকে রক্ষা করার জন্য একটি জাতীয় পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। জাতীয় পরিকল্পনার মাধ্যমে আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশে এডিস রোগ নিয়ন্ত্রণে কী কী করা যায় সেটি আলোচনা করে, বিশ্লেষণ করে সব স্টেকহোল্ডারকে সঙ্গে নিয়ে একটি জাতীয় পরিকল্পনা করতে হবে। প্রয়োজন হলে ইনস্টিটিউট অব ভেক্টর কন্ট্রোল নামে একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আগামী দু’মাস (আগস্ট ও সেপ্টেম্বর) আমাদের জন্য বেশ শঙ্কার। এবার মৃত্যু এবং ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বাংলাদেশের ইতিহাস ছাড়িয়ে যাবে। আগামী দুই মাস (আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর) সাত থেকে আট গুণ বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হতে পারে। সেজন্য আরও বেশি সতর্ক হতে হবে আমাদের।

তিনি বলেন, মশা জন্মানোর এই তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে যারা মশার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে আছেন তারা টার্গেট করে মশার নিধন করতে হবে। এডিস মশা যেখানে হয় সেখানে টার্গেট করে আমাদের তা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা করতে হবে। যেখানে হয়তো আমরা পারছি না, কেন পারছি না সেটা বের করতে হবে।

তিনি বলেন, এতদিন আমরা মশার জন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ডেঙ্গুর কথা বলছি। এখন আমরা দেখছি সারাদেশে মশা ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকাসহ উপজেলাতে ডেঙ্গু ছড়িয়ে গেছে। কেউ জানে না কেন উপজেলাতে ডেঙ্গু হচ্ছে। সে গবেষণাটা কে করবে, সে গবেষণার ফাইন্ডিং কে দেবে; সেটি রাষ্ট্রকে ভাবতে হবে। আমাদের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাটাকে আরও জোরদার করতে হবে।

কবিরুল বাশার বলেন, আগে ঢাকা শহরের ৪০ ভাগ এডিস মশা হতো নির্মাণাধীন ভবন থেকে। সিটি করপোরেশনের অভিযানে সেটি এখন ১৯ ভাগে নেমে এসেছে। কিন্তু এবার গবেষণায় আমরা ৪৩ ভাগ মশা পেয়েছি বহুতল মাল্টিপারপাস ভবনে। আমরা দেখেছি, মাল্টিপারপাস ভবনের যেখানে গাড়ি ধোয়া হয়, সেখানে সিটি করপোরেশনের লোকজন ও বাসিন্দারা যায় না। ফলে সেখানে পানি জমে এডিসের লার্ভা জন্মাচ্ছে। এ ক্রিমিনালের (মশা) জন্য বৃষ্টির কোনো প্রয়োজন নেই। শীত,বর্ষা সবসময় গাড়ি ধোয়ার জন্য পানি ব্যবহার হচ্ছে,আর এতে এডিস মশা জন্মাচ্ছে।

তিনি বলেন, আরেকটি শঙ্কার কথা হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীব্যাপী অনেক দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ ছড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ তার বাইরে নয়। এ রোগ ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। এটিকে মোকাবিলা করতে হবে এবং মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক ডা. মো. শাহাদাত হোসেন ইউএনবিকে জানান, দেশে জুন মাসে সর্বমোট ডেঙ্গু রোগী ছিল ৫ হাজার ৫৬ জন, সেই তুলনায় জুলাই মাসের আজকের দিন পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩৮ হাজার ৪২৯ জন। অর্থাৎ জুলাই মাসে জুনের তুলনায় সাত গুণ বেশি রোগী বেড়েছে।

তিনি বলেন, এই অবস্থায় ডেঙ্গু সংক্রমণের এই ক্রমবর্ধমান লাগাম টেনে ধরতে সিটি করপোরেশনের মশা নিধন কর্মসূচি আরও জোরদার করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

পরিচালক আরও বলেন, বর্তমানে রাজধানীর অনেকগুলো হাসপাতালেই ডেঙ্গু রোগীর শয্যা পূর্ণ হয়ে গিয়েছে, আর কিছু হাসপাতালে খালি আছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যাতে ডেঙ্গু রোগীরা হাসপাতালে এসে চিকিৎসা সেবা নিতে পারে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মানুষকে সচেতন করার জন্য নানা ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

—-ইউএনবি