April 24, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, November 18th, 2022, 8:39 pm

সমাবেশের আগেরদিনই কানায় কানায় পূর্ণ সিলেট আলীয়ার মাঠ

জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :

সিলেটে ধর্মঘট ঘোষণার আগের দিনই বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা। বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও সিলেটে অনুষ্ঠিতব্য বিএনপি বিভাগীয় গণসমাবেশে আগেরদিনই (শুক্রবার) যোগ দিয়েছেন হাজার হাজার নেতাকর্মী। তাদের উপস্থিতিতে সমাবেশস্থল সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠেছে। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হচ্ছে সমাবেশস্থল ও আশপাশের এলাকা। সরকার বিরোধী স্লোগান দিচ্ছেন সমাবেশে আসা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরা।

শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার মাঠ ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

এসময় দেখা যায়- বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নেতাকর্মীরা অনেক ভোগান্তি করে সমাবেশে এলেও তাদের চোখেমুখে আনন্দ উল্লাস লক্ষ্য করা গেছে। তারা হাসিমুখে ‘বিএনপি, বিএনপি, খালেদা, খালেদা, জিয়া, জিয়া’ স্লোগান দিতে দেখা গেছে। তাদের স্লোগানে আশপাশের এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠছে।

এদিকে- বিপুল সংখ্যক বিএনপি নেতাকর্মীদের উপস্থিতির সুযোগে ‘মোবাইল চুরির হিড়িক পড়েছে’। শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ৬ টা পর্যন্ত অন্তত ২০টি মোবাইল খোয়া গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে মোবাইল ও মানিব্যাগ চুরির কোনো তথ্য নেই বলে শুক্রবার সন্ধ্যায় সিলেট মহানগর পুলিশের ডিসি আজবাহার আলী শেখ জানিয়েছেন। তিনি জানান- ‘মোবাইল বা মানিব্যাগ চুরির তথ্য আমাদের কাছে নেই। কেউ অভিযোগ করলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

এরআগে শুক্রবার বিকেল থেকে বিপুল সংখ্যক বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্থান থেকে সমাবেশস্থলে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসছেন। তাদের কণ্ঠে সরকার বিরোধী নানা স্লোগান দিতে দেখা গেছে। সময় যতো যাচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রসঙ্গত- বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সংসদ বিলুপ্ত ও সরকারের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে বিভিন্ন বিভাগে বিএনপি বিভাগীয় সমাবেশ করছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি বিভাগ ও ফরিদপুর জেলায় গণসমাবেশ করেছে দলটি। তারই ন্যায় সিলেটেও শনিবার (১৯ নভেম্বর) গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে দলটি।

এদিন সিলেট সরকারি আলিয়া মাঠে অনুষ্ঠিতব্য গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমঙ্গীর।

শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- মাঠের এক পাশে তৈরি করা হয়েছে মঞ্চ। মাঠে মাইক টানানো হয়েছে এবং মাঠের দুই পাশে দুটি ‘বড় পর্দা’ লাগানো হয়েছে। মাঠে বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মী উপস্থিত হয়েছেন। বেশকিছু নেতাকর্মী একেকজন একেক দায়িত্ব পালন করছেন। প্রত্যেকেই আছেন ফুরফুরে মেজাজে।

মঞ্চের তিন পাশে নির্মাণ করা হয়েছে বিভাগের বিভিন্ন এলাকার নেতাদের উদ্যোগে ক্যাম্প। ক্যাম্পে ক্যাম্পে চলছে রান্না ও খাবারের আয়োজন। ক্যাম্পগুলোতে মওজুদ করে রাখা হয়েছে চালের বস্তা, তেল ও রান্নার সামগ্রী। কয়েকজন নারীকে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মরিচ কাটতে দেখা যায়। প্রতিটি ক্যাম্পেই বড় বড় ডেকচিতে হচ্ছে রান্নাবান্না।

জুম্মার নামাজের পর প্রতিটি ক্যাম্পে খাবার পরিবেশন করা হয়। প্রত্যেক ক্যাম্পেই নিজেদের মানুষ ছাড়া অন্যান্য নেতাকর্মীদেরও খাবার দেওয়া হয়।

এছাড়াও মাঠের প্রবেশমুখে ‘ডা. জোবায়দা রহমান ফ্রি ফুড ক্যাম্প’। এ ক্যাম্প থেকে সমাবেশস্থলে আসা নেতাকর্মীদের পানি ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

এদিকে শুক্রবার আসরের নামাজের পর থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে আলিয়া মাঠে জড়ো হতে থাকেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

বিকেলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মোক্তাদির, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেট জেলা যুবদলের সাবেক আহবায়ক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মিফতা সিদ্দিকীর সর্মথনে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদল, মৌলভীবাজার জেলা যুবদল, সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রদল, যুবদলের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন।

এছাড়াও ছাতক-দোয়ারাবাজার আসনের সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মিজানের নেতৃত্বে একদল নেতাকর্মী সমাবেশে জড়ো হয়েছেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, সব বাধা উপেক্ষা করে জনসভা রূপ নেবে জনসমুদ্রে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির বলেন, বিএনপির সমাবেশে জনসমাগম ঠেকাতে ধর্মঘট দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো ষড়যন্ত্রই সমাবেশে উপস্থিতি কমাতে পারবে না। যত বাধাই আসুক, সমাবেশ সফল হবে। সিলেটের সমাবেশ ইতিহাস সৃষ্টি করবে।

এদিকে বিএনপির সমাবেশকে সামনে রেখে সিলেট বিভাগজুড়ে ধর্মঘট ডাকায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন পরিবহন নেতারা। তবে ধর্মঘটের সাথে রাজনৈতিক যোগসূত্র নেই বলে দাবি পরিবহন নেতাদের।

সিলেট জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি ও সাবেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবুল কালাম জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা এ ধর্মঘট ডেকেছেন। ধর্মঘটের সাথে বিএনপির সমাবেশের কোনো সম্পর্ক নেই।

এদিকে, বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা ও সংঘর্ষ না ঘটে সেজন্য সিলেট নগরীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। পুরো শহরজুড়েই চলছে পুলিশের টহল। নগরীর বিভিন্ন এলাকা ও বিভিন্ন মোড়ে সিলেট মহানগর পুলিশের বিশেষ মহড়া দেখা গেছে। অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধে এ টহল বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার নিশারুল আরিফ জানিয়েছেন, বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে সিলেটে যেন অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে পুলিশ বরাবরের মতোই পদক্ষেপ নেবে।