April 20, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, January 2nd, 2022, 8:58 pm

সমীক্ষাতেই ব্যয় শত কোটি টাকা, বুলেট ট্রেন বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয়

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে বাংলাদেশে একের পর এক নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প। এরই মধ্যে একটি হলো দ্রুত গতির ট্রেন বা বুলেট ট্রেন। ১৯৬৪ সালে জাপানে উচ্চ-গতির রেল চলাচল শুরু হয়ে এবং পরে এটি ব্যাপকভাবে বুলেট ট্রেন হিসাবে পরিচিতি পায়। দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশের মানুষকেও নিজেদের বুলেট ট্রেনের স্বপ্ন দেখায় সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রুলে বুলেট ট্রেন চালু করার পরিকল্পনা করে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে বর্তমানে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার গতিতে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে। মালবাহী কনটেইনার ট্রেন চলে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪০ কিলোমিটার গতিতে। এমন পরিস্থিতিতে যাত্রীদের কর্মঘণ্টা অপচয় ও জরুরি আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বিলম্ব হয়। জানা গেছে, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের দূরত্ব ৩২১ কিলোমিটার। যাতায়াতে সময় লাগে ৬-৭ ঘণ্টা। দীর্ঘ এই রুটে যাতায়াত আরও সহজ করতে দ্রুতগতির ‘বুলেট ট্রেন’ চালুর উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে। ইতোমধ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিশদ নকশা প্রণয়ন প্রকল্পের কাজও শেষ হয়েছে। একই রুটে ডাবল লাইনের আরেকটি প্রকল্পের সমীক্ষাও চলমান। এতে মিলবে বাণিজ্যিক সুবিধাও। চট্টগ্রাম পর্যন্ত সময় লাগবে পৌনে দুই ঘণ্টা। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সম্ভব বললেও বুলেট ট্রেন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের উদ্যোগ নিয়ে দেখা দিয়েছে কিছুটা সংশয়। রেলওয়ের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রস্তাবিত নকশা অনুযায়ী এ রেলপথের দৈর্ঘ্য হবে ২২৪ দশমিক ৬ কিলোমিটার, যার প্রায় ৯৬ শতাংশ এলিভেটেড। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩০০ কিলোমিটার গতিতে ছুটবে ট্রেন। এক ঘণ্টায় ঢাকা থেকে পৌঁছানো যাবে চট্টগ্রাম। বুলেট ট্রেন চালুর এ প্রকল্পে ব্যয় হবে প্রায় ৯৩ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি রূপকথার মতো মনে হলেও তা বাস্তবায়ন সম্ভব মনে করছে কর্তৃপক্ষ। তবে ব্যয়বহুল এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকার উদ্যোগ নেবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বুলেট ট্রেনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও নকশা প্রণয়নেই প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে সরকারের উচ্চমহলে চলছে আলোচনা। বড় এ প্রকল্পের জন্য অর্থের উৎস খোঁজা হচ্ছে। এছাড়া একই রুটে আলাদা আরেকটি ডাবল রেললাইন স্থাপনে সমীক্ষা চলছে। এটির খরচ তুলনামূলক কিছুটা কম হবে। ওই লাইনে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলতে পারবে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাতায়াত করা যাবে পৌনে দুই ঘণ্টায়। এই লাইনে যাত্রীর পাশাপাশি পণ্য পরিবহনও করা যাবে। ডুয়েল গেজ বা ডাবল লাইনের সমীক্ষা শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা বলেন, বুলেট ট্রেন প্রকল্প অনেক ব্যয়বহুল। এটি শুধু যাত্রী পরিবহনে সুবিধা পাওয়া যাবে। আবার একই পথে যদি ডাবল রেললাইন করা যায়, তা হলে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করা যাবে। সময় বেশি লাগবে সামান্য কিছু। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী ও দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। দেশের আমদানি-রপ্তানির ৮০ শতাংশ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে পরিচালিত হয়। এ ছাড়া এখন চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরী, পতেঙ্গায় বে-টার্মিনাল, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনের কাজ চলছে। এসব এলাকায় পণ্যবাহী ট্রেনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বুলেট ট্রেনের সমীক্ষা ও নকশা প্রণয়নে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করাটা অপচয় কি নাÑ এ প্রসঙ্গে সেলিম রেজা বলেন, যে কোনো বড় প্রকল্প নেওয়ার আগে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিশদ নকশা প্রণয়নে সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। সঠিকভাবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা না হলে, বড় প্রকল্প নিয়ে মুখ থুবড়ে পড়তে হবে। এতে দেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আরও বেশি। এখন বুলেট ট্রেন বা ডাবল রেললাইন যে কোনো একটি বাস্তবায়ন হলেই ঢাকা-চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থার চিত্র পাল্টে যাবে। চট্টগ্রাম তথা কক্সবাজারে পর্যটকের চাহিদাও বাড়বে। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম ভায়া কুমিল্লা দ্রুতগতির রেলপথ নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিশদ নকশা প্রণয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ২০২১ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিশদ নকশা অনুযায়ী, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ৯৬ শতাংশ এলিভেটেড হবে। এক ঘণ্টায় ২২৪ কিলোমিটার পথ যাতায়াত করা যাবে। দিনে প্রায় এক লাখ যাত্রী পরিবহন করতে পারবে বুলেট ট্রেন। এই প্রকল্পে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী ও চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে ইউরোপের আদলে পাঁচটি স্টেশন নির্মাণ হবে। প্রতিটি স্টেশন ঘিরেই থাকবে এক-একটি মাল্টি মডেল ট্রানজিট হাব অর্থাৎ বুলেট ট্রেন ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা (দাউদকান্দি), লাকসাম, ফেনী হয়ে চট্টগ্রামে যাবে। এখন বিদ্যমান রেললাইন কমলাপুর থেকে গাজীপুরের টঙ্গী, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জের ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী হয়ে চট্টগ্রামে ট্রেন চলে। গত ২৯ নভেম্বর ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম ভায়া কুমিল্লা দ্রুতগতির রেলপথ নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিশদ নকশা প্রণয়ন’ প্রকল্পের সারসংক্ষেপ রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠায় বাংলাদেশ রেলওয়ে। এতে বলা হয়, বুলেট ট্রেন প্রকল্পটি অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব। কৃষিজমি ব্যবহারের পরিমাণ খুবই কম। রেলপথটি স্ট্যান্ডার্ড গেজ, ইলেকট্রিক ট্র্যাকশনসহ ডাবল লাইনবিশিষ্ট হবে। ট্র্যাক হবে ব্যালাস্টলেস (পাথরবিহীন)। বর্তমানে দেশের যে রেল ব্যবস্থা প্রচলিত আছে, ডিজেলচালিত ইঞ্জিনের রেল। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এখন এমন রেল ব্যবস্থা বিদ্যমান নেই। তারা ইলেকট্রিক রেল ব্যবস্থায় চলে গেছে। ফলে বুলেট ট্রেন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে, তা মাইলফলক হিসেবেই বিবেচিত হবে। প্রকল্পের পরিচালক রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) কামরুল হাসান বলেন, আমরা যথাসময়ে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিশদ নকশা প্রণয়ন করেছি। গত অক্টোবরে তা প্রতিবেদন আকারে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বাকি কাজ বা সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়।