April 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, October 30th, 2021, 1:26 pm

সম্পদের হিসাব নিতে সরকারের কঠোর অবস্থানে আতঙ্কে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চলতি বছরের মধ্যেই সরকারি চাকরিজীবী নিজেরসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সম্পদের হিসাব দিতে হবে। সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা অনুযায়ী প্রতি ৫ বছর অন্তর সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদের হিসাব দেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু ওই বিষয়ে সরকারের তদারকি না থাকায় অধিকাংশ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ম মানছে না। এমন অবস্থায় সরকারি চাকুরেদের (কর্মকর্তা-কর্মচারী) সম্পদের হিসাব নিতে কঠোর অবস্থান নেয় সরকার। এ ব্যাপারে কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হবে না। এবার যারা সম্পদের হিসাব দেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাদের নামের তালিকা সংরক্ষণ করবে। তারা আগামী ৫ বছর পর আবারো সম্পদের হিসাব দেবে। আগামী বছর যারা সম্পদের হিসাব দেবে তাদেরও তালিকা করা হবে। যথারীতি তারাও ৫ বছর পর আবার সম্পদের হিসাব দেবেন। প্রতি বছরই এমন ধরনের তালিকা সংরক্ষণ করবে সরকার। মূলত সব সরকারি চাকুরে ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাবের আওতায় আনা হবে। সেজন্য বিদ্যমান ‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯’-এর প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা হচ্ছে। স্পষ্ট করা হচ্ছে সম্পদের হিসাবদান পদ্ধতি। সরকারের এমন অবস্থানে দুর্নীতিবাজ সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ইতিমধ্যে সরকারের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবকে সম্পদের হিসাব দিতে চিঠি পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়- ‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯’-এর বিধি ১১, ১২ ও ১৩-তে সরকারি কর্মচারীদের স্থাবর সম্পত্তি অর্জন, বিক্রয় ও সম্পদ বিবরণী দাখিলের বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সুশাসন নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রী উল্লিখিত বিধি কার্যকরভাবে কর্মকর্তাদের অনুসরণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে জোর নির্দেশনা দিয়েছেন। এ অবস্থায় সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর আওতাভুক্তদের তাদের নিয়ন্ত্রণকারী প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়/দফতর/অধীন সংস্থায় কর্মরত সব সরকারি কর্মকর্তার সম্পদ বিবরণী দাখিল, ওই সম্পদ বিবরণীর ডাটাবেজ তৈরি ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে স্থাবর সম্পত্তি অর্জন ও বিক্রির অনুমতি গ্রহণের বিষয়ে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯-এর ১১, ১২ ও ১৩ বিধি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রতিপালনের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলা হয়। তারপরই মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো নড়েচড়ে বসে। তারাও যথারীতি তাদের অধীন দফতর-সংস্থাকে সম্পদের হিসাব দিতে চিঠি দেয়।

সূত্র জানায়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ নিজ দফতর ও সংস্থাগুলোকে সম্পদের হিসাব দিতে চিঠি পাঠিয়েছে। তাছাড়া নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়সহ আরো কয়েকটি মন্ত্রণালয় তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিস দিয়েছে। তাতে বড় ধরনের চাপে পড়েছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। কারণ বিদ্যমান বিধিমালা কার্যকর হলে শুধু সরকারি চাকুরে নয়, তাদের পরিবারের সদস্যদেরও সম্পদের হিসাব দিতে হবে। বিধিমালার বিধি-২ (সংজ্ঞা) অনুযায়ী ‘সরকারি কর্মচারী অর্থ ওই ব্যক্তি বা যার ক্ষেত্রে এ বিধিমালা প্রযোজ্য এবং “সরকারি কর্মচারীর পরিবারের সদস্য”-এর অন্তর্ভুক্ত হবেন।’ সংজ্ঞায় সরকারি কর্মচারীর পরিবারের সদস্য বলতে ‘সরকারি কর্মচারীর সঙ্গে বসবাস করেন অথবা না করেন, তার স্ত্রী/স্বামী, সন্তান বা সৎ সন্তানগণ এবং সরকারি কর্মচারীর সঙ্গে বসবাসরত এবং তার ওপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল তার নিজের অথবা স্ত্রীর/স্বামীর অন্যান্য আত্মীয়স্বজন’কে বোঝাবে। ফলে শুধু চাকরিজীবীর সম্পদের হিসাব দিলেই হবে না, দিতে হবে পরিবারের অন্য সদস্যদেরও সম্পদের হিসাব।

সূত্র আরো জানায়, অধিকাংশ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজেদের নামে সম্পদ না করে পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনের নামে করে থাকে। কেউ কেউ নিজের ভাই-বোন বাদ দিয়ে শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দের নামে সম্পদ করে। ওসব হিসাব নেয়া শুরু হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। ওই কারণেই গত ৪০ বছরেও এ বিধিমালার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা হয়নি।

এদিকে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ইতিপূর্বে একাধিক অনুষ্ঠানে সম্পদের হিসাবে ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৫ বছর পর পর সম্পদের বিবরণী দাখিলের নিয়ম আছে। এতো দিন সেভাবে হয়তো মানা হয়নি। কিন্তু এ বিষয়ে আর ছাড় দেয়া হবে না। স্বচ্ছতা-জবাবদিহির জন্য সবার সম্পদের হিসাব নেয়া হবে।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিধি) আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন জানান, ৪০ বছর আগের বিধিমালা যুগোপযোগী করার একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ নিয়ে একটি কর্মশালাও হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে কোথায় কোনো গ্যাপ আছে কিনা খোঁজা হচ্ছে। কিছু সুপারিশ পাওয়া গেছে। আরো হয়তো সময় লাগবে।

এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম জানান, বিদ্যমান বিধি অনুযায়ী ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পদের হিসাব জমা দেয়ার ডেডলাইন। তার পরই সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেয়া হবে। চাকরিতে প্রবেশের সময় সম্পদের যে হিসাব দিয়েছে তা ভিত্তি ধরে যাচাই-বাছাই করা হবে। এবার যারা হিসাব দেবে তাদের তালিকা করা হবে। নিয়ম অনুযায়ী তারা ৫ বছর পর আবার হিসাব জমা দেবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে সবাইকে হিসাবের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এ বিষয়ে কাজ চলছে।