April 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, June 28th, 2022, 10:01 pm

সরকারবিরোধীতা বন্ধে এদেশে কর্মরত এনজিও’র ওপর নজরদারির উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

এদেশে কর্মরত কিছু বেসরকারি সাহায্য সংস্থা (এনজিও) বিদেশ থেকে অর্থ এনে সরকারবিরোধী কাজে ব্যবহার করছে। গরিবকে সহায়তার নামে অর্থ এনে ওসব প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যয় করছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত এনজিওগুলোকে কঠোর নজরদারির আওতায় আনা হচ্ছে। সম্প্রতি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক সভায় এ বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই সভায় বলা হয়, কয়েকটি এনজিও বিদেশ থেকে অর্থ এনে তা দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। ও কারণে এদেশে কর্মরত এনজিওগুলো বিদেশি অর্থ এনে কোথায়, কীভাবে ব্যয় করছে তার ওপর কঠোর নজরদারি করতে হবে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে তা বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও বিষয়টি নজরদারি করবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশে বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রায় আড়াই হাজার এনজিও রয়েছে। তার মধ্যে ২৫০টি বিদেশি এবং ২ হাজার ২৪৪টি দেশি এনজিও রয়েছে। যথাসময়ে নিবন্ধন নবায়ন না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে গত এক দশকে এনজিও ব্যুরো ৪৬৪টির নিবন্ধন বাতিল করেছে। তার মধ্যে আন্তর্জাতিক সহায়তাপুষ্ট সংস্থাও রয়েছে। আবার নতুন নতুন এনজিও নিবন্ধনও পেয়েছে। যদিও কারো কারোর অভিযোগ, এনজিওর কার্যক্রমে নজরদারির মাধ্যমে সরকার মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে।
সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি এনজিও বিদেশ থেকে অর্থ এনে তা দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় জনকল্যাণের নামে সরকারবিরোধী কার্যক্রম চালাচ্ছে। তারা দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে আন্তর্জাতিক মহলে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চাইছে। অভিযোগ রয়েছে, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদে ওসব অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে বলে। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকেই একটি এনজিও সরকারের বিরুদ্ধে তৎপর হয়ে ওঠে। ওই এনজিওটি বিরোধী দলের সঙ্গে আঁতাত করে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় জড়িত হয় বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। তাছাড়া আরো তিনটি এনজিও সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদে মদদ দিতে থাকে। এমনকি ছোট ছোট এনজিও মানুষকে সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হতে উৎসাহিত করে। তারপর থেকেই এনজিওগুলোর ওপর নজরদারি অব্যাহত রেখেছে সরকার।
সূত্র আরো জানায়, অতীতে দেশকে অস্থিতিশীল করতে কোনো কোনো এনজিও বিভিন্ন কল-কারখানায় শ্রমিকদের উস্কানি দিয়ে অসন্তোষ ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করেছে। ওই সব এনজিও দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাতে পারে আশঙ্কা করে সরকার তাদের কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তারই অংশ হিসেবে তিনটি এনজিওকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে ত্রাণকাজ চালাতে নিষেধ করেছে সরকার।
এদিকে সরকারের এনজিওর ওপর নজরদারির সিদ্ধান্তে এনজিওগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এনজিও সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকার সুকৌশলে দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইছে। ওই কারণেই গোয়েন্দা তদারকি শুরু করেছে। অবশ্যই সরকারকে মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করার অধিকার দিতে হবে এবং সরকারবিরোধী কার্যক্রম করলে তাকে শান্তির আওতায় আনতে কারও আপত্তি নেই। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কার্যক্রম সম্পর্কে সরকারকে জানানো উচিত। সেবাধর্মী কার্যক্রম কিংবা কোনো সভা-সেমিনার করতে হলে অবশ্যই আগে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন ও জুডিশিয়াল কর্মকর্তারাও সেখানে থাকবেন।
অন্যদিকে এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, যেসব এনজিও সরকারকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করছে, সেগুলোর ব্যাপারে গোয়েন্দারা খোঁজখবর রাখছে। তবে কিছু কিছু এনজিও গরিবদের সহায়তার নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে মদদ দিতে চাইছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিবিড়ভাবে তাদের পর্যবেক্ষণ করছে। কোনো এনজিওর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এনজিওগুলো যেন উন্নয়ন কর্মকান্ডের আড়ালে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত না হতে পারে গোয়েন্দা সংস্থা তা নজরদারি করবে।