November 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, July 18th, 2022, 9:31 pm

সরকারি টাকায় বাগানের টিলা কেটে জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণ

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার :

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় লুয়াইউনি হলিছড়া চা-বাগান কর্তৃপক্ষ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই চা বাগানের টিলা কেটে জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় বাগানের শ্রমিকরা বিক্ষুব্দ হয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। এতে দেখা চরম উত্তেজনা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে প্রশাসনের লোকজন বাগানে যান।

জানা গেছে, হা-মীম গ্রুপের মালিকানাধীন লুয়াইউনি হলিছড়া চা-বাগানটি উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নে পড়েছে। সম্প্রতি বাগানের হলিছড়া ফাঁড়ির ১৭ নং সেকশন এলাকায় জালালাবাদ মৌজার ২৫০ নং দাগ থেকে শুরু হয়ে মর্তুজ মিয়ার বাড়ির পাশ দিয়ে (হাড়িয়াটিলার পূর্বপাশ কুলাউড়া-ব্রাহ্মণবাজার আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে বাগানের ভিতর দিয়ে এবং সীমানা ঘেষে) মৌলভীবাজার-২ কুলাউড়া আসনের সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ এর বরাদ্দকৃত কাবিখা (৩৫ টন চাল) প্রায় ১১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি নতুন রাস্তা নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন হয়। এরপর বাগানের ভেতর জালালাবাদ ২৫০ নং দাগ থেকে কাজ শুরু করেন প্রকল্প সভাপতি ও ইউপি সদস্য আতাউর রহমান আপ্তাবসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট লোকজন। পরিবেশ আইনের কোন তোয়াক্কা না করেই খননযন্ত্র (এস্কোভেটর) দিয়ে বেশ কয়েকটি উঁচু-নিচু টিলা কেটে মাটি ফেলে প্রায় ৩৫০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও প্রায় ১০ ফুট প্রস্থের নতুন একটি রাস্তা মাটি ভরাট ও ইটসলিংয়ের কাজ চলছে। এসময় বাগান কর্তৃপক্ষ তাদের অনুমতি না নিয়ে বাগানের নিরাপত্তা বিঘিœত ও বাগানের মূল্যবান গাছ চুরি হওয়ার আশঙ্কায় কাজ বন্ধ রাখতে বাঁধা দিলেও প্রকল্পের লোকজন জোরপূর্বক টিলা কেটে রাস্তার কাজ চালু রাখেন। এতে বিক্ষুব্দ হয়ে বাগানের শ্রমিকরা বাগান এলাকার ভেতর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়ে বাগানের ভেতর একত্রিত হয়। এসময় দেখা দেয় চরম উত্তেজনা। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান খোন্দকার ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: আব্দুছ ছালেক ঘটনাস্থলে ছুঁটে যান। এসময় বাগানের ব্যবস্থাপক মো: মাবুদ আলী, ব্রাহ্মণবাজার ইউপি চেয়ারম্যান মো: মমদুদ হোসেনসহ বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির লোকজনদের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লুয়াইউনি বাগানের হলিছড়া ফাঁড়ির ১৭ নং সেকশন এলাকায় ৪-৫ টি উচুঁ-নিচু টিলা ও পাহাড়ী এলাকায় ১০-১২ টি টিলা কেটে প্রায় ৩৫০০ ফুট রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে। প্রকল্পের শেষ প্রান্তে হাড়িয়াটিলার পূর্বপাশ কুলাউড়া-ব্রাহ্মণবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে প্রায় ৩০-৩৫ জন শ্রমিক এস্কোভেটর দিয়ে টিলা কেটে কাজ করছেন। ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও প্রকল্প সভাপতি আতাউর রহমান আপ্তাবসহ তার লোকজন দিয়ে প্রায় এক মাস আগে থেকে টিলা কেটে রাস্তা তৈরীর কাজ শুরু করেন। বর্ণিত রাস্তা নির্মাণে বাগানের ভেতরে দৈর্ঘ্যে প্রায় ৬০০ ফুট, প্রস্থে প্রায় ১০ ফুট টিলা কাটা হয়েছে, যা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর ধারা ৬ (খ) লঙ্ঘন এবং দন্ডনীয় অপরাধ।’

বাগানের লোকজন আরও জানান, ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আতাউর রহমান আপ্তাব তাঁর লোকজন জোরপূর্বক আমাদের বাগানের ভেতর দিয়ে টিলা কেটে রাস্তা নির্মাণ করছেন। টিলা কাটা আইনি অপরাধ এমনটি বলার পরও আতাউর রহমান কোন কর্ণপাত না করেই দিব্যি কাজ করিয়ে যাচ্ছেন। এতে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি। যেকোন সময় বাগানের ভেতর থেকে গাছ, মাটিসহ অনেক কিছু চুরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

প্রকল্প সভাপতি ও ইউপি সদস্য আতাউর রহমান আপ্তাব মুঠোফোনে বলেন, রাস্তার কাজ প্রায় অর্ধেক শেষ হওয়ার পথে। বাগানের সীমানা এলাকায় ইটসলিংয়ের কাজ বাকি রয়েছে। এমপি সাহেবের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা কাজ করাচ্ছি। বাগানের ভেতরে কাজের কোন অনুমোদন নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমপি সাহেব অনুমতি নিয়েছেন কিনা সেটা আমি জানিনা। তিনি ভালো বলতে পারবেন।

লুয়াইউনি হলিছড়া চা-বাগানের ব্যবস্থাপক মো: মাবুদ আলী বলেন, বাগানের ভেতর রাস্তা নির্মাণ করতে হলে অবশ্যই জেলা প্রশাসক ও বাগান মালিক পক্ষের অনুমতির প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই রাস্তা নির্মাণে কোন অনুমতি না নিয়ে তারা জোরপূর্বক কাজ শুরু করেন। বাগানের শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে রাস্তার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সোমবার বিকেলে একটি সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো: শিমুল আলী বলেন, এমপি মহোদয়ের অফিস থেকে প্রকল্পের প্রস্তাব পেয়ে অনুমোদনের জন্য আমরা জেলা প্রশাসক বরাবরে তালিকা প্রেরণ করি। সেটি অনুমোদন হওয়ার পর প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এখন প্রকল্পের শর্তের বাইরে গিয়ে যদি কাজ করানো হয় তাহলে সেটি প্রকল্প কমিটি দায়ভার নেবে।

মৌলভীবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বদরুল হুদা বলেন, সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ মাহমুদুর রহমান খোন্দকার বলেন, রাস্তা নির্মাণকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার খবর পেয়ে থানার ওসিসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আপাতত কাজ বন্ধ রাখতে বলেছি। বিষয়টি সমাধানে এমপি মহোদয় ও বাগান মালিকপক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। কাজের বিষয়ে আগামী মাসের ৫ তারিখ পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।